|
|
|
|
চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ হয়নি জেলায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
আমন ধানের মরসুম শেষ হয়েছে। আগামী নভেম্বর থেকে ফের সহায়ক মূল্যে ধান কেনা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু এখনও গত নভেম্বরে স্থির হওয়া লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ করা যায়নি! ঠিক ছিল, পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে মোট ২ লক্ষ ৫১ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হবে। সেখানে সংগ্রহ হয়েছে ১ লক্ষ ৮২ হাজার মেট্রিক টন চাল। প্রয়োজন মতো ধান কিনতে না পারায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও অধরা থেকে গিয়েছে। এমনিতে জেলায় যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়, তার নামমাত্র সহায়ক মূল্যে কেনা হয়। তারপরেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় চাষিদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
গত বার জেলায় আমন ধান উৎপাদন হয়েছে ১৭ লক্ষ ৭২ হাজার ৩৪৬ মেট্রিক টন। এই পরিমাণ ধান থেকে চাল সংগ্রহ হওয়ার কথা ১১ লক্ষ ৮১ হাজার ৫৬৪ মেট্রিক টন। এর মধ্যে মাত্র ২ লক্ষ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন সরকারি উদ্যোগে কেনার কথা ছিল। তা-ও লক্ষ্যপূরণ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে চালকল মালিকদের লেভির অতিরিক্ত চাল দিতে সরকার বাধ্য করছে বলে অভিযোগ। স্বভাবতই ক্ষুব্ধ চালকল মালিকরা। তাঁদের বক্তব্য, সরকারের কাছে এমনিতেই কম দাম পাওয়া যায়। |
|
খাদ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই শুরু হয়েছিল ধান কেনা।—নিজস্ব চিত্র। |
খোলা বাজারে চালের দাম যেখানে প্রতি কুইন্টাল ২,২৫০ টাকা, সেখানে সরকারকে দিতে হচ্ছে কুইন্টাল পিছু ১,৮৫০ টাকা। এই পরিস্থিতিতে লেভির অতিরিক্ত চাল দিতে গিয়ে লোকসান বাড়ছে। সমস্যার কথা অবশ্য সরাসরি মানতে নারাজ জেলার খাদ্য সরবরাহ আধিকারিক পার্থপ্রতিম রায়। তাঁর বক্তব্য, “অন্য জেলার তুলনায় এই জেলার পারফরম্যান্স ভালই। লক্ষ্যপূরণের সব রকম চেষ্টা চলছে।”
মূলত, অভাবি বিক্রি রুখতেই চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনে সরকার। এ জন্য ধানের মূল্যও বেঁধে দেওয়া হয়। গত শস্য বছরে (নভেম্বর থেকে শুরু) যেমন সহায়ক মূল্য ছিল কুইন্টাল প্রতি ১২৫০ টাকা। খোলা বাজারে ধানের দাম খুব বেশি হলে ছিল প্রতি কুইন্টাল ৮৫০ থেকে ১০৫০ টাকা। জেলার এক চালকল মালিকের কথায়, “সরকারি উদ্যোগে কখনও সমস্ত ধান কেনা সম্ভব নয়। জেলায় যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়, তার সবটা সরকার কিনে নেবে, এমনটা হতে পারে না। এটা চাষিরাও বোঝেন। তবে এটা ঠিক, সহায়ক মূল্যে ধান কেনায় গতি থাকলে খোলাবাজারে ধানের দাম দ্রুত পড়ে না। চাষিরাও ন্যায্য মূল্য পান।” |
অধরা লক্ষ্য |
|
কেনার কথা |
কিনেছে |
এফসিআই
রাজ্য সরকার
ইসিএসসি
বেনফেড
কনফেড
এনসিসিএফ
|
৯৬ হাজার
৪০ হাজার
৭৫ হাজার
২৫ হাজার
৩ হাজার
১২ হাজার
|
৬৭,৫২১
১৯,৩০১
৫৯,৩৬০
২৮,১৫৬
১,৪০১
৬,৭৬৫
|
গত বার পশ্চিম মেদিনীপুরে সহায়ক মূল্যে মোট ২ লক্ষ ৫১ হাজার মেট্রিক
টন
চাল সংগ্রহ করার কথা ছিল।
কিন্তু সংগ্রহ হয়েছে ১ লক্ষ ৮২ হাজার
মেট্রিক টন। অর্থাৎ প্রায় ৭২ শতাংশ। |
হিসেব মেট্রিক টনে। পরিসংখ্যান অগস্ট, ২০১৩ পর্যন্ত। |
|
২০১১ সালে জেলায় আমন চাষ হয়েছিল ৫ লক্ষ ৫২৫ হেক্টর জমিতে। হেক্টর পিছু গড়ে ফলন ৪০.০৪ কুইন্টাল। ২০১২ সালে চাষ হয় ৪ লক্ষ ৩০ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমিতে। হেক্টর পিছু ফলন দাঁড়ায়, ৪১.১৭ কুইন্টাল। গত বছরের শেষ দিকে জেলায় এসেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তারপরই ধান কেনার তোড়জোড় শুরু হয়। রাজ্য সরকার, এফসিআই, বেনফেড, কনফেড কে কত পরিমাণ চাল সংগ্রহ করবে তা বেঁধে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ২ লক্ষ ৫১ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়। তা অবশ্য পূরণ হয়নি। চলতি বছরের অগস্টের শেষে দেখা যাচ্ছে, সব মিলিয়ে সংগ্রহ হয়েছে ১ লক্ষ ৮২ হাজার মেট্রিক টন চাল।
এখন চাষের খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সার, কীটনাশকের দাম থেকে শ্রমিকদের মজুরি সবই উত্তোরত্তর বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে খোলা বাজারে ধানের দাম একটু না বাড়লে বহু চাষিকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। সহায়ক মূল্যে দ্রুত ধান কেনা না হলে খোলা বাজারের দাম পড়ে যায়। আর সেই সুযোগে দাপট বাড়ে অসাধু ব্যবসায়ী বা ফোঁড়েদের। চাষিরা কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। এই পরিস্থিতির জন্য বিরোধীরা দুষছেন বর্তমান তৃণমূল সরকারকে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের মতে, “সহায়ক মূল্যে ধান কেনায় সরকারের সদিচ্ছার অভাব ছিল। তাই এই পরিস্থিতি।” তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি অবশ্য বলেন, “সরকারি উদ্যোগে ধান কেনার কাজ ভাল ভাবেই হয়েছে। আগে অসাধু ব্যবসায়ীদে দাপটে চাষিরা কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য করত। এ বার তা হয়নি।”
চাষিদের বক্তব্য যদিও আলাদা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কেশপুরের এক চাষি বলেন, “সরকার যতই দাম বেঁধে দিক অভাবি বিক্রি করতেই হয়। বহু পথ উজিয়ে চালকলে গিয়ে দু’পয়সা বেশি পাওয়ার থেকে খোলাবাজারে বেচাই ভাল।” এ বার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় বহু চাষিই খোলাবাজারে কম দামে ধান বেচতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে, সঙ্কট থেকেই গিয়েছে। |
|
|
|
|
|