পুজো শপিং আর ফ্যাশনে মেয়েদের একচেটিয়া অধিকারের দিন আর নেই।
শহরের নানা মল, দোকান, বাজারে চোখ রাখলেই বোঝা যায়, পুরুষেরাও প্রায় সমান তালেই টক্কর দিচ্ছেন। বেশ গুছিয়ে, ফ্যাশনে ‘ইন’ আর ‘আউটে’র খোঁজখবর করেই পুজো শপিংয়ের ময়দানে নামছেন তাঁরা। এমনকী অনেক সময়েই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে নানা দোকানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মন কাড়া পোশাকটির খোঁজে।
কয়েক বছর আগেও দর্জির কাছে থেকে বানিয়ে পোশাক পরার একটা চল ছিল। কিন্তু বিদেশি ব্র্যান্ড আর দেশি ব্র্যান্ডের চোখ ধাঁধানো শার্ট, টি-শার্টের বাজারে তা এখন অনেকটাই কোনঠাসা। এমনিতে সারা বছর শার্ট বা টি-শার্ট আর ট্রাউজারে ভর করেই কাটিয়ে দেন পুরুষেরা। কমবয়েসীদের ক্ষেত্রে তো, শীত, রোদ, বর্ষা ডেনিমই ভরসা। কিন্তু পুজোর চারটে দিন আয়নায় নিজেকে একটু অন্যরকম দেখলে মন্দ কী!
দুর্গাপুরের বেনাচিতির এক বস্ত্র বিপণীর মতে, ট্রাউজার আর পোশাকি শার্ট থেকে বছরভর যাঁরা রেহাই পান না পুজোর চার দিন চুড়িদার-কুর্তা, পাজামা-পাঞ্জাবি বা পাঠান স্যুটে কাটাতে পারেন তাঁরা। আর যাঁরা সাবেক ধুতিতে স্টাইল খুঁজে পান, রঙিন ধুতির সঙ্গে তাঁরা পরুন লিনেন বা খাদিতে সুতোর কাজ করা পাঞ্জাবি। আরেক বিপণীর কর্ণধার আবার বললেন, পুজোর চার দিন চার রকম পোষাক পরুন, যাতে বাকিরা আপনার রুচির আন্দাজ পায়। আর কে বলতে পারে, আপনার পোশাক দেখেই হয়তো মন আটকে গেল পুজো প্যান্ডেলের কোনও তরুণীর। |
দুর্গাপুরের একটি মলে সব্যসাচী ইসলামের তোলা ছবি।
|
ডিজাইনারদের পরামর্শ, সপ্তমীর সকালে কলা-বৌ আনতে যান সাদা ধুতি আর রঙিন পাঞ্জাবি পরে। সন্ধ্যায় পরুন হাল্কা রঙের কলার দেওয়া কুর্তি। অষ্টমীর সকালের জন্য রাখুন রঙিন ধুতির সঙ্গে খাদি বা তসরের পঞ্জাবি, সন্ধ্যায় পছন্দসই জমকালো পোশাক। নবমীর সকালে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার জন্য রাখুন জিন্সের সঙ্গে সুতোর কাজ করা সাদা শার্ট বা পাঞ্জাবি। আর সন্ধ্যায় ফেডেড, স্লিম ফিট, ক্যাসুয়াল ফিট বা রঙচটা জিনসে্ই হয়ে উঠুন নায়ক। দশমীতে অফ কালারের প্যান্টের সঙ্গে রঙিন টি-শার্ট, বিসর্জনের বেদনার মধ্যেও বয়ে আনবে উৎসবের ছোঁয়া।
দুর্গাপুরের এক কলেজ পড়ুয়া তুষার অগস্তি জানালেন, জিনস্ই তাঁর সবসময়ের সঙ্গী। আর পুজোয় জমকালো প্রিন্টের টি-শার্টের সঙ্গে পুরনো সঙ্গীই নতুন হয়ে উঠবে। ৭০ বছরের তরুণ রায়ের গলায় আবার অন্য সুর। গিন্নির সঙ্গে বাজারে বেড়িয়ে ঢাকাই জামদানির সঙ্গে পাল্লা দিতে জারদৌসি পাঞ্জাবি কিনে ফেলেছেন তিনি। বললেন, আরে এই চারদিনেই তো সেরা আনন্দ। জমকালো সাজ না হলে মানায়?
আসানসোলের বাজার ঘুরে দেখা গেল, ক্যাসুয়ালেই বেশি টান তরুণদের। লো ওয়েস্ট বা স্কিন ফিট জিনসে্র সঙ্গে লিনেন বা চেক শার্টেই ঝুঁকছেন তাঁরা। আসানসোল বাজারের অন্যতন পুরুষ পোশাক বিক্রেতা মহম্মদ সঈদ জানান, ‘সিম্পল লুক’ই বেশি পছন্দ ছেলেদের। বেশিরভাগ ক্রেতাই পছন্দ করছেন ‘সামার কালার্সে’র চেক শার্ট। আবার উজ্জ্বল একাধিক রঙের শার্টেরও চাহিদা রয়েছে। অপেক্ষাকৃত বয়স্কদের পছন্দ আবার, ক্যাসুয়াল স্ট্রাইপ শার্ট ও ট্র্যাডিশনাল প্যান্ট। শিল্পাঞ্চলের এক হাসপাতালের চিকিৎসক অরিদীপ বরাট জানালেন, বছরভরই তো কর্মসূত্রে পশ্চিমী পোশাক পড়তে হয়। তাই পুজোর অন্তত দুটো দিন সাবেক সাজে কাটাতে চান। এই ধরণের চাহিদা মেটাতে দোকানে রয়েছে তসরের পাঞ্জাবি থেকে খাদির কুর্তা সবই। |