বোর্ড হাতে, তবু গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়েই চিন্তা
ণনাকেন্দ্রের বাইরে সাদা পাঞ্জাবী পড়ে গুসকরা স্টেশন রোডে পায়চারি করছিলেন গুসকরার বিদায়ী পুরপ্রধান তৃণমূলের চঞ্চল গড়াই। বিদায়ী উপ পুরপ্রধান মল্লিকা চোংদার বসেছিলেন গণনাকেন্দ্র পিপিপি ইনস্টিটিউশনের ভিতর। গণনা তখন সবে শেষ হয়েছে। মল্লিকাদেবী বলে উঠলেন, “যাক টেনশনটা কাটল! তৃণমূলের মধ্যে সবথেকে বেশি ভোটে আমিই জিতেছি। তাই এ বার দলের কাছে পুরপ্রধান হওয়ার দাবি জানাবো।” আর এক তৃণমূল নেতা নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায় গুসকরার পুরপ্রধানের দৌড়ে টিকে থাকার জন্য মঙ্গলবার দুপুরেই কলকাতা রওনা দিয়েছেন।
গুসকরা পুরসভার ১৬টি আসনের মধ্যে ১১টি আসনে জিতে বোর্ড গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর কে পুরপ্রধান হবে সেটা নিয়ে তৃণমূল শিবিরে যখন জোর তৎপরতা তখন সিপিএমের গুসকরা জোনাল কমিটি দফতরে পিন পড়লেও আওয়াজ পাওয়া যাবে। বর্ধমান স্টেশন রোড থেকে সিপিএমের জোনাল অফিস পর্যন্ত পথ ঢাকা পড়েছে জোড়াফুলের পতাকায়। সারা পথে সিপিএমের একটিমাত্র ফেক্স উঁকি মারছে।
গুসকরায় বোমাবাজি। মঙ্গলবার ছবি তুলেছেন অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
গণনা শেষ হওয়ার পরেই তালা পড়ে যায় সিপিএমের জোনাল অফিসে। অনেক ডাকাডাকির পর দফতরের দোতলা থেকে হলুদ রঙের ফতুয়া ও লুঙ্গি পড়ে নেমে এলেন সিপিএমের জোনাল সম্পাদক অচিন্ত্য মজুমদার। বললেন, “চারটে ওয়ার্ডে ছাপ্পা পড়ে যাওয়ার পর আমরা বোর্ড গঠন করতে পারব বলে চিন্তা করিনি। তবে আমরা আগের ফল ধরে রেখেছি।”
তবে, বোর্ড হারালেও সিপিএম অবশ্য এখানে বর্ধমান পুরসভার মত একেবারে মুছে যায়নি। ভোটের দিন গুসকরার বেনিয়াপুকুর এলাকার হিন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষ হয়। ওই এলাকার দু’টি ওয়ার্ডেই জিতেছে সিপিএম। উল্লেখ্যযোগ্য হল, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী মনোজ সাউ গুসকরা পুরসভার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে জিতেছেন। নিকটতম তৃণমূল প্রার্থীর সঙ্গে তাঁর ব্যবধান ৯৪২। আবার এই পুরসভার সব থেকে কম ভোটে যিনি জিতেছেন তিনিও সিপিএমের। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী রজত সরকার জিতেছেন মাত্র ১০ ভোটে। তিনি হারিয়েছেন বিশ্বম্ভর মণ্ডলকে। তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, গুসকরার শান্তিনগরে একটি জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীদের ক্ষোভ ছিল বিশ্বম্ভরবাবুর উপর। অন্য জায়গায় তুলনায় এই এলাকার তৃণমূল কর্মীরা বেশ মনমরা। গণনাকেন্দ্রেই তাঁরা বলছিলেন, “১৩ নম্বর ওয়ার্ডের অশান্তির জন্য আমরা ১৩ তে হারলামই, পাশের ১২ ওয়ার্ডেও হারলাম।” ভোটের আগে প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্য এসেছিল। বিদায়ী পুরপ্রধান চঞ্চল গড়াইয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়। নিত্যানন্দবাবুর অভিযোগ, চঞ্চল গড়াই তাঁর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারেও নেমেছিলেন। চঞ্চলবাবুর অনুগামীদের অবশ্য দাবি, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় প্রচারে এসে তাঁদের সমর্থিত নির্দল প্রার্থীকে ভোট দিতে বলেছিলেন।
