ঝাঁপ বন্ধ এড়াতে অবশেষে হাতবদলের পথেই ব্ল্যাকবেরি। এবং তা হতে চলেছে জন্মসূত্রে একজন ভারতীয়ের হাত ধরেই। সম্ভাব্য ক্রেতা ব্ল্যাকবেরির বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার কানাডারই ফেয়ারফ্যাক্স ফিনান্সিয়াল হোল্ডিংস। যার কর্ণধার প্রেম বৎস-ই মোবাইল মারফত ই-মেল পরিষেবার এই কিংবদন্তি সংস্থাকে বাঁচার পথ দেখাতে পারেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিমা ও আর্থিক পরিষেবা সংস্থা ফেয়ারফ্যাক্সের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম ব্ল্যাকবেরিকে কিনে নেওয়ার জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের (২৯,১৪০ কোটি টাকা) যে-দরপত্র দিয়েছে, আপাতত তা মেনে নিয়ে চুক্তিতে সই করেছে লোকসানের ভারে ধুঁকতে থাকা সংস্থা। এই হিসাব মাফিক শেয়ার পিছু ওই কনসোর্টিয়াম দর দিচ্ছে ৯ ডলার। |
ফেয়ারফ্যাক্স কর্ণধার প্রেম বৎস। ছবি: রয়টার্স। |
কানাডার ওয়ারেন বাফে বলে পরিচিত বৎস দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিতেই পছন্দ করেন বলে সশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাঁর এই ‘দূরদৃষ্টি’-র জন্যই বেশির ভাগ সম্ভাব্য ক্রেতা ‘গলতে শুরু করা বরফের চাঁই’ হিসাবে ব্ল্যাকবরিকে দূরে সরিয়ে দিলেও এগিয়ে আসেন বৎস। সাধারণ ভাবে প্রচারের আড়ালে থাকতে পছন্দ করলেও, গত বছর এক সাংবাদিক বৈঠকে ( যা তিনি খুব কমই করে থকেন) তাঁর মন্তব্য এখানে উল্লেখযোগ্য। বৎস বলেছিলেন, ব্ল্যাকবেরি-র ঘুরে দাঁড়ানো তিন, ছয়, কিংবা ন’মাসের ব্যাপার নয়। তাই সেই আশা নিয়ে কোনও লগ্নিকারী দৌড়ে নামলে হতাশ হবেন। তবে চার-পাঁচ বছরে তা সম্ভব। সেই সঙ্গেই তিনি ইঙ্গিত দেন, “আমরা চার-পাঁচ বছরের জন্যই লগ্নি করে থাকি।” আগামী ছ’সপ্তাহ ধরে (৪ নভেম্বর পর্যন্ত) ব্ল্যাকবেরি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করবে ফেয়ারফ্যাক্সের কনসোর্টিয়াম। তার পর তিন মাসের মধ্যে যদি ব্ল্যাকবেরি এই চুক্তি ছেড়ে বেরিয়ে এসে বিকল্প কোনও প্রস্তাব গ্রহণ করে, তা হলে ফেয়ারফ্যাক্সকে তার জন্য জরিমানা বাবদ একটি নির্দিষ্ট অঙ্ক মেটাতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের ইঙ্গিত, দূরদৃষ্টির জন্যই ২০১২-র জানুয়ারি থেকে বৎস আন্দাজ করতে পেরেছিলেন, ব্ল্যাকবেরিকে চাঙ্গা করার জন্য বড়সড় পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার সময় আসছে। তাই সংস্থার হাল খারাপ হওয়া সত্ত্বেও ওই সময় থেকেই সংস্থায় শেয়ার মালিকানা তিনি ২% থেকে ক্রমে বাড়িয়ে নিয়ে যান ১০ শতাংশে। এর পর ব্ল্যাকবেরি যখন চলতি বছরের অগস্টে ঘোষণা করে যে, তারা ক্রেতা খুঁজছে, তখন সংস্থার পরিচালন পর্ষদ থেকে সরে দাঁড়ান বৎস। তাঁর লক্ষ্য ছিল ব্ল্যাকবেরি কেনার জন্য দরপত্র দেওয়া। সে ব্যাপারে যাতে কোনও স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ না-ওঠে, তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
বিপুল লোকসানের বোঝা কমিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে বিশ্ব জুড়ে ৪৫০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা গত সপ্তাহেই ঘোষণা করে ব্ল্যাকবেরি। তখন বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন, এই রুগ্ণ সংস্থায় লগ্নি করতে বিশেষ কেউ এগোবেন না। সংস্থা সম্ভবত গুটিয়ে যাবে। তার পরেই হায়দরাবাদের ভূমিপুত্র, আইআইটি-র কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ৬৩ বছর বয়স্ক বৎসের এই প্রস্তাবে অনেকেই হতবাক। তবে তিনি পস্তাবেন, না লাভের কড়ি ঘরে তুলবেন, সে মন্তব্য করার সময় আসেনি বলেই মন্তব্য তাঁর ঘনিষ্ঠ শিল্পোদ্যোগীদের। কারণ, বৎসের মতে, ব্ল্যাকবেরি ডুবন্ত জাহাজ নয়, তার মধ্যে প্রাণের রসদ রয়েছে।
|