শেষ চারে
এক চালে বাজিমাত

সেমেন পাদাং-১ (উইলসন)
ইস্টবেঙ্গল-১ (মোগা)
ম্যাচটা দেখতে বসার সময় হঠাৎই কাকতালীয় ভাবে চোখটা চলে গেল ক্যালেন্ডারের দিকে। তারিখটা যে চব্বিশ সেপ্টেম্বর! দেখেই কেন জানি না, মন বলল--ইস্টবেঙ্গল সেমিফাইনালে চলে যেতেও পারে।
আসলে তারিখটা দেখেই আমার মন নিমেষে চলে গিয়েছিল ছত্রিশ বছর আগের এক চব্বিশ সেপ্টেম্বরের বিকেলে। আমি তখন খিদিরপুরে খেলছি। বন্ধু অমিত বাগচির সঙ্গে ইডেনের গ্যালারিতে বসে সে দিন দেখেছিলাম মোহনবাগান-কসমস ম্যাচ। পেলেদের বিরুদ্ধে সে দিন বাবলুদারা ২-২ করেছিল। কোনও দলের জন্য নয়। ভারতীয় হিসাবে বুকের ছাতি ফুলিয়ে সে দিন বাড়ি ফিরেছিলাম।
পাদাংয়ে মঙ্গলবার মেহতাবরা যখন বিপক্ষের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে ঠিক তখনই তারিখটা দেখে মনে হল, আজও ভাগ্যলক্ষ্মী আমার দেশের দিকেই থাকবে। খেলা শেষে দেখলাম আমার অনুমানই ঠিক। সেপ্টেম্বরের চব্বিশ তারিখে ফুটবলের ঈশ্বর বোধহয় ভারতকেই সমর্থন করেন।
না হলে গোটা ম্যাচ এত ছোটখাটো ভুল করে, দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে লড়াই করে ম্যাচ শেষে হাসি মুখে মাঠ ছাড়তে পারতেন না ফালোপা। শিক্ষানবিশের মতো ভুল করে উইলসনের পায়ে বল তুলে দিয়ে গুরপ্রীতের গোল খাওয়া। দাঁড়িয়ে যাওয়া মাঝমাঠ। রক্ষণ সংগঠনে এক গাদা ভুলভ্রান্তি। অগুনতি মিসপাস। তা সত্ত্বেও পিছিয়ে গিয়েও ম্যাচটা ১-১ করল মেহতাবরা। স্রেফ লাল-হলুদের ব্রাজিলীয় কোচের একটা ঠিকঠাক পরিবর্তনে।
যে ভাবে ইতিহাস
কলকাতার প্রথম ক্লাব হিসেবে এএফসি কাপ সেমিফাইনালে।
পাদাংয়ের সঙ্গে প্রথম ম্যাচে ১-০ জয়।
অ্যাওয়েতে উইলসনের গোলে পিছিয়েও মোগার গোলে ম্যাচ ১-১ ।
দু’পর্ব মিলিয়ে ২-১ জিতে শেষ চারে।
রবার্টের জায়গায় বলজিৎ। আমার চোখে গোটা ম্যাচে এটাই ইস্টবেঙ্গল কোচের একমাত্র বুদ্ধিদীপ্ত চাল। আর বলজিৎ নামার পনেরো মিনিটের মধ্যে দ্বিতীয় পোস্টে ওর ভাসিয়ে দেওয়া বল থেকে মোগার হেডে গোল আসতেই সেই চাল পুরোপুরি সুপারহিট। নিট ফল, বাংলা থেকে প্রথম দল হিসাবে এএফসি কাপের সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গল। গোয়ার ডেম্পোকে ছুঁয়ে ফেলল বাংলার দল।
সৌমিক আর মেহতাবকে মাঝমাঠে ডাবল পিভট রেখে এ দিন ৪-২-৩-১ ছকে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল। আর এখানেই গোলকধাঁধা। তোমার টিমে যখন খাবরা, সুবোধকুমার রয়েছে, তখন কেন মেহতাবের পাশে সৌমিক? ওরা কি ম্যাচফিট নয়? মর্গ্যান তো ওই সুবোধকেই মেহতাবের বিকল্প হিসাবে তৈরি করেছিলেন। ও কোথায়? লাল-হলুদ কোচ এই রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডারদের শুনলাম দলেই রাখেননি। তা হলে ৪-২-৩-১ খেলতে গেলেন কেন? ফুটবলারদের না মিডিয়ার চাপে?
ফালোপার এই ছকটাই ফাঁস হয়ে বসেছিল ইস্টবেঙ্গলের গলায়। মেহতাবকে দেখছিলাম বল পেয়েই আকাশে তুলে দিচ্ছে। চিডিকে লক্ষ করে। সেটাও ৫০-৬০ গজের। এতে লাভ হচ্ছিল পাদাংয়ের। ৪-১-৪-১ ছকে মাঠে নামা ইন্দোনেশিয়ার দলটির দুই বিদেশি—ক্যামেরুনের স্টপার ডেভিড এবং দক্ষিণ কোরিয়ান ডিফেন্সিভ ইয়ু সেই বল আঁকশির মতো নামিয়ে নিচ্ছিল চিডি ধরার আগেই। তার পর ইস্টবেঙ্গলের ডান দিক দিয়ে একের পর এক আক্রমণ শানাচ্ছিল নোভান, এস্তেবান, উইলসনরা। কারণ, আর এক ডিফেন্সিভ হাফ সৌমিক নিজের কাজটাই বুঝতে পারছিল না। বল কাড়ার ব্যাপারটা তো হচ্ছিলই না। লুজ বলটা ধরারও লোক ছিল না ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠে। খালি ফাউল আর মিস পাসের ছড়াছড়ি। খেলাটাও উইংয়ে ছড়াচ্ছিল না। আর সুয়োকা, লালরিন্দিকা, আব্রাঞ্চেস আক্রমণে উঠে গিয়ে নামতে দেরি করায় (গরম, আর্দ্রতা এ ক্ষেত্রে একটা ফ্যাক্টর) বড়সড় ফাঁক তৈরি হচ্ছিল।