‘কঠিন’ লড়াইয়ে জিতে গুসকরা রেল স্টেশনের পাশের আন্ডারপাসের কাছে বসে নিত্যানন্দবাবু বলেন, “মুকুল রায়কে দলের একাংশ ভুল বুঝিয়েছিল। আর পুরপ্রধান বা উপ পুরপ্রধান ঠিক করবে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল রায় ও সুব্রত বক্সী। আমি আজই কলকাতা চললাম।” পাশ থেকে নিত্যানন্দবাবুর অনুগামীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন, “কঠিন লড়াই করে দাদা জিতেছেন, দাদাকেই পদ দিতে হবে।” গুসকরার ‘ফুলনদেবী’ মল্লিকা চোংদারও ছাড়ার পাত্রী নন। তিনি বলছিলেন, “আমি সিপিএম আমল থেকে জিতছি। দলের হয়ে একা লড়াই করেছি। সবচেয়ে বেশি ভোটে জিতেছি। তাই পুরপ্রধান পদের জন্য অবশ্যই দাবি করব।”
কী বলছেন চঞ্চল গড়াই? দলীয় সূত্রে খবর, দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের দায়ে তৃণমূল থেকে একদা বহিষ্কৃত হলেও বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য দলে ফিরে আসেন তিনি। স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ চঞ্চলবাবুকেও পুরপ্রধান করার দাবি করছেন। তবে, পুরভোটে তৃণমূলের দায়িত্বে থাকা নেতারা, কিংবা জেলার মন্ত্রী মলয় ঘটক অবশ্য পুরপ্রধানের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ। তাঁরা জানিয়েছেন, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে দলের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ।
গুসকরা পুরসভার বাসিন্দাদের পানীয় জল থেকে নিকাশী ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা তৃণমূলের দখলে থাকে পূর্বতন পুরবোর্ডের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই ব্যাহত হয় গুসকরার পুরপরিষেবা। এ বার যেই পুরপ্রধান হোক স্থানীয় বাসিন্দারা কাজ চাইছেন। নতুন পুরপ্রধান সেই আশা পূরণ করতে পারেন কিনা এখন সেটাই দেখার।
পুরভোটে গুসকরা
ওয়ার্ড জয়ী ব্যবধান
রানু গায়েন (তৃণমূল) ৯৬
রত্না গোস্বামী (তৃণমূল) ১৪৭
নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায় (তৃণমূল) ২৯২
বুর্দ্ধেন্দু রায় (তৃণমূল) ৩২৮
অপসেনা বেগম(সিপিএম) ১০৮
রজত সরকার (সিপিএম) ১০
মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল (তৃণমূল) ১৯৩
মল্লিকা চোঙদার (তৃণমূল) ৪৯৬
চঞ্চল গড়াই (তৃণমূল) ২৭৮
১০ রাখী মাজি (তৃণমূল) ৩২৬
১১ গীতারানি ঘোষ (তৃণমূল) ৩৯২
১২ জয়প্রকাশ রায় (সিপিএম) ৯৬
১৩ মনোজ সাউ (সিপিএম) ৯৪২
১৪ চাঁদনীহারা মুন্সি (তৃণমূল) ২৯১
১৫ সনাতন বেসরা (তৃণমূল) ২৫২
১৬ বিকাশ বাগ্দি (সিপিএম) ৮৮



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.