দু’বছর আগে মেঘালয়ে চালু হয়েছে দু’টি। আরও দু’টি খুলতে চলেছে ত্রিপুরায়। এ বার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত-হাটগুলি নব কলেবরে ফিরে আসতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গেও। দু’দেশ মনে করছে, সীমান্তের মানুষদের মধ্যে অর্থনৈতিক লেনদেন ও যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি চোরাকারবার কমানোর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে সীমান্ত-হাটগুলি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পাকিস্তান আমলেও সীমান্ত-হাটগুলি চালু ছিল। গত ৪২ বছর ধরে সেগুলির আর অস্তিত্ব নেই। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে এই রকম চারটি হাট খোলা হবে। শনিবার বিএসএফের অতিরিক্ত ডিজি (পূর্বাঞ্চল) বংশীধর শর্মা বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে আমরা ৩২টি সীমান্ত-হাট খোলার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সপ্তাহ দুয়েক আগে রাজ্যের মুখ্যসচিব জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রকম চারটি হাট খোলার পক্ষে সায় দিয়েছেন। রাজ্য সরকারের তরফে এটা ইতিবাচক পদক্ষেপ।”
রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, “বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া জেলাগুলির জেলাশাসক এবং এসপি-দের কাছ থেকে আমরা হাটগুলির সম্ভাব্য জায়গা জানতে চেয়েছি। শুরুতে চারটি জেলায় একটি করে হাট খোলা যেতে পারে। সাড়া মিললে আরও কয়েকটি জায়গায় এই ধরনের হাট খোলার জন্য কেন্দ্রকে বলা হবে।” রাজ্য জায়গা ঠিক করে দিলেও সীমান্ত-হাটে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হয় বলে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক। কী রকম হবে সেই সীমান্ত-হাট? |
বিএসএফ সূত্রের খবর, আন্তর্জাতিক সীমান্তরেখাকে মাঝখানে রেখে একটি সুবিধাজনক জায়গায় ভারতের দিকে দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে ৭৫ মিটার ভূখণ্ড এবং বাংলাদেশের দিকে তার লাগোয়া একই মাপের জায়গা নিয়ে একটি আয়তাকার এলাকা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা হবে। ওই ঘেরাটোপের দু’দিকে দু’টি দরজা থাকবে নিজ দেশের নাগরিকদের যাতায়াতের জন্য। দু’বারই দেখাতে হবে নাগরিক পরিচয়পত্র। সপ্তাহে দু’দিন করে বসবে সীমান্ত-হাট। সকাল আটটা থেকে দুপুর দু’টো অথবা দিনের আলো থাকবে, এমন সময়ে চালু থাকবে হাট। ব্যাঙ্কও থাকবে ওই ঘেরাটোপে। ভারত ও বাংলাদেশ, দু’দেশের টাকাতেই জিনিসপত্র কেনাবেচা করা যাবে।
তবে কী ধরনের জিনিসপত্র বেচাকেনা হবে সীমান্ত-হাটে?
মেঘালয়ে কলইচর ও বালাট-এর সীমান্ত-হাটের জন্য কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক ২০১১-র জুলাইয়ে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল তা থেকে এ ব্যাপারে কিছুটা আঁচ মিলতে পারে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, সংশ্লিষ্ট এলাকায় উৎপন্ন সব্জি, মাছ, মুরগি, মাংস, ডিম ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য, ফল, মশলা, গামছা ও লুঙ্গির মতো কুটিরশিল্পজাত পণ্য, বাঁশ, বাঁশের লাঠির মতো জঙ্গলজাত দ্রব্য (কাঠ নয়), দা, কোদাল, কুড়াল, বেলচা ও কাস্তের মতো কৃষি ও ঘরের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত কাপড়, মেলামাইনের বাসন, ফলের রসের মতো তৈরি খাবার সীমান্ত-হাটগুলিতে বেচাকেনা করা যাবে।
পশ্চিমবঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের দৈর্ঘ্য ২২১৬.৭ কিলোমিটার। এই সীমান্তের বিভিন্ন অংশ দিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে গরু পাচার হওয়াটা বিএসএফের মাথাব্যথার বড় কারণ। তা বলে এই সীমান্ত-হাটগুলিতে গরু কেনাবেচা করা যাবে না। কারা বেচাকেনা করতে পারবেন? কেন্দ্রীয় সরকারের ওই বিজ্ঞপ্তি বলছে, সীমান্ত-হাট যে জায়গায় বসবে, সেখান থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা সেখানে জিনিসপত্র বেচতে পারবেন। হাট পরিচালনার জন্য দু’দেশের স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর স্থানীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি একটি ‘হাট ম্যানেজমেন্ট কমিটি’ থাকবে। বিএসএফের অতিরিক্ত ডিজি জানান, গত ১৪ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বিএসএফ এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর মধ্যে ডিজি পর্যায়ের বৈঠকেও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে ৪টি হাট খোলার ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া মেলার প্রসঙ্গটি উঠেছিল। |