দল বদলের ফেরে হল না হ্যাটট্রিক
দুবরাজপুরের গদিতে তৃণমূল
নির্বাচনের ঠিক মুখেই পুরপ্রধান, উপপুরপ্রধান-সহ ৫ কংগ্রেস কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। দলকে জেতাতে কোমর বেঁধে নেমেছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও। দুবরাজপুরে পুরসভা নির্বাচনে তখনই লড়াইটা কংগ্রেসের কাছে কঠিন হয়ে গিয়েছিল। ফল বেরনোর পরে তা পরিষ্কার হয়ে গেল। শুধু তাই নয়, এই প্রথম দুবরাজপুরে বোর্ড গড়তে চলেছে তৃণমূল, কংগ্রেসের বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে। এ বার জিততে পারলে কংগ্রেসের হ্যাটট্রিক হত।
এত কিছুর মধ্যেও বিজেপি তাদের দু’টি আসনই ধরে রাখেছে। প্রাক্তন পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে জিতলেও উপপুরপ্রধান ৪৫৬ ভোটে পরাজিত হয়েছেন। কিন্তু বামফ্রন্ট প্রায় মুছে গিয়েছে বলা চলে। কারণ, গতবার বামফ্রন্ট ৫টি আসন (সিপিএম ৪ ও ফরওয়ার্ড ব্লক ১) পেয়েছিল। এ বার শুধু সিপিএম ১টি আসনে জেতে। তবে তাঁরা মানুষের পাশে থাকতে চান এবং নতুন করে ঘর গোছাতে চান বলে জানিয়েছেন বাম নেতৃত্ব। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অরুণ মিত্র বলেন, “আমাদের লড়াই জারি থাকবে।”
তবে ভোটের আগে বিরোধীদের বিশেষ করে কংগ্রেসকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দেওয়ার যে দাবি, তৃণমূলের তরফে করা হয়েছিল সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। উল্টে কংগ্রেসই এই পুর-নির্বাচনে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে আসায় কিছুটা অস্বস্তিতে তৃণমূল। ভাল ফলের আশা যে করেছিলেন সেটা স্বীকার করে নিয়েও তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের পাল্টা দাবি, “খারাপ ফলের জন্য কংগ্রেস, বিজিপি ও সিপিএমের এক হয়ে যাওয়া এবং ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য এই ফল। সে জন্যই বেশ কয়েকটি আসনে সমান্য ব্যবধানে হারতে হয়েছে।”

উল্লাস। মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।
তৃণমূল বা অনুব্রতবাবুরা যাই বলুন না কেন, এ বার পুর-নির্বাচনে লড়াই যথেষ্ট হাড্ডাহাড্ডি হয়েছে এবং পুরভোটের ফল প্রকাশের আগে পর্যন্ত তৃণমূল আদৌও ক্ষমতা দখল করবে কি না সেটা নিয়ে দোলাচলে ছিলেন সকলেই। মঙ্গলবার সকালে পুরভোটের ফল প্রকাশের পর তৃণমূল শিবিরে খুশির হাওয়া। কারণ, ১৬টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ৯, কংগ্রেস ৪, বিজেপি ২, সিপিএম ১টি আসন পায়। তৃণমূল বোর্ড গঠন করতে চলেছে। তবে আর একটি আসন বিরোধী কংগ্রেস, বিজিপি বা সিপিএম দলের কোনও প্রার্থীর দখলে চলে গেলেই বোর্ডগঠন নিয়ে জটিলতা তৈরি হত। সেই অনিশ্চয়তা কেটেছে ঠিকই, কিন্তু এতদিন ধরে মূলত কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভায় তাদের শক্তি যে খুব একটা কমেনি সেটা প্রামাণিত হল বলেই, মনে করছেন দলীয় নেতৃত্ব। কারণ, দলবদলে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিদায়ী কংগ্রেস পুরপ্রধান, উপ-পুরপ্রধান ও বাকি দুই কাউন্সিলরদের মধ্যে একমাত্র তিন বারের উপ-পুরপ্রধান নুর মহম্মদ হেরে গেলেন প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর শেখ নাজিরউদ্দিনের কাছে (একমাত্র তিনিই দল ছাড়েননি)। পীযূষবাবু নিজের আসনে জয়ী হলেও তাঁকেও যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ দিয়েছে কংগ্রেস। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে পীযূষবাবু দাঁড়িয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৫৪৫টি ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের নারায়ণ দে ৪২০টি ভোট। গত বার ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি (এ বার এই ওয়ার্ড ভেঙে ১৪ ও ১৫ হয়েছে)। সে বার তিনি জিতেছিলেন ৪৮২ ভোটের ব্যবধানে। এ বার সেই ব্যবধান ১২৫। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলেন, “কয়েকজন দল ছাড়লে একটা দলের সব শেষ হয় না। সেটা অন্তত শাসকদলের নেতাদের মাথায় ঢুকবে। মানুষ যে ভাবে আমাদের সমর্থন দিয়েছেন তাতে আমরা সন্তুষ্ট।”
বিজেপি ও সিপিএমের দাবি, কংগ্রেস বিরোধী আসনে বসলেও, সঠিক বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেবন তাঁদের নির্বাচিত কাউন্সিলররা। তাঁদের দলকে জেতানোর জন্য পুরবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “বিরোধী বলে কার্যত কিছুই থাকবে না। কেন না, এখন থেকেই আমার কাছে দলে ঢুকতে চেয়ে ফোন আসা শুরু হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে চিত্রটা ঠিক কী দাঁড়ায় দেখবেন। তবে যে যে প্রতিশ্রুতি নির্বাচনের আগে করা হয়েছিল সেগুলি বাস্তবায়িত করা হবে।” এ সব আজগুবি কথা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন বিরোধীরা। তবে উন্নয়ন কতটা কী হয়, সে দিকে তাকিয়ে রয়েছেন পুরবাসী।

