খাতড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক
কাজ হচ্ছে না, ক্ষুব্ধ মমতা
জেলার কাজ বিশেষ ভাল হচ্ছে না বলেই জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার খাতড়ায় মহকুমাশাসকের দফতরে হওয়া বৈঠকে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের এ জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে মৃদু ধমকও শুনতে হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “বাঁকুড়ায় এসে দেখছি, ভাল কাজ হচ্ছে না। এ সব চলবে না!” পাশাপাশি উন্নয়নের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদকে সমন্বয় রেখে কাজ করার নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন সন্ধ্যা পৌনে ৭টা নাগাদ খাতড়া মহকুমাশাসকের দফতরে পৌঁছয় মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়। রাস্তার দু’ধারে ছিল মানুষের ভিড়। প্রশাসন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসক-সহ প্রশাসনের পদস্থ কর্তাদের কাছে জেলার বিশেষ করে জঙ্গলমহলে উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে জানতে চান। মমতা সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই জেলায় বছরে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পের হাল নিয়ে। একমাত্র তালড্যাংরা ব্লক ছাড়া, জেলার আর কোনও ব্লকেই বছরে গড়ে ২০ দিনও কাজ দেওয়া যায়নি। বৈঠকে এই তথ্য জেনে মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসক এবং বিডিও-দের উদ্দেশে বলেন, “নির্বাচনের অজুহাত দিয়ে কাজ বন্ধ রাখার কথা আমি শুনব না। ১০০ দিনের কাজে গতি আরও বাড়াতে হবে।” তাঁর নির্দেশ, এউ প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনে রাস্তাঘাট পরিষ্কার করার কাজ করাতে হবে প্রশাসনকে। গ্রামের ছেলেমেয়েদের দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজও করানো সম্ভব। জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে মমতা জানতে চান, “স্কুলগুলির শৌচাগার সাফসুতরো থাকে কি না। না থাকলে সেখানেও ১০০ দিনের প্রকল্পের মাধ্যমে বেকারদের কাজ দিন।” গ্রামের গরিব মানুষ ওই কাজ করে যে মজুরি পান, তা সময়মতো দেওয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন বিডিও-দের।

এসডিও অফিসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
জেলায় পর্যটনের হাল নিয়ে তিনি যে একেবারেই খুশি নন, বৈঠকে তা-ও স্পষ্ট করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সরাসরি তিনি জেলাশাসক বিজয় ভারতীর কাছে জানতে চান, রোপওয়ে চালু করার কথা ছিল। এখনও হয়নি কেন? মুকুটমণিপুরে কতগুলি কটেজ হয়েছে, তা-ও জানতে চান তিনি। পর্যাপ্ত কটেজ নেই জেনে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, “পর্যটকেরা এলে থাকবে কোথায়?” তালবেড়িয়া ড্যাম এবং সুতানের জঙ্গলের কাছে বারোমাইলে যে-সব পিকনিক স্পট আছে, সেখানে কাজ কতদূর এগিয়েছে, তা-ও মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান।
এর পরেই সদ্য নির্বাচিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীকে এই বিষয়গুলি দেখার নির্দে দেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি তাঁকে বলেন, “সভাধিপতি বড় না ডিএম বড়, সে প্রশ্ন অর্থহীন। আসল কথা উন্নয়ন। উন্নয়ন চালিয়ে যেতে হবে। আমি এটাই প্রত্যাশা করছি।”
বারিকুলের কড়াপাড়ার মাঠে এ বছর ২০ মার্চ এসে কতিনি যে-সব ঘোষণা করেছিলেন, সেগুলির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কেও এ দিন জেলা প্রশাসনের কাছে বিশদে খোঁজখবর নেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে তাঁর নির্দেশ, জঙ্গলমহলে ২ টাকা কেজি দরে যে চাল বিলি হচ্ছে, তা সঠিক ভাবে বণ্টন হচ্ছে কি না, তা দেখতে নজরদারি বাড়াতে হবে। কেউ যেন ওই চাল মেরে দিতে না পারে।
জেলায় ক্ষুদ্রশিল্পের প্রসার না হওয়াতেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছে তাঁর প্রশ্ন, “বিষ্ণুপুরের ওই বালুচরী শাড়ি দেখিয়ে আর কতদিন চলবে? জেলায় অনেক ক্ষুদ্র শিল্প আছে। সেগুলোর দিকেও আপনারা নজর দিন।” তাঁর নির্দেশ, জেলার লোকশিল্পীদের খুঁজে বের করে উন্নয়নমূলক প্রচারের কাজে তাঁদের ব্যবহার করতে হবে। সরকারি ভাতা তাঁরা যাতে পান, সেটাও প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে। বনজ পাট্টা বিলিতে ঢিলেমি এবং জঙ্গলের মধ্যে রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রে বন দফতরের বাধার প্রসঙ্গ মমতা তুলে ওই দফতরের কর্তাদের সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। দ্বারকেশ্বর-গন্ধেশ্বরী প্রকল্পের কাজ শুরু না হওয়ার জন্যও বন দফতরকে তিনি দুষেছেন। দ্রুত সমস্যা মিটিয়ে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু করার নির্দেশ বন-কর্তাদের এ দিন দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে, দিনের শেষে শুধুই সমালোচনা নয়, কিছু প্রশংসাও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পেয়েছে জেলা প্রশাসন। খাতড়ার স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরির কাজ কতদূর এগিয়েছে, তা-ও তিনি জানতে চান খাতড়ার মহকুমাশাসক শুভেন্দু বসুর কাছে। কাজ চলছে জেনে মমতা সন্তুষ্ট হন। বাঁকুড়া থেকে রানিবাঁধ, ঝিলিমিলি পর্যন্ত পিচ রাস্তার প্রশংসাও শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে। কিন্তু, রানিবাঁধেরই আখকুটা থেকে রাইপুর, অম্বিকানগর রাস্তার বেহাল অবস্থার কথা তাঁকে জানান তৃণমূলেরই এক জেলা পরিষদ সদস্য। মমতা সঙ্গে সঙ্গে ওই রাস্তার পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসনকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.