বিপুল লোকসানের মুখে দাঁড়িয়ে ব্ল্যাকবেরি। আর সেই বোঝা কমাতেই বিশ্ব জুড়ে ৪৫০০ কর্মী ছাঁটাই করছে সংস্থা। যা তাদের মোট কর্মী সংখ্যার এক তৃতীয়াংশেরও বেশি।
আগামী সপ্তাহেই ব্ল্যাকবেরি জুন থেকে অগস্টের আর্থিক ফলাফল প্রকাশ করতে চলেছে। সেখানে নিট লোকসানের অঙ্ক ৯৫ থেকে সাড়ে ৯৯ কোটি ডলারের (৫৮৯০ থেকে ৬১৬৯ কোটি টাকা) কম হবে না বলে আশঙ্কা জানিয়েছে সংস্থা। সম্পদের মূল্য কমে যাওয়ার মতো কারণকেই এর জন্য দায়ী করেছে তারা। শুক্রবার ব্ল্যাকবেরির পক্ষ থেকে এই ইঙ্গিত দেওয়ার পরেই সংস্থা গুটিয়ে যাওয়া নিয়ে নতুন করে আতঙ্কিত কর্মীরা। টরন্টোর বাজারে সংস্থার নথিভুক্ত শেয়ার এক ঝটকায় পড়ে যায় ২৩.৭%। ন্যাসডাকে শেয়ার দর পড়েছে ১৭%।
অ্যাপলের আইফোন ও স্যামসাঙের গ্যালাক্সি ফোনের সঙ্গে মুখোমুখি প্রতিযোগিতায় বাজার ধরে রাখতে বেশ কিছু দিন ধরেই এঁটে উঠছিল না সংস্থা। এই মুহূর্তেও আইফোনের আধুনিকতম মডেল আইফোন ৫এস-এর বাড়তি চাহিদা মেটাতে হিমসিম অ্যাপল। ব্রিটেন, আমেরিকার নামী-দামি বিপণিগুলিতে যখন আগ্রহী ক্রেতার লম্বা লাইন পড়ছে ফোনটি কেনার জন্য, না-পেয়ে হতাশও হচ্ছেন অনেকে, ঠিক তখনই অস্তিত্ব বিপন্ন ব্ল্যাকবেরির। প্রকৃতপক্ষে ব্ল্যাকবেরি১০ অপারেটিং সিস্টেমে চলা সংস্থার নতুন স্মার্টফোনগুলির বিক্রি কিছুতেই বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফুলে-ফেঁপে উঠতে পারেনি। অথচ বাজার ফিরে পেতেই অ্যানড্রয়েড ও আইওএস প্ল্যাটফর্মের জন্য নিজস্ব সফটওয়্যার আগেই খুলে দিয়েছে ব্ল্যাকবেরি। মোটা অঙ্কের লাভ রেখেই সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলিকে এই সফটওয়্যার পরিষেবা দিতে শুরু করে তারা, যাতে যে-কোনও সংস্থার নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এই সুবিধা কাজে আসে। কর্মীদের স্মার্টফোন অ্যানড্রয়েড বা অ্যাপল, যা-ই হোক, নিজস্ব নেটওয়ার্ক-এর ক্ষেত্রে ব্ল্যাকবেরি এন্টারপ্রাইজ সার্ভিস ব্যবহার করা যায় অনায়াসেই। এক কথায় হ্যান্ডসেট-এর অপারেটিং সিস্টেম-এর সীমাবদ্ধতা দূর করতেই এই পদক্ষেপ করে ব্ল্যাকবেরি। পাশাপাশি এই সফটওয়্যার-এর ব্যবহার বাড়িয়ে নিজেদের হ্যান্ডসেট-এর বাজার বৃদ্ধি করাও তাদের অন্যতম ব্যবসায়িক কৌশল ছিল, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তা সত্ত্বেও অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি। গত মাসেই ব্ল্যাকবেরি জানিয়েছিল, বিক্রি তলানিতে এসে ঠেকায় তারা সংস্থা পুরোপুরি বা আংশিক ভাবে বিক্রি করে দেওয়ার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, সংস্থা তার সেরা সময় পেরিয়ে এসেছে। সংস্থা বেচে দেওয়ার প্রস্তাব সে রকম ইঙ্গিতই দিচ্ছে বলে মনে করছেন আমেরিকা ভিত্তিক আর্থিক পরিষেবা বহুজাতিক বিজিসি পার্টনার্স-এর বিশ্লেষক কলিন গিলিস। তিনি জানান, ঝাঁপ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, এমন সংস্থায় কারা আগ্রহ দেখাবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
ব্ল্যাকবেরি অবশ্য মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ঘুরে দাঁড়ানোর। যে কারণে কর্মী ছাঁটাইয়ের এই প্রস্তাব। সংস্থা সূত্রের খবর, আগামী ন’মাসে পরিচালনার খরচ ৫০ শতাংশ কাটছাঁট করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সংস্থা। এন্টারপ্রাইজ সার্ভিস-এর উপরেই জোর দিতে চায় তারা, যাতে দামি পরিষেবার বাজার বাড়ানো যায়। তবে সংস্থা নতুন করে সমৃদ্ধির পথে ফিরবে, এমন আশা করছেন না বিশেষজ্ঞরা। সুইত্জারল্যান্ড ভিত্তিক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিং বহুজাতিকের বিশ্লেষক অমিতাভ পাস্সি বলেন, “সংস্থা হয় ভেঙে যাবে, না-হয়তো পুরোপুরি বা আংশিক ভাবে বিক্রি হবে। এটাই সম্ভাব্য পরিণতি বলে মনে হচ্ছে।”
ব্ল্যাকবেরি কিনতে আগ্রহ থাকলেও শেষ পর্যন্ত দৌড়ে নামবেন কি না, সে ব্যাপারে এখনও নিজেদের উপরেই ভরসা করতে পারছে না কিছু সংস্থা। এমনই একটি সংস্থা ব্ল্যাকবেরির লোকসানের বোঝা বাড়ার খবরে মন্তব্য করেছে: বেশির ভাগ ক্রেতাই অনেক ভেবেচিন্তে এগোবেন। কারণ, ব্ল্যাকবেরি এই মুহূর্তে গলতে শুরু করা বিশাল আকৃতির একটি বরফের চাঁই ছাড়া আর কিছুই নয়। |