দক্ষিণ ২৪ পরগণার ডায়মন্ড হারবার থেকে কুলতলি অবধি দশটি ব্লকের প্রায় ৩৩ লক্ষ মানুষ বহু বছর ধরেই লবণাক্ত ও আর্সেনিক মিশ্রিত জল পান করতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ ভূগর্ভ ছাড়া আর কোনও জলের উত্স নেই। এবার সেখানে কলকাতার মতই গঙ্গার জল শোধন করে সরবরাহ হবে। অক্টোবরের প্রথম দিন থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হতে চলেছে। সময়সীমা ২০১৫র মার্চ মাস।
এই প্রকল্পের মোট খরচ ১৩৩১ কোটি টাকা। এর ৫০ শতাংশ টাকা জাতীয় গ্রামীণ পানীয় জল প্রকল্পের অধীনে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক দিচ্ছে। বাকি অর্ধাংশ রাজ্য সরকারের।
এ কাজের দায়িত্ব জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের। বজবজের কাছে দক্ষিণ রায়পুর এলাকার ডোঙারিয়ায় এই দফতরের পুরনো জলশোধন কেন্দ্রের পাশেই নতুন প্রকল্পটি হতে চলেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকল্পের শিলান্যাস করে যান।
কিন্তু টাকার সমস্যা দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত জাতীয় গ্রামীণ পানীয় জল প্রকল্পের টাকা এসে যাওয়ায় সুরাহা হয়েছে। এই প্রকল্পটি হলে কুলপি, ডায়মন্ড হারবারের দুটি ব্লক, ফলতা, মগরাহাট ১, জয়নগরের দু’নম্বর ব্লক, মন্দিরবাজার, মথুরাপুরের দুই ব্লক এবং কুলতলির মানুষ শোধন করা পানীয় জল পাবেন। প্রতিটি এলাকাতেই কলকাতার মতো পাইপে পানীয় জল সরবরাহ করা হবে বলে দফতরের মুখপাত্র জনস্বাস্থ্য সচিব সৌরভ দাস জানান।
দফতর সূত্রের খবর, নতুন জলশোধন প্ল্যান্ট থেকে প্রতিদিন ২৩ কোটি ৬০ লক্ষ লিটার উত্পাদন করা যাবে। কিন্তু হিসেব করে দেখা গিয়েছে, এই ১০টি ব্লকে দৈনিক প্রয়োজন ২০ কোটি লিটার। সচিব বলেন, “১০ ব্লকের মধ্যে ইতিমধ্যেই ৬৪টি ছোট জলপ্রকল্প রয়েছে। তবে তা ভূগর্ভের জল তুলে সরবরাহ করে। গঙ্গার জল শোধন করার নতুন প্রকল্পটি হয়ে গেলে পুরনো ছোট প্রকল্পগুলি বন্ধ করে দেওয়া হবে। জলশোধন প্ল্যান্টের বাড়তি জলের জোগান অন্য এলাকাতেও সরবরাহ করা যায় কি না দেখা হচ্ছে।”
বস্তুত, রাজ্যের অধিকাংশ জেলায় আর্সেনিক, ফ্লুওরাইড, লবণাক্ত জলের প্রাদুর্ভাব দেখা গেলেও আগের বাম আমলে সেগুলির প্রতিরোধে সেরকম কার্যকরী পদক্ষেপ করা হয়নি। আর্সেনিক বা ফ্লুওরাইডারের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। ২০০৫-০৬ সালে বাম সরকারের তৈরি আর্সেনিক মোকাবিলার মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হলেও তা কাজে লাগেনি আর্সেনিক প্রতিরোধের উপযুক্ত প্রযুক্তি না-পাওয়ায়। ২০০৫ থেকে ২০১১র মে মাস অবধি টানা ছ’বছর রাজ্যের ৮টি আর্সেনিক প্রবণ জেলা ভুগেছে। |