রাজ্যে ক্ষমতার পালাবাদলের পরে সিটু ও আইএনটিইউসি সমর্থক বহু ঠিকাকর্মীকে ডিএসপি-র কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার বিক্ষোভ দেখাল আইএনটিইউসি। তাঁদের দাবি, ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ নিয়ে স্পষ্ট নীতি না থাকায় এই ধরণের ঘটনা ঘটেছে।
ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বাম আমলেও সিটু ও আইএনটিইউসি-র মধ্যে খুচখাচ অশান্তি হত। তবে কারখানার কাজে তেমন কোনও প্রভাব পড়ত না। কিন্তু সরকার বদলের পরে আইএনটিটিইউসি’র প্রভাব বেড়েছে। আগে ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ নিয়ে সিটু ও আইএনটিইউসি-র মধ্যে অলিখিত বোঝাপড়া ছিল। কিন্তু আইএনটিটিইউসি তাতে ভাগ বসাতেই সমস্যা বাড়ে। সিটু ও আইএনটিইউসি অভিযোগ তোলে, তাদের সমর্থক বহু ঠিকা শ্রমিককে কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানায় শ্রমিক নিয়োগের স্পষ্ট নীতি নেই বলেও তাঁদের অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে প্রথমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুরে এলে কাজহারা শ্রমিকরা প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখান। সিটুর পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে রাজ্যপালের কাছে দরবারও করা হয়। |
চলছে আইএনটিইউসি-র সমাবেশ। মঙ্গলবার দুর্গাপুর ডিএসপি গেট সংলগ্ন এলাকায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
|
সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে আইএনটিইউসি-র পক্ষ থেকে একটি কনভেনশনও আয়োজন করা হয়। আইএনটিইউসি অনুমোদিত দুর্গাপুর কন্ট্রাক্টর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, “কোনও শ্রমিক সংগঠনের হাতেই ঠিকা শ্রমিক নিয়োগের অধিকার থাকা উচিত নয়। তাহলেই সমস্যা অনেকখানি মিটে যাবে।” আইএনটিইউসি অনুমোদিত হিন্দুস্থান স্টিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সহ-সম্পাদক দেবাশিস চৌধুরীও জানান, ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ নিয়ে আইএনটিইউসি,আইএনটিটিইউসি এবং ঠিকা সংস্থারগুলির মধ্যে ২০১২ সালের ১৮ জুন একটি চুক্তি হয়। তবে “আইএনটিটিইউসি সেই চুক্তি একতরফা ভাবে ভেস্তে দিয়েছে” বলে তাঁর দাবি। তিনি জানান, বাকি সব সংগঠনের সমর্থক ঠিকা শ্রমিকদের সরিয়ে দিয়ে সেই জায়গায় একতরফা আইএনটিটিইউসি সমর্থকদের কাজ দেওয়া হচ্ছে। আইএনটিইউসি-র দাবি, ‘কোর গ্যাং’ পদ্ধতিতে অর্থাৎ দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার সরাসরি ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ করা বন্ধ করতে হবে। তাঁদের অভিযোগ, শ্রম আইন অনুযায়ী তাঁরা বেতন পান না। পিএফ, ইএসআইয়ের মতো অন্যান্য সুবিধারও বালাই নেই। এই সমস্ত অভিযোগ ও দাবি নিয়েই এ দিন ডিএসপি কারখানার গেটে অবস্থান বিক্ষোভ করেন আইএনটিইউসি সদস্য সমর্থকরা। সংগঠনের নেতাদের দাবি, সব ধরণের নিয়োগ এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে করতে হবে। এছাড়া দীর্ঘদিন কাজ করার পর যে সমস্ত ঠিকা শ্রমিককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের ফিরিয়ে আনার দাবিও তোলা হয়। বিক্ষোভ চলাকালীন কারখানা কর্তৃপক্ষের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন সংগঠনের নেতারা। সিটু জেলা সভাপতি বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তী বলেন, “রাজ্যে পালাবদলের পরে প্রায় ৩ হাজার সিটু সমর্থক ঠিকা শ্রমিক ডিএসপি থেকে কাজ হারিয়েছেন। এছাড়া বেতনের একটা অংশ কেটে নিচ্ছেন শাসক দলের সংগঠনের নেতারা। বঞ্চিত হচ্ছেন শ্রমিকরা।” তবে আইএনটিটিইউসি আইএনটিইউসি বা সিটু কারও অভিযোগই মানতে চায়নি। সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগ একেবারে মিথ্যা। এসব বাম আমলে হতো। এখনও যদি তাই হবে তাহলে কারখানায় ঠিকা শ্রমিকদের বাকি সংগঠনগুলির অস্তিত্ব রয়েছে কি ভাবে?” |