ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়াচ্ছে জলপাইগুড়ি, বালুঘাট, কোচবিহারের বিভিন্ন এলাকাতেও। অথচ ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজে স্বাস্থ্য দফতর এবং স্থানীয় প্রশাসনের তরফে কোথাও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে শিলিগুড়ির বিভিন্ন ওয়ার্ডে স্বাস্থ্য দফতরের শিবিরও পর্যাপ্ত হচ্ছে না বলে অভিযোগ। তাতে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে জ্বরে আক্রান্তদের। অভিযোগ, অথচ তাঁদের সকলকে হাসপাতালে ভর্তি করানো সম্ভব হচ্ছে না। অনেককে যথাযথ চিকিৎসা না করিয়েই পরামর্শ দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ওয়ার্ডগুলিতে শিবির হলে সেখানে ডেঙ্গির জন্য রক্ত পরীক্ষা করানো সম্ভব হত। ডেঙ্গি হয়েছে কি না তা জেনেই হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা করানো যেত। |
অগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে শিলিগুড়িতে ডেঙ্গির সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করলেও এতদিন পর তা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য দফতর, পুরসভা এবং প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। সোমবার শিলিগুড়ির সার্কিট হাইজে জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং জেলাস্বাস্থ্য দফতর, পুরসভার আধিকারিকদের, দুই জেলার প্রশাসন, শিলিগুড়ি মহকুমা শাসকের দফতরের এক আধিকারিককে নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজে স্বাস্থ্য দফতর, পুরসভা আলাদা ভাবে নিজেদের খুশি মতো কাজ করছে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কাজে স্বাস্থ্য দফতর, পুরসভার কাজে সমন্বয়ের অভাব নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে কমিটি গড়ে তা মিটবে বলে আশাবাদী প্রশাসনের কর্তারা। শিলিগুড়ির অতিরিক্ত জেলাশাসক পি টি শেরপা বলেন, “বিভিন্ন দফতরের মদ্যে সমন্বয় রেখে কাজ করার জন্য এ দিনের বৈঠকে একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। সপ্তাহে এক দিন তারা পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করবেন। ডেঙ্গি ছাড়াও চিকনগুনিয়া, ম্যালেরিয়ার মতো রোগের বাহক নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারেও ওই কমিটি কাজ করবে।” |
দার্জিলিং জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক জানান, স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক যাঁরা রয়েছেন তাতে ওয়ার্ডগুলির সব ক্ষেত্রে শিবির করা সম্ভব নয়। তবে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় শিবির করা হয়েছে। পুরসভাকে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে আও তৎপর হতে নিদের্শ দেওয়া হয়েছে। নির্মাণ কাজের জায়গায় জল জমে থাকলে সংশ্লিষ্ট নির্মাণকারী সংস্থার বিরুদ্ধে জরিমানা করার বিষয়টি পুর কর্তৃপক্ষকে দেখতে বলা হয়েছে। ঠিক হয়েছে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে পুরসভার আইপিপি-৮ প্রকল্পের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতা প্রচারের কাজ করবেন। মাসের শুরুতে পাঁচ দিন ওই কাজ করা হলেও পরিস্থিতির কথা ভাবে আগামী মাসের ওই কর্মসূচি এগিয়ে আনা হয়েছে। তা ছাড়া সচেতনতা প্রচারের কাজে গিয়ে জল জমে রয়েছে দেখলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে পুলিশ যাবে। কোথাও একযোগে ডেঙ্গি হচ্ছে জানা গেলে সেই সমস্ত এলাকায় শিবির করা হবে। এ দিন শিলিগুড়ির খালপাড়ার নিষিদ্ধপল্লিতে মশার লার্ভা মারার তেল স্প্রে করা হয় বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যের উদ্যোগে।
ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে বালুরঘাট হাসপাতালে ৬ জন ভর্তি রয়েছেন। গত কয়েকদিনে বালুরঘাট এবং তপন এলাকা থেকে জ্বরে আক্রান্ত ৩০ জনকে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছেন। তাদের মধ্যে বালুরঘাটের পুলিশ লাইন এলাকার ২ জন, চিঙ্গিশপুরের ২ জন, পতিরাম এলাকার ১ জন এবং তপন ব্লকের ১ জনের রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবানু মিলেছে। বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে তারা রক্ত পরীক্ষা করিয়েছেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কাজল মণ্ডল বলেন, “এ দিন বালুরঘাট হাসপাতালে ডেঙ্গি জীবানু নির্ণায়ক ম্যাক অ্যালাইজা পরীক্ষার যন্ত্র আনা হয়েছে। তাতে এখন থেকে হাসপাতালেই ওই পরীক্ষা হবে।” জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে আক্রান্ত এলাকাগুলিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন।
ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে শিলিগুড়ির হরেন মুখোপাধ্যায় রোডে নার্সিংহোমে ভর্তি রয়েছেন দিনহাটার বাসিন্দা ভবেশ বর্মন। কৃষিজীবী ভবেশবাবু সপ্তাহখানেক আগে থেকেই জ্বরে আক্রান্ত। এর পর দিনহাটা হাসপাতালে ও কোচবিহার এমজেএন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাও করান। ডেঙ্গি আক্রান্ত জানার পর সেখান থেকে তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এক দিন শয্যা না মেলায় করিডরে চূড়ান্ত অব্যবস্থার মধ্যে থাকতে হয়। এর পরেই তাঁকে পরিবারের লোকেরা ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করান। কোচবিহারে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যুও হয়েছে। আক্রান্তকে অনুচক্রিকা দেওয়ার ক্ষেত্রেও রোগীর পরিবারের লোকদের অনেক ক্ষেত্রেই হেনস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া অন্য সরকারি হাসপাতালে অনুচক্রিকা মিলছে না। বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির উপরই নির্ভর করতে হচ্ছে রোগীর পরিবারের লোকদের। বাইরে থেকে প্রতি ইউনিট অনুচক্রিকা ১৩০০-১৫০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে বলে রোগীর লোকেরা জানান। ডেঙ্গি নির্ণয়ে রক্ত পরীক্ষায় নার্সিংহোমগুলিতে ১২০০-১৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
|