ফালোপার অস্ত্র আজ প্রতিআক্রমণ
তিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে ফুটছে ইস্টবেঙ্গল। ফুটছেন সুয়োকা-মেহতাব। ফুটছেন মার্কোস ফালোপা।
মঙ্গলবার পশ্চিম সুমাত্রার পাদাংয়ে সকলের লক্ষ্য যে এক। যে কোনও ভাবে হারাও ইন্দোনেশিয়ার দলকে। তা হলেই এএফসি-র সেমিফাইনাল। বাংলায় প্রথম। ভারতে ডেম্পোর পরেই।
এক সপ্তাহ আগে যুবভারতীতে ০-১ হেরে পাদাং কোচ জাফরি সাস্ত্রা যে বলে গিয়েছিলেন, “ভাগ্য জিতিয়ে দিল ইস্টবেঙ্গলকে।” মঙ্গলবার দুপুরে তার জবাব দেওয়া যাবে কি? বাংলার প্রথম দল হিসাবে এএফসি কাপ সেমিফাইনাল খেলা সম্ভব হবে কি ফালোপার লাল-হলুদ ব্রিগেডের?
মাঠে ফুরফুরে টিম-ইস্টবেঙ্গল।
মেহতাবের যা প্রতিক্রিয়া তা চমকে ওঠার মতো। “আমাদের কাছে হেরে গিয়ে ঘরের মাঠে ওরাই তো চাপে থাকবে। আমাদের যা পরিকল্পনা তা মাঠে খেটে গেলে দেখা যাবে কার কত দম। আর এ বার কিন্তু অন্য ছক। অন্য খেলা।”
গত মঙ্গলবার যুবভারতীতে পাদাং বধে ফালোপার ছক ছিল ৪-৩-১-২। কলকাতা থেকে ১৮১৬ মাইল দূরে সুয়োকাদের জন্য নতুন কী ছক আমদানি করলেন ‘ইস্টবেঙ্গলের স্কোলারি’। পাদাংয়ে ফোন করে যা জানা গেল তাতে লাল-হলুদের স্কোলারি দলকে এএফসি ফাইনালে তুলে নিয়ে যেতে মঙ্গলবার আমদানি করতে পারেন গত জুনে কনফেডারেশন কাপ জয়ী ব্রাজিলের স্কোলারির সেই ৪-২-৩-১ ছক।
ইস্টবেঙ্গল কোচ দেরিতে হলেও বুঝেছেন মাঝমাঠে মেহতাবের সঙ্গে এক জন রক্ষণাত্মক মিডিও থাকলে মাঝমাঠের লড়াইতে যেমন তিতাস বোনাইদের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে মোকাবিলা করা যাবে। তেমনই তাঁর নিজের রক্ষণে ওপারা-অর্ণবদের জিম্মায় যখন লাইবেরিয়ার উইলসন, আর্জেন্তিনার এস্তেবানরা আসবেন তখন পায়ের জঙ্গলে গোটা চারেক কড়া ট্যাকল পেরিয়ে একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে লাল-হলুদ রক্ষণ চুরমার করে দেওয়া অতটা সহজ হবে না। ভিডিও ফুটেজ এবং ইন্টারনেট ঘেঁটে লাল-হলুদ কোচ ইতিমধ্যেই জেনে নিয়েছেন, আর্জেন্তিনীয় এস্তেবান মাঝমাঠ থেকে ডজ করতে করতে হঠাৎ হঠাৎ ডাউন দ্য মিডল দৌড়ে ঢুকে পড়েন। কলকাতায় কার্ড সমস্যায় খেলেননি। যুবভারতীর বাতানুকুল ভিভিআইপি বক্সে বসে মেপে গিয়েছেন অর্ণবদের সীমাবদ্ধতা। মঙ্গলবার শুধু তিনিই যে খেলবেন তা নয় নামবেন আরও একজন। রক্ষণের স্তম্ভ ওয়াহিউ উইজিয়াস্তান্তো। এছাড়াও লেফট ব্যাক নোভান, মিডিও তিতাস, আইবয়, মোফুরাও চকিতে ঝড়ের বেগে মোক্ষম ঝটকা দেন। আর উইলসন তো ব্যক্তিগত দক্ষতায় কামাল করতে ওস্তাদ।
মাঠের বাইরেও স্বমেজাজে টিম-ইস্টবেঙ্গল।
মাঠ নিয়ে সমস্যা, গরম, আর্দ্রতা রয়েছে। কিন্তু ফালোপা ব্রিগেড ওই সব ফ্যাক্টর নিয়ে ভাবছেই না। পাখির চোখের মতো রবার্ট থেকে জোয়াকিম আব্রাঞ্চেস সকলেই দেখছেন এএফসি কাপ সেমিফাইনাল। অ্যাওয়ে গোলের নিয়মে যার টিকিট এক গোলের ব্যবধানে হারলে কিংবা ড্র করলেই চলে আসবে (তবে ০-১ হারলে ম্যাচ গড়াবে অতিরিক্ত সময় কিংবা টাইব্রেকারে)। কিন্তু কোনওমতেই দু’গোলের ব্যবধানে হারা চলবে না। সোমবার সকাল নটায় গোটা দলকে নিয়ে ঘণ্টা দেড়েক অনুশীলন করানোর সময় পাখি পড়ানোর মতো এ কথাগুলোই ফুটবলারদের কানে তুলে দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের ব্রাজিলীয় কোচ। সাংবাদিক সম্মেলনে এসেও আগাগোড়া সতর্ক ফালোপা। প্রতিপক্ষকে এগিয়ে রেখেই বলেছেন, “ঘরের মাঠে ওরাই এগিয়ে। আমরা আন্ডারডগ। তবে সেমিফাইনালে ওঠার জন্য মাঠে জায়গা ছাড়বে না আমার ছেলেরা।”
