চার বছর আগে ছেলের বিয়ের সময়ে পণের পুরো টাকা হাতে না পাওয়ায় ক্ষোভ পুষে রেখেছিলেন তিনি। সোমবার রাতে ঘুমন্ত ছেলে-বৌমা-নাতির মুখে অ্যাসিড ছুড়ে সে রাগই উগরে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে যাঁর বিরুদ্ধে তিনি মধ্য পঞ্চাশের হিরা বিবি।
মায়ের ছোড়া অ্যাসিডে ছেলে আব্দুল সালাম ও পুত্রবধূ সামসুন্নেসা কোনওক্রমে প্রাণে বেঁচে গেলেও মারা গিয়েছে তাঁদের বছর তিনেকের ছোট্ট ছেলে মিলন শেখ। ঘটনার পরেই পালিয়েছেন ওই মহিলা। পুলিশ জানায় সকাল থেকেই হিরা বিবির খোঁজে শুরু হয়েছে তল্লাশি। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “অভিযুক্ত পলাতক। আশপাশের গ্রামে খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।”
চার বছর আগে আব্দুলের সঙ্গে সালারের গুলহাটিয়া গ্রামের সামসুন্নেসার বিয়ে হয়। পাত্র পক্ষের দাবি ছিল ৩০ হাজার টাকা। আব্দুল জানায়, তাঁর শ্বশুর কোনরকমে ২৭ হাজার টাকা জোগার করে দিলেও বাকি তিন হাজার টাকা আর দিতে পারেননি। তার জেরেই বিয়ের পর থেকেই সামসুন্নেসার উপরে শুরু হয় অত্যাচার। এ দিন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আব্দুল বলেন, “মাত্র তিন হাজার টাকা দিতে না পারায় বৌকে প্রায়ই পেটাত মা। মায়ের দাবি ছিল পণের পুরো টাকাটাই মায়ের হাতে তুলে দিতে হবে। বাধ্য হয়ে আমি বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়িতে থাকতে শুরু করি। বছর তিনেক সেখানে কাটানোর পরে মনে হয়েছিল, মায়ের রাগ বোধহয় পড়েছে। মাস কয়েক আগে তাই ফিরে এসেছিলাম গ্রামে। এখন মনে হচ্ছে না ফিরলে অন্তত ছেলেটাকে বেঘোরে মরতে হত না।”
হিরা বিবি যে বদ-রাগী তা জানিয়েছেন পড়শিরাও। তাঁরা জানান, কথায় কথায় রেগে গিয়ে চিৎকার করে প্রায়ই পাড়া মাথায় করতেন ওই প্রৌঢ়া। সামসুন্নেসাকেও তিনি যে প্রায়ই মারধর করতেন তাও জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু এমন যে হতে পারে অনুমান করতে পারেননি তাঁরা।
প্রশ্ন উঠেছে ওই মহিলা অ্যাসিড পেলেন কোথা থেকে তা নিয়েও। কারণ, দেশের শীর্ষ আদালতের কড়া নির্দেশ রয়েছে, সরকার অনুমোদিত দোকান ছাড়া অ্যাসিড বিক্রি করা যাবে না। সেই সঙ্গে, অ্যসিড কিনতে গেলে ক্রেতার নাম-ধামের সঙ্গে অ্যাসিড কেনার কারণও নথিভূক্তকরে রাখা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে তা হয়েছিল কিনা তাও খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ।
কান্দি হাসপাতালে সামসুন্নেসার বাবা সামসুল হুদা বলেন, “ক’টা টাকার জন্য হিরা বিবি ফুটফুটে নাতিটাকে খুন করল। ভাবা যায় টাকার জন্য ঠাকুরমা নাতিকে খুন করছে!” আপাত শান্ত কান্দি শহরে এমন নৃশংসতার বিশেষ নজির নেই। কান্দির ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবজ্যোতি রায় বলেন, “সংসারে গণ্ডগোল থাকেই। তা বলে ঠাকুরমা কখনও নিজের নাতিকে খুন করতে পারে! ভাবতেই গা শিউরে উঠছে।” |