পাদাংয়ে আকাশের যুদ্ধে মোগা।
প্রতি-আক্রমণের রাস্তায় গিয়েও তাই ইস্টবেঙ্গল কোচ বারবার ছেলেদের নির্দেশ দিচ্ছিলেন নেমে এসে ডিফেন্সের সামনে পায়ের জঙ্গল বাড়ানোর জন্য। এই সুযোগেই উইলসনদের এগিয়ে যাওয়া। তবে শুরুতেই পাদাং গোলকিপার বক্সে চিডিকে যে ভাবে আটকাল তাতে ইস্টবেঙ্গলকে পেনাল্টি দিতেই পারতেন সৌদির রেফারি।
কিন্তু ম্যাচটা ঘুরে গেল চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ মিনিটে— দশ মিনিটের একটা স্পেলে। প্রথমে চোট পেয়ে বাইরে চলে গেল সুয়োকা। নামল মোগা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে গোড়ালির চোটে কাতরাতে কাতরাতে উঠে গেল ওদের গোলমেশিন উইলসন। ব্রাজিলিয়ান ফালোপা বুঝলেন আর ডাবল পিভটের দরকার নেই। রবার্টকে তুলে বলজিতকে নামিয়ে চলে গেলেন ৪-৪-২ ছকে। সৌমিক চলে গেল ওর পছন্দের জায়গা লেফট ব্যাকে। আর ডিকা এসে দাঁড়াল মেহতাবের পাশে। এতেই ভাগ্যলক্ষ্মীর ঢলে পড়া শুরু লাল-হলুদের দিকে। অ্যাওয়ে ম্যাচে ১-১ করে ফালোপাও বাকি দশ মিনিট আর ঝুঁকি নেননি। আব্রাঞ্চেসকে তুলে নামিয়ে দিলেন গুরবিন্দরকে। ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের সামনে তখন সাত জন। উইলসন বিহীন পাদাংয়ের সেই দম ছিল না যে, এদের টপকে দু’গোল দিয়ে সেমিফাইনালে যাবে। তা হয়ওনি।

ম্যাচ শেষে ক্লাব তাঁবু।
সেমিফাইনালে সামনে কুয়েতের দল। এএফসি কাপে যাদের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের পারফরম্যান্স খুবই খারাপ। তার ওপরে সুয়োকা নেই। তবে হাল ছাড়লে চলবে না। এ দিন যেমন হাল না ছেড়ে হাসিমুখে মাঠ ছাড়ল ইস্টবেঙ্গল। কারণ লড়াইটা হবে মাঠে। কুয়েতের বিরুদ্ধে জেতার সম্ভাবনা কঠিন হলেও তা অসম্ভব নয়। তবে সবার আগে ড্রেসিংরুমে গুরপ্রীতকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে মাঠে নেমে স্কুলছাত্রের মতো ভুল যেন না হয়। গত তিন বছর ধরে মাঠে ওর হঠাৎ হঠাৎ এ রকম বালখিল্য আচরণের জন্য কিন্তু ইস্টবেঙ্গলকে মাশুল গুনতে হয়েছে বারবার।

নেপথ্যের নায়ক ফালোপা।
মোহনবাগান সচিব
ইস্টবেঙ্গলের এই সাফল্যে আমরাও গর্বিত। ওদের ফুটবলাররা যে কাজ করেছে সেটা শুধু বাংলার নয়, ভারতীয় ফুটবলকেও সমৃদ্ধ করবে।
মহমেডান সভাপতি
ইস্টবেঙ্গলকে অভিনন্দন। চিডি- মেহতাবরা শুধু ইস্টবেঙ্গলকে নয়, পুরো বাংলাকে গর্বিত করেছে।

—নিজস্ব চিত্র।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.