একটিই স্কুল বাড়ি, স্কুল দু’টি। সকালে বসে গোয়ালপাড়া প্রাথমিক স্কুল। বেলায় খাগড়া গোয়ালপাড়া তরুণ সংঘ জুনিয়ার হাইস্কুল।
আড়াই বছর আগেও সকালের ওই প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল সাকুল্যে ৪৫। শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা তিন। এই ক’বছরে তাঁদের চেষ্টায় ছাত্রছাত্রী বেড়ে দ্বিগুন। ৯৪ জন।
উল্টো চিত্র বেলার জুনিয়র হাই স্কুলটিতে। ২০০৭-এ ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রী ছিল ১৭০ জন। ৬ বছরে তা কমে ১৪। খাতায় কলমে অবশ্য ২৬। তবে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী মিলিয়ে মোট সংখ্যা ১৩। প্রধানশিক্ষক-সহ মোট শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা আট। পার্শ্ব শিক্ষক তিন ৩ এবং ২ জন শিক্ষাকর্মী।
গরম থেকে রেহাই পেতে খুদে পড়ুয়াদের সামান্য পাখার হাওয়া খাওয়াতে স্কুলের তিন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিজেদের পকেটের টাকায় স্কুলের বিদ্যুতের মাশুল মেটান। অন্য দিকে বিদ্যুতের বিল না মেটাতে পারায় জুনিয়র হাইস্কুলের বিদ্যুতের সংযোগই কেটে দেওয়া হয়েছে। |
তরুণ সঙ্ঘ জুনিয়ার হাইস্কুলটি সরকারি অনুমোদন পায় ১৯৮৪ সালে। ২০০৬ সালে ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন শিক্ষিকা স্নেহকণা চন্দ্র। তিনি বলেন, “তখনও পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ছাত্রছাত্রী ছিল দু’শোরও বেশি।” ২০০৭ সালে প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেন সুশান্ত রায়। তিনি নিজেও বলেন, “২০০৭ সালে স্কুলে ১৬০-১৭০ জন ছাত্রছাত্রী ছিল।” এখন প্রথম শ্রেণিতে এক জন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পাঁচ জন। সপ্তম শ্রেণিতেও এক। আর অষ্টম শ্রেণিতে সাত। সব মিলিয়ে ১৪ জন। অর্থাত্ ১৪ জন পড়ুয়ার জন্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী ১৩ জন। কেন এই দশা?
সুশান্তবাবু বলেন, “শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী মিলিয়ে ১৩ জনের মধ্যে ৬ জনই আমার বিরুদ্ধে। তাঁরাই স্কুলটিকে তুলে দিতে চান। তাঁরা শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন না।” ওই ৬ জনের মধ্যে রয়েছেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ করা ৩ শিক্ষক-- দেবাশিস নন্দী, সুবোধ মণ্ডলও সেন্টু হালদার। রয়েছেন বর্ষীয়ান শিক্ষক তরুণ কুণ্ডু। তিনি মাস ছয়েক পর অবসর নেবেন। ওই ৪ জনের পাল্টা অভিযোগ, “প্রধানশিক্ষক নিজেই অধিকাংশ দিন স্কুলে আসেন না। গত বছরের ১৯ জুন থেকে তিনি হাজিরা খাতায় সই করেননি। সহকর্মীদের সঙ্গে তিনি মহম্মদ বিন তুঘলকের মতো ব্যবহার করেন। আমাদের সার্ভিস বুক, চাকরির কনফারমেশন ও আয়করের ত্রৈমাসিক হিসাব-সহ সব কিছুতেই তিনি বেনিয়ম করে রেখেছেন। দু’ বছর ধরে তিনি স্কুলের রুটিন তৈরি করেননি। এই ডামাডোলের স্কুলে কোন বাবা-মা তাঁদের ছেলেমেয়েদের পাঠাবেন?”
তাঁরা চান, স্কুলটি তুলে দিয়ে দ্রুত তাঁদের অন্যত্র বদলি করা হোক। তাঁরা বলেন, “আমরা পড়াতে চাই। বসে বসে বাত ধরে গেল!” দু’ তরফের বিরোধ এতটাই যে, বছর খানেক আগে খুদে পড়ুয়াদের সামনেই শিক্ষকদের বিবাদ প্রায় হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায়। প্রধানশিক্ষক বলেন, “তারপর তো আমাকে অনেক দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল।” লেখাপড়ার পরিবেশ উচ্ছন্নে যাওয়ায় ওই স্কুলের দেওয়াল ঘেষা বাড়ির খুদে পড়ুয়ারাও ২ কিলেমিটার দূরে কৃষ্ণনাথ কলেজে পড়তে যায়। স্কুলের তিন ধাপ দূরে বাড়ি মানসী ঘোষের। তিনি বলেন, “আমার ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। লেখাপড়ার পরিবেশ ভাল থাকলে ছেলেকে কি বাড়ির পাশের স্কুল ছেড়ে ২ কিলোমিটার দূরের স্কুলে পাঠাতাম?”
মুর্শিদাবাদ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বিমল পাণ্ডে বলেন, “ওই স্কুলের শোচনীয় দশা। তাই স্কুলটি অন্য স্কুলের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার জন্য কথাবার্তা তলছে।” মুর্শিদাবাদ জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের সভাপতি সাগির হোসেন বলেন, “জেলার কোনও প্রাথমিক বিদ্যালয়েরই দশা তরুণ সঙ্ঘ জুনিয়র হাইস্কুলের মতো নয়।” |