এই সময়ের রোগ
অসুস্থ ৪০ জন, রাজারহাটে আন্ত্রিক-আতঙ্ক
রা বর্ষায় আন্ত্রিক রোগ ছড়িয়েছিল হাওড়ার কিছু এলাকায়। শরতে সেই রোগের প্রকোপ শুরু হয়েছে রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা এলাকায়। আন্ত্রিকের দাপটে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সেখানকার ১৫ এবং ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে। রবিবার রাত থেকে ওই দু’টি ওয়ার্ডের অন্তত ৪০ জন বাসিন্দা এই রোগের কবলে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৬ জন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুরসভার পাইপ ফেটে পানীয় জলে সংক্রমণের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে।
বর্ষা তো বটেই, শরতেরও অনেকটাই পেটের রোগের মরসুম। এবং জলবাহিত জীবাণুই সেই রোগের মূলে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সাধারণ আন্ত্রিকের পাশাপাশি ইদানীং বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণে এক ধরনের ডায়েরিয়া হচ্ছে। চিকিৎসা পরিভাষায় সেটার নাম ভাইরাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস। এ ক্ষেত্রে বমি এবং পাতলা পায়খানার সঙ্গে সঙ্গে মাথা এবং পেটে ব্যথা হয়। এক বার আক্রান্ত হলে সাধারণ ভাবে সপ্তাহখানেক এর প্রকোপ থাকে।
আন্ত্রিক বা ডায়েরিয়া, পেটের রোগের অন্যতম কারণ জলদূষণ। জীবাণু বা ভাইরাসের সংক্রমণে মূল ভূমিকা নেয় জলই। যেটা ঘটেছে রাজারহাটেও। পুরসভা সূত্রের খবর, রাজারহাটের ওই দু’টি ওয়ার্ডের জল সরবরাহকারী পাইপে ফাটল ধরেছিল। সেখান থেকেই দূষিত জল পানীয় জলে মিশে যায়। তার ফলেই ওই এলাকার বাসিন্দারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রবিবার বিকেল থেকেই কল থেকে দুর্গন্ধযুক্ত নোংরা জল বেরোচ্ছিল। তা দেখে অনেকেরই সন্দেহ হয়। রাত হতেই এলাকার কয়েক জন বাসিন্দা পায়খানা-বমি করতে শুরু করেন। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে। মানব মণ্ডল নামে ওই এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “রাত ১০টা নাগাদ আমার পাশের বাড়ির একটি বাচ্চা ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তা পাড়ার বিভিন্ন বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে।” রাতেই ৩৬ জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে ১০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
উপসর্গ
কী করতে হবে
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র সুমন বিশ্বাস জানান, হাসপাতালে ভর্তি সব আন্ত্রিক রোগীর অবস্থাই স্থিতিশীল। তিনি বলেন, “১৬ নম্বর ওয়ার্ডের অর্জুনপুর থেকেই বেশি রোগী এসেছেন। ওই ওয়ার্ডে জেলার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিৎসা শিবির বসিয়েছেন। সব দিক থেকেই সতর্কতার ব্যবস্থা হয়েছে।” তবে পুর-কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলে এ দিন বিকেলেই পুরসভার সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পুরসভা জানায়, জলের পাইপে ফাটলটি চিহ্নিত করা গিয়েছে। তা সারানোর কাজ শুরু হয়েছে। ওই দু’টি ওয়ার্ড এবং তার আশেপাশে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হচ্ছে।
পেটের রোগ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী তথা রাজারহাটের বিধায়ক পূর্ণেন্দু বসু এ দিন আক্রান্ত এলাকার কয়েকটি বাড়িতে যান। তাঁর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই ওই এলাকায় জলের পাইপ লাইনে সমস্যা রয়েছে। সারানোর ব্যবস্থা করেনি পুরসভা। এমনকী যে-ইঞ্জিনিয়ারের বিষয়টি দেখার কথা, তিনি এলাকায় আসেনই না। রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। রক্ষণাবেক্ষণে কোনও সমস্যাই নেই। তা ছাড়া এখানে এমন ঘটনা এই প্রথম। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি।”
চিকিৎসকদের মতে, গরমের শেষ আর শীত আসার আগের সময়টাতেই আন্ত্রিকের প্রাদুর্ভাব ঘটে। সাবধান না-হলে তা ভয়াবহ আকার নিতে পারে। শুধু রাজারহাট নয়, কলকাতার বিভিন্ন এলাকা থেকেই পেটের অসুখ নিয়ে বহু রোগী এই মুহূর্তে আইডি-তে ভর্তি রয়েছেন। গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরী জানান, এটা পুরোপুরি জলবাহিত রোগ। পানীয় জলে কোনও সংক্রমণ হলে তা থেকে এই রোগ ছড়ায়। এই অসুখে মানুষ এতটাই কাহিল হয়ে পড়েন যে, ১০-১২ দিনের আগে স্বাভাবিক কমর্ক্ষমতায় ফেরা সম্ভব হয় না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.