কনফেডারেশনে স্কোলারির চার ব্যাকের আগে দুই ডাবল পিভট ছিলেন লুইস গুস্তাভো এবং পওলিনহো। মঙ্গলবার সুকর্ণর দেশে ফালোপার গুস্তাভো, পওলিনহো কারা? ইস্টবেঙ্গল শিবিরের ভিতরের খবর, গোলে গুরপ্রীতের আগে ব্যাক ফোর নওবা-অর্ণব-উগা-রবার্ট। তাদের আগে দুই পিভট সৌমিক এবং মেহতাব। প্রথম জন বল কাড়বেন। আর দ্বিতীয় জনও মিডল থার্ডে ওই একই কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে বলও বাড়াবেন দুই উইং হাফ লালরিন্দিকা এবং জোয়াকিমকে। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার সুয়োকা। যিনি দলের আক্রমণের সময় চিডিকে বল জোগাবেন। আর বিপক্ষের পা থেকে বল কাড়ার সময় অনেকটাই নীচে নেমে আসবেন। ইস্টবেঙ্গল তখন হয়ে যাবে ৪-৫-১। সামনে একা থাকবেন চিডি। পরে নামতে পারেন মোগা। কারণ, ইস্টবেঙ্গল কোচ জানেন দু’গোলে জিতে সেমিফাইনালে যাওয়ার জন্য জাফরি সাস্ত্রারা অলআউট আক্রমণে যাবেন। তাই ঘর গুছিয়ে প্রতিআক্রমণাত্মক ফুটবলটাই আঁকড়ে ধরতে চাইছেন ব্রাজিলীয় কোচ। সিংহের গুহায় ঢুকে আর্জেন্তিনীয় ফুটবলার সমৃদ্ধ পাদাং বধ করতে এটাই মূলমন্ত্র ব্রাজিলীয় ফালোপার।
লাল-হলুদের ওঠার অঙ্ক
• ড্র হলেই সেমিফাইনালে ফালোপার দল।
• ইস্টবেঙ্গল ১-২, ২-৩ হারলেও ‘অ্যাওয়ে গোলের’ নিয়মে সেমিফাইনালে চলে যাবে। অর্থাৎ বিপক্ষের মাঠে ইস্টবেঙ্গল এক গোল করে দিলে পাদাংকে দু’ গোলের ব্যবধান রাখতে হবে।
• ইস্টবেঙ্গল ০-১ হারলে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে যাবে।
এক সপ্তাহ আগে কলকাতায় এসে সেমেন পাদাং জেনে গিয়েছিল ফালোপা-সুয়োকার এক সমুদ্র মানসিক দূরত্বের কথা। এতে মুখের হাসি চওড়াই হয়েছিল তাঁদের। কিন্তু এ বার ছবি অন্য। সেমিফাইনালে যাওয়ার জন্য ওই দু’জনেরই যে রিং টোন, “উই শ্যাল ওভারকাম।”
আর এই অসাধ্যসাধন করতে গিয়ে ফালোপা কি মঙ্গলবার সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে আবেদন জানাবেন, “আজ তোমরা আমাকে একটা উপহার দাও। ইস্টবেঙ্গলকে সেমিফাইনালে নিয়ে চলো।” যে ভাবে ১৯৬৪ তে জাকার্তা এশিয়ান গেমসের ফাইনালের আগে চুনী-পিকেদের রহিম সাহেব বলেছিলেন। দশ বছর আগে অ্যালভিটোদের বলেছিলেন সে বারের আসিয়ান জয়ী লাল-হলুদ কোচ সুভাষ ভৌমিক। নাকি, দশ বছর আগের আসিয়ান ফাইনালের সকালের মতোই মাইক ওকোরের ঢংয়ে সুয়োকা বলে উঠবেন, “কোচ আমি আজ দায়িত্ব নিয়ে দলকে জেতাতে চাই।”
আসিয়ান জয়ী দলের অ্যালভিটো বলছেন, “দেশটা যখন এক তখন নতুন ইতিহাস গড়তেই পারে। সেমিফাইনালের জন্য আমরা সবাই এককাট্টা।” এগারো জন লাল-হলুদ সৈনিকের এই এককাট্টা মনোভাবটাই আজ পাদাংয়ের সামনে জিব্রাল্টারের পাহাড়।

আজ টিভিতে
ইতিহাস গড়তে কি পারবে লাল হলুদ?
সেমেন পাদাং বনাম ইস্টবেঙ্গল
(ইএসপিএন দুপুর ১-২৫)

ছবি ফেসবুকের সৌজন্যে।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.