অব্যবস্থার জন্য অযোধ্যায় গিয়েও ফিরলেন মমতা
শেষ পর্যন্ত অযোধ্যা পাহাড়ে রাত্রিবাস করা হল না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বরং এক ‘নিদারুণ’ অভিজ্ঞতা হল তাঁর। মমতা দেখলেন ও বুঝলেন, অযোধ্যা পাহাড়ের মতো এক ঘোষিত পর্যটন কেন্দ্রে সরকারি ব্যবস্থায় রাত্রিবাসের পছন্দসই পরিস্থিতি এখনও নেই। যা আছে তা আর যাই হোক, পর্যটকদের কাছে আদৌ স্বস্তিদায়ক নয়।
অথচ, আজই পুরুলিয়া জেলা পরিষদ ভবনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠকে এখানকার বিভিন্ন পর্যটনস্থলের আকর্ষণ তুলে ধরার ব্যাপারে কথা হয়। জেলা প্রশাসনের তরফে লিফলেট ছাপিয়ে বলা হয়েছে, অযোধ্যা পাহাড় পর্যটক টানার এক প্রধান ঠিকানা। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রীর অগ্রাধিকারের তালিকায় পর্যটন অন্যতম। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর বাস্তব অভিজ্ঞতা হল, অযোধ্যা পাহাড়ের আপার ড্যামে জনস্বাস্থ্য কারিগরির অতিথিশালা নিতান্তই কাজ চালানো গোছের। মোবাইলের সংযোগও সেখানে মেলে না।
অযোধ্যাপাহাড়ের নীচে পুরুলিয়া পাম্পড স্টোরেজ প্রকল্প লাগোয়া লহরিয়া
ময়দানে আজ মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভা। সোমবার সেই
সভাস্থল ঘিরে পুলিশের কড়া পাহারা। সোমবার ছবিটি তুলেছেন প্রদীপ মাহাতো।
পুরুলিয়া শহর থেকে বিকেল চারটেয় রওনা দিয়ে অন্তত তিন ঘণ্টার যাত্রায় মমতা যখন অযোধ্যা পাহাড়ে পৌঁছলেন, তখন রাত নেমেছে। থাকার অব্যবস্থা, অচল মোবাইল সব মিলিয়ে সেখানে রাত্রিবাসের আর কোনও আগ্রহ তাঁর ছিল না। পত্রপাঠ তাঁর কনভয় নেমে আসে ১৫ কিলোমিটার দূরে বাঘমুণ্ডিতে, পুরুলিয়া পাওয়ার স্টেশন প্রজেক্টের অতিথিশালায়। কাল এখান থেকে কিছু দূরে তাঁর দিনের প্রথম কর্মসূচি।
ঝাড়খণ্ড লাগোয়া অযোধ্যা পাহাড় ও সংলগ্ন এলাকায় কিছু দিন আগেও মাওবাদীদের যথেষ্ট দাপট ছিল। কিন্তু, জঙ্গলমহলকে শান্ত করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াস এবং এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে এই এলাকায় তৃণমূলের শক্তিবৃদ্ধি মাওবাদীদের বেশ কোণঠাসা করেছে বলে ওয়াকিবহাল মহলের দাবি। এই পরিস্থিতিতে অযোধ্যা পাহাড়ে রাত্রিবাস করে জঙ্গলমহলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁর দৃঢ় অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছিলেন মমতা। কারণ, এর আগে আর কোনও মুখ্যমন্ত্রী এখানে রাত্রিবাস করেননি। কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থায় তা আর হল না। যদিও তিনি যেখানে আছেন সেই বাঘমুণ্ডিও এক সময়ে মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল বলে পরিচিত ছিল। কয়েক বছর আগে এই থানার তৎকালীন ওসি-কে অপহরণও করে মাওবাদীরা।
দাপট কমলেও ঝাড়খণ্ড থেকে এই এলাকায় মাঝেমধ্যেই মাওবাদীরা পালিয়ে ঢুকে পড়ে বলে খবর। মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরের চার-পাঁচ দিন আগে মাওবাদীদের চারটি স্কোয়াড এই এলাকায় ঢুকেছে বলে রাজ্য প্রশাসনের কাছে খবর পৌঁছয়। কলকাতা ছাড়ার আগে সে কথা জানতেও পারেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু অযোধ্যায় রাত্রিবাসের পরিকল্পনা থেকে তিনি সরেননি।
পুরুলিয়া থেকে অযোধ্যা যাওয়ার পথে মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার। ছবি: সুজিত মাহাতো।
পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী অবশ্য গত কাল রাতে ওই এলাকা জুড়ে ব্যাপক চিরুনি তল্লাশি চালায়। কয়েক জনকে ধরাও হয়। আজ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে সে কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষ যদি তার জীবনযাপনে ন্যূনতম প্রয়োজনগুলি না মেটাতে পারে, তখন সেই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মাওবাদীদের মতো সংগঠনগুলি মাথাচাড়া দেয়। তাই এই সব এলাকায় উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি কর্মসূচিগুলি যাতে ঠিকঠাক কার্যকর হয় এবং মানুষ তার সুযোগ পায় সেটা প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও জানান, বর্ষার জঙ্গল উগ্রপন্থীদের আনাগোনা বা লুকিয়ে থাকার পক্ষে আদর্শ। সে দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে।
