দক্ষিণ বাঁকুড়ায় সভা করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী খাতড়ায় একটি মর্গের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এর কয়েক মাসের মধ্যেই সেই মর্গ তৈরির কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। দীর্ঘদিনের একটি দাবি অবশেষে পূরণ হতে চলেছে দেখে তাই বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের মানুষ খুশি।
কয়েক মাস আগে দক্ষিণ বাঁকুড়ার কড়াপাড়ায় ও পরে খাতড়ায় সভা করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী খাতড়া মহকুমা হাসপাতালে মর্গ তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হওয়ার পথে। খাতড়া মহকুমা হাসপাতালে মর্গ তৈরির কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছে জেলা প্রশাসন। এ জন্য অর্থ বরাদ্দও হয়ে গিয়েছে। খাতড়ার মহকুমাশাসক শুভেন্দু বসু বলেন, “খাতড়া হাসপাতালে মর্গ তৈরির প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে। টাকাও বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে। টেন্ডার ডাকাও হয়ে গিয়েছে। আশা করছি, কয়েক মাসের মধ্যেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।” রাজ্য পূর্ত দফতরের বাঁকুড়া ডিভিশনের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শুভঙ্কর মাজি বলেন, “খাতড়া মহকুমা হাসপাতালের মর্গ তৈরির জন্য ৪৯ লক্ষ ৬৫ হাজার ৮৪৮ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা এক বার ‘ই-টেন্ডার’ করেছি। কিন্তু কেউ টেন্ডারে অংশ না নেওয়ায় দ্বিতীয়বার ‘ই-টেন্ডার’ ডাকা হচ্ছে। টেন্ডার হয়ে গেলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।”
খাতড়া, রানিবাঁধ, সারেঙ্গা, রাইপুর, হিড়বাঁধ, তালড্যাংরা, সিমলাপাল, ইঁদপুর ও বারিকুল-- এই ন’টি থানা নিয়ে খাতড়া মহকুমা। খাতড়া হাসপাতালে মর্গ না থাকায় অস্বাভাবিক মত্যুর ঘটনায় দেহগুলির ময়নাতদন্ত করতে ছুটতে হয় জেলা সদরের বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। |
ইঁদপুর ও তালড্যাংরা বাদে বাকি থানাগুলি থেকে বাঁকুড়া শহরের দূরত্ব কমবেশি ৪০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। এর ফলে দেহের ময়নাতদন্ত করাতে মৃতের পরিবার হয়রান হচ্ছেন। পুলিশ কর্মীরাও অসুবিধায় পড়ছেন। তাই খাতড়া হাসপাতালে মর্গ চালু করে ময়নাতদন্তের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন মহল জানিয়ে আসছিল।
সে খবর পৌঁছেছিল মমতার কাছেও। খাতড়ার বাসিন্দা তথা বাঁকুড়া জেলা পরিষদের তৃণমূলের দলনেতা শ্যামল সরকার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেন তাই যে করেন, এই প্রতিশ্রুতি পূরণেই তা ফের প্রমাণিত।” রানিবাঁধের ধীরেন মুর্মু, রাইপুরের প্রমীলা মুর্মুরাও খুশি। তাঁরাও বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কথার যে দাম আছে তা এতদিনে বুঝলাম। কাজে আর কথায় কোনও ফাঁক নেই মমতার।” জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তাও বলেন, “খাতড়ায় মর্গ না থাকায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর দেহ ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে অনেকটা সময় আমাদের নষ্ট হয়। দেহ নিয়ে যেতে দেরি হলে পরের দিন ময়নাতদন্ত করা হত। খাতড়ায় মর্গ চালু হলে এ সমস্যা অনেকটাই কেটে যাবে।”
দক্ষিণ বাঁকুড়ার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে খাতড়ায় ব্লাড ব্যাঙ্কের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। খাতড়া হাসপাতালে একটি ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরিও হয়ে গিয়েছে। প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছিলে, আজ বুধবার বারিকুলের সভা থেকে রিমোটের সাহায্যে এই ব্লাড ব্যাঙ্কের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু শেষ মুর্হূতে তা স্থগিত করা হয়েছে। ড্রাগ কন্টোলের ছাড়পত্র না মেলায় এই ব্লাড ব্যাঙ্ক চালু করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রশাসন তাই এখনই এই ব্লাড ব্যাঙ্ক উদ্বোধন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “ড্রাগ কন্ট্রোলের লাইসেন্স না পাওয়ায় ব্লাড ব্যাঙ্কটি চালু করা যাচ্ছে না। তাই এর অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। পরে এর উদ্বোধন করা হবে।” |