এক নজরে পুরভোটের ফল
ওয়ার্ড জয়ী প্রার্থী দল ব্যবধান নিকটতম প্রার্থী
দল গতবার
স্বপ্না বাউড়ি তৃণমূল ৩২১ করুণা মুখোপাধ্যায় সিপিএম কংগ্রেস
মমতা সাহা তৃণমূল ১৬৫ পুষ্পিতা দাস সিপিএম সিপিএম

বিপ্লব মাহাতা তৃণমূল ১৩৮ পল্টু বাগদি সিপিএম সিপিএম

প্রভাত চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল ১০৮ সুবোধ গড়াই কংগ্রেস সিপিএম
পার্বতী গড়াই তৃণমূল ১৬১ অনিতা দত্ত ফব ফব
সন্তোষ মণ্ডল
কংগ্রেস ৮২ ভূতনাথ মণ্ডল তৃণমূল কংগ্রেস

শেখ নাজিরউদ্দিন কংগ্রেস ৪৫৬ নুর মহম্মদ তৃণমূল কংগ্রেস


সাধন বাদ্যকর তৃণমূল ৫২৩ লক্ষ্মণ কাহার সিপিএম

কংগ্রেস


শর্মিলা হালদার কংগ্রেস ২৬ গোপা রায় তৃণমূল সিপিএম

১০

আলাউদ্দিন খান সিপিএম ১১৪ শেখ নিজামউদ্দিন তৃণমূল কংগ্রেস
১১
মির্জা সৌকত আলি তৃণমূল ৩৮২ শেখ আতাউল খান কংগ্রেস কংগ্রেস
১২ সরস্বতী মাজি বিজেপি ৪২১ গুরুপদ দাস তৃণমূল বিজেপি
১৩ রীতা কবিরাজ কংগ্রেস ৫৮ সাধনা বসাক তৃণমূল তৃণমূল
১৪
পীষূষ পাণ্ডে তৃণমূল ১২৫ নারায়ণ দে কংগ্রেস কংগ্রেস
১৫
শুভ্র পাণ্ডে তৃণমূল ৩১৪ পরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস কংগ্রেস
১৬ মৌসুমী দে
বিজেপি ৬১০ কল্যাণী হাজরা তৃণমূল বিজেপি

প্রসঙ্গত, এ বার একটি আসন বেড়েছে। ১ ও ৪ পরিবর্তিত হয়নি।
২ ছিল ১১, ৩ ছিল ১২, ৫ ছিল ২, ৬ ছিল ৩, ৭ ছিল ৮, ৯ ছিল ১৫, ১০ ছিল ৯,
১১ ছিল ১৪, ১২ ছিল ১৩, ১৩ ছিল ৬, ১৪ ও ১৫ ছিল ৫। ১৬ ছিল ৭।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.