মমতার জমানায় জঙ্গলমহলের এই অঞ্চলের মানুষ যে যথেষ্ট খুশি তার প্রমাণ মিলেছে তাঁর সফরের পথে। পুরুলিয়া শহর থেকে তাঁর গাড়ি যতই এগিয়েছে ততই বেড়েছে মানুষের ঢল। বলরামপুরে গোটা শহরটাই যেন নেমে আসে রাস্তায়। বাঘমুণ্ডিতে, অযোধ্যা পাহাড়ের রাস্তায় আবালবৃদ্ধবণিতা ধামসা-মাদল-শাঁখ বাজিয়ে, উলুধ্বনি দিয়ে, ধূপ জ্বেলে আরতি করে তাঁকে স্বাগত জানায়। চিরাচরিত পোশাকে সাঁওতালি মেয়েদের নাচতে দেখা যায় একাধিক জায়গায়। অনেক জায়গায় স্কুলের ছেলেমেয়েরা ইউনিফর্ম পরে রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে। বার বার গাড়ি থামিয়ে মমতা জনতার সঙ্গে হাত মেলান। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে জানতে চান, তাঁদের কোথাও কোনও অসুবিধা আছে কি না।
সকলেই পরিকাঠামোর উন্নতির কথা বলেন। তাঁদের আশা পূরণের আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী।
তাঁর নেমে আসার পথে ফের ভিড় করেছিলেন স্থানীয় মানুষজন। চোখে বিস্ময়। থাকতে গিয়ে হঠাৎ তিনি ফিরতি পথে কেন? মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বলে যান, “কাল সভায় আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে।”

কী বললেন মমতা
• এপ্রিল মাস থেকে এখনও পর্যন্ত ১০০ দিনের প্রকল্পে ১৮ দিন কাজ হয়েছে। কাজের গতি বাড়াতে জেলাশাসককে নির্দেশ।
• আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিদের ঘরে বসে থাকলে হবে না। ঘুরে ঘুরে গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত কাজ করতে হবে।
• পাট্টা বিলির কাজ সন্তোষজনক নয়। ভূমি আধিকারিকের কাছে কারণ জানতে চাইলেন। আরও ভাল কাজের নির্দেশ।
• কিষান ক্রেডিট কার্ডে জেলায় আড়াই লক্ষ উপভোক্তার মধ্যে মাত্র ৬৬ হাজার জন কার্ড পেয়েছেন। গতি বাড়াতে মহাকরণের এক কর্তাকে দায়িত্ব।
জেলার মাটি শুকনো। তাই পেঁয়াজ চাষে গুরুত্ব দিতে বললেন। সঙ্গে শিমূল, লাক্ষা চাষেও গুরুত্ব।
• ১ কিলোমিটারের মধ্যে প্রাইমারি স্কুল না থাকলে জন প্রতিনিধিদের জেলাশাসককে জানানোর নির্দেশ।
• অনেক জায়গায় আইসিডিএসের বাড়ি নেই। যিনি জমি দিতে চান, সেই কেন্দ্র তাঁর পছন্দের নামে করা হবে।
• ট্যুরিজমের ম্যাপ তৈরি করার নির্দেশ দিলেন জেলাশাসককে। পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। পর্যটক আবাসগুলিকে পরিচ্ছন্ন রাখার উপরে গুরুত্ব।
• পর্যটন কেন্দ্রগুলির আকর্যণ বাড়তে কটেজ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অযোধ্যা ও জয়চণ্ডী পাহাড়ে যুব আবাস তৈরি হচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান।
• বছরে ১০০ দিনের কাজের গতি বাড়ানোর নির্দেশ। ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে সেই কাজ শুরু হবে। দুর্গাপুজোর পরে আবার ৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কাজটা চলবে।
• আগামী দিনে লাক্ষার ক্লাস্টার গড়ার সিদ্ধান্ত। (জেলাশাসক জানিয়েছেন, রাঁচির কেন্দ্রীয় লাক্ষা গবেষণা কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞদের কাছে পরিকল্পনা চাওয়া হয়েছে।)
• বাঁকুড়া থেকে পুরুলিয়া ৬০-এ জাতীয় সড়ক চওড়া করা হবে।
• যে জনপদগুলিতে একশোর বেশি লোক রয়েছে, সেগুলিকে বড় রাস্তার সংযুক্ত করতে হবে।
• চলতি বছর ডিসেম্বর মাসের মধ্যে দারিদ্র সীমার নীচে থাকা মানুষদের বিদ্যুৎ সংযোগ দিতেই হবে বলে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ৬-৮ মাসের মধ্যে বাকি এপিএল-দের বাড়িতেও বিদ্যুৎ।
• মানবাজার, কোটশিলা ও রঘুনাথপুরে তিনটি স্বল্পমূল্যের ওষুধের দোকান খোলা হবে।
• পুরুলিয়ায় একটি ট্রমা কেয়ার সেন্টার করা হচ্ছে। জেলায় স্বল্পমূল্যের ডায়াগনিস্টক সেন্টার চালু করা হবে।
• মানবাজার ২ ও পুরুলিয়া ১ তে ডিগ্রি কলেজ হবে।
• কলকাতার সঙ্গে পুরুলিয়ার পর্যটন কেন্দ্রগুলির সরাসরি যোগাযোগ করতে জয়চণ্ডী ও অযোধ্যা থেকে বাস চালু হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.