সেমেন পাদাংয়ের সঙ্গে গত বছরই তাঁর দল চার্চিল ব্রাদার্স দু’টো ম্যাচ খেলেছিল।
ইস্টবেঙ্গলের আন্তর্জাতিক মানচিত্রে এ পর্যন্ত সবথেকে বড় সাফল্য আসিয়ান কাপ জয় এবং এএফসি কাপের শেষ আটে ওঠা তাঁর সৌজন্যেই। দশ বছর আগের সেই সফল কোচ সুভাষ ভৌমিক কিন্তু জানিয়ে দিলেন, আজ এএফসি কাপের সেমিফাইনালে মার্কোস ফালোপার টিম না উঠলে তিনি অবাকই হবেন।
“পাদাং টিমটা খারাপ আমি বলব না। কিন্তু বেক তেরো সাসানা বা পেত্রো কিমিয়া পুত্রা নয়। সিরিয়ার আল জইশও নয়। ইস্টবেঙ্গলের জেতা উচিত। একটা টিম তিন বছর ধরে একই সঙ্গে খেলছে। ঘরের ম্যাচটা জেতা রয়েছে। ওখানে না জিতলে অবাকই হব। টেকনিক্যালি বিচার করলেও ইস্টবেঙ্গল এগিয়ে সব দিক দিয়েই।”
ড্র করলেই কলকাতা ফুটবলের ইতিহাসে নতুন পালক সংযোজিত হবে ইস্টবেঙ্গলের হাত ধরে। ডেম্পোর কৃতিত্বকে ছুঁয়ে ফেলবেন চিডি, মেহতাবরা। তিন বারের আই লিগ জয়ী কোচ কিন্তু বলছেন, “ড্র-র কথা মাথায় নিয়ে নামলেই ডুবতে হবে। আলট্রা ডিফেন্সিভ খেললেই সমস্যা। মাঠ, গরম এ সবকেও পাত্তা দেওয়া যাবে না। জেতার কথা ভেবেই নামতে হবে।” |
তাঁকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়, যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গল যে পাদাংকে হারিয়েছিল সেই দলের সঙ্গে এ বার আর্জেন্তিনার এস্তেবান যোগ দেবেন। উইলসনের সঙ্গে। এতে ইন্দোনেশিয়ার দলটি শক্তিশালী হয়েছে। “আরে আর্জেন্তিনা, উইলসন সব আমি জানি। গোয়ায় ওরা পুরো টিম নিয়ে চার্চিলকে হারাতে পারেনি। আই লিগকে গুরুত্ব দেব বলে ইন্দোনেশিয়ায় আমি ফিরতি ম্যাচে যাইনি। হেনরি, বেটোকেও পাঠাইনি। ইস্টবেঙ্গলের যা টিম জেতা উচিত,” বলে দিলেন সুভাষ।
ইন্দোনেশিয়ার মাটিতে সেখানকারই লিগের চ্যাম্পিয়ন ও রার্নাসকে পরপর হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল ইস্টবেঙ্গল। চোট নিয়েও নিজেদের তাগিদে সে দিন মাঠে নেমেছিলেন সুলে মুসা ও মাইক ওকোরো। ফাইনালে সুভাষের টিম হারিয়েছিল বেক তেরো সাসানার মতো শক্তিশালী টিমকে। সেই প্রসঙ্গ উঠলে গতবারের আই লিগ জয়ী কোচ বললেন, “আরে আসিয়ান কাপের সঙ্গে এএফসি-র এই ম্যাচের কোনও তুলনাই হয় না। বেক তেরো সাসানা এএফসি কাপের ফাইনালে ওঠার পর এই টুর্নামেন্ট খেলতে এসেছিল। ইন্দোনেশিয়ার সেরা দু’টো টিমকে ওদের মাঠেই হারিয়েছিলাম”
সুভাষ ইস্টবেঙ্গলকে তুলেছিলেন এএফসি-র কোয়ার্টার ফাইনালে। এত দিন এই টুর্নামেন্টে লাল-হলুদের সেটাই ছিল সেরা সাফল্য। তারপর হেরে যান। ইতিমধ্যেই যুবভারতীতে প্রথম ম্যাচে পাদাংকে হারিয়ে সুভাষকে টপকে গিয়েছেন ফালোপা। সুভাষ বলছিলেন, “আমার সেই স্বপ্নের টিমটা খেলছিল সিরিয়ার আল জইশের সঙ্গে। ওদের মাঠে গিয়ে খেলতে হয়েছিল। পাদাং সেই তুলনায় অনেক কম শক্তির দল। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াকে হারানো সম্ভব। সিরিয়াকে কিন্তু খুবই কঠিন। তার উপর তার আগের বারের আট জন ফুটবলারকে রাখা হয়নি টিমে।”
তা সত্ত্বেও পাদাংয়ের ম্যাচটার দিকে তাকিয়ে থাকবেন সুভাষ। চান, ম্যাচটা জিতে ইস্টবেঙ্গল ইতিহাস গড়ুক। “যে কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচে ভারতের কোনও টিম জিতলেই আমার আনন্দ হয়। ইস্টবেঙ্গল জিতলেও ভাল লাগবে। কারণ ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে এটাই একমাত্র রাস্তা।” শুধু সুভাষই নয়, তাঁর টিমের তখনকার ফুটবলার দেবজিৎ ঘোষ, ষষ্ঠী দুলে, চন্দন দাসরাও কলকাতায় বসে তাকিয়ে থাকবেন আজ ফালোপা ব্রিগেডের দিকে। প্রত্যেকেই আশায় তাদের প্রাক্তন দল ইতিহাস তৈরি করবেই। দেবজিৎ বলছিলেন, “ইস্টবেঙ্গল যদি সেমিফাইনালে না যায় তা হলে সেটা অঘটনই হবে। এখন টিম যা ব্যালান্সড তাতে জেতা উচিত সহজেই। তার উপর হোম ম্যাচ জিতে থাকায় মানসিক ভাবে এগিয়ে থাকবে মেহতাবরা।” |