পুজো এল কাছে
মুক্তি চাই, বড়দেবীর কাছে প্রার্থনা শিল্পীর
ড়ের প্রতিমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন পূণেশ্বর। তাঁর চোখের দৃষ্টি দেবীর পা ছুঁয়ে যাচ্ছে বারবার। চোখ কখনও ছল ছল করে উঠছে। কখনও দু-একফোঁটা জল বার হয়ে আসছে। চোখ মুছে আবার কাজে হাত দিচ্ছেন তিনি। দেবীর পা দুটো, হাত খড় দিয়ে বেঁধে দিচ্ছেন। বলছেন, “এই নিয়ে ছয় পুরুষ ধরে আমরা দেবীর মূর্তি তৈরি করছি। আমার বাপ, ঠাকুর্দা করেছেন। এখন আমি আর আমার ভাই। এই ভাবে কিন্তু সংসার চলে না। একবেলা পেট ভরে খেতে পাই। আরেক বেলা আধপেটা খেয়ে থাকতে হয়। কেউ আমাদের দিকে তাকায় না। দেবীর দিকে বারবার হাত জোড় করে তাই এই অবস্থা থেকে মুক্তি চাইছি।”
পূর্ণেশ্বর চিত্রকর। কোচবিহার বড় দেবীর মূর্তি তৈরির শিল্পী। বনচুকামারির বাসিন্দা পূর্ণেশ্বরবাবু জানান, আমাদের এক পূর্ব পুরুষকে কোচবিহারের রাজা ডেকে আনেন বড় দেবীর মূর্তি তৈরির জন্য। সেই যে শুরু হয়েছে, তার পর থেকে চিত্রকর পরিবার বংশানুক্রমে বড় দেবীর মূর্তি তৈরি করে আসছেন। এক সময় অনেক জমি জমাও ছিল। ধীরে ধীরে সব চলে গিয়েছে। ভিটেমাটি ছাড়া কিছু নেই বললেই চলে। দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড পূণেশ্বরবাবুকে একটা অস্থায়ী চাকরি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “বেতন পাই মাসে তিন হাজার টাকা। যা দিয়ে চার জনের সংসার চালাতে হয়। তাই একবার মূর্তি তৈরি ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। আবার ফিরে এসেছি।” ট্রাস্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, বড় দেবী বাড়ির পুজো নিয়মনিষ্ঠা সহকারে হয়। চিত্রকর পরিবার যেমন মূর্তি তৈরি করেন সে রকমই একই পরিবারের পুরোহিত ওই পুজো করে আসছেন। জনশ্রুতি আছে, এক সময় অষ্টমীর রাতে নরবলি দেওয়া হত পুজোয়। বিভিন্ন কারণে সেই নরবলি প্রথা উঠিয়ে দিতে হয়েছে। কিন্তু বড় দেবীকে নররক্ত দেওয়ার প্রথা এখনও চালু রয়েছে। এ বার কোচবিহার শহর লাগোয়া কালজানি এলাকার বাসিন্দা শিবেন রায় দেবীকে রক্ত দেবেন। বংশপরম্পরায় শিবেনবাবুর পরিবারের কেউ না কেউ দেবীর পুজোয় রক্ত দিচ্ছেন।
পূর্ণেশ্বরবাবু জানিয়েছেন, প্রতিমা তৈরির কাজে কোনও পারিশ্রমিক মেলে না। ১৫ বছরের ছেলে প্রভাকর এবং খুড়তুতো দাদা মূর্তি তৈরিতে সাহায্য করেন। ওঁদের প্রতিদিন ২০০ টাকা করে পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। ৪২ দিন কাজ হয়। কিছু পারিশ্রমিক এ বার বাড়বে। কিন্তু আমি মাস মাইনে ছাড়া কিছুই পাইনি। কোচবিহারের মহকুমাশাসক তথা দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্য বিকাশ সাহা বলেন, “এ বারে শ্রকিকদের পারিশ্রমিক দ্বিগুণ করে দেওয়া হয়েছে। বোর্ডের কর্মীদেরও পারিশ্রমিক বাড়ানো নিয়ে কথা চলছে। পুজোর আগেই হয়ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.