মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরেছে। মাওবাদীদের এক সময়ের অবাধ বিচরণ ভূমি অযোধ্যা পাহাড়ে আসার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছিলেন তিনি। এ বার শুধু পুরুলিয়া সফরই নয়, অযোধ্যা হিলটপে রাত্রিবাসও করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রী রাত কাটাবেন এখানে। তাতে অবশ্যই খুশি স্থানীয় মানুষ। তবে ঘুম উড়েছে পুলিশ-প্রশাসনের। নিরাপত্তায় কোনও ফাঁক রাখতে চাইছেন না তাঁরা। ক’দিন ধরে পাহাড়ের রাস্তায়, জঙ্গলে জোর তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশের বিভিন্ন বাহিনী। পাহাড়চুড়ো থেকে পাহাড়তলি কার্যত কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে পড়ে থাকছেন রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত বলেন, “জায়গাটা তো অযোধ্যাপাহাড়। আর এই প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রী এখানে রাত্রিবাস করবেন। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।” |
আজ, সোমবার পুরুলিয়ায় উন্নয়ন-সংক্রান্ত বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে তিনি অযোধ্যা পাহাড়ে রওনা দেবেন, এমনটাই জানাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কয়েক বছর আগে পুরুলিয়া পাম্প স্টোরেজ প্রকল্পের উদ্বোধন করতে অযোধ্যা পাহাড়ে উঠেছিলেন (তখন অবশ্য মাওবাদীদের বাড়বাড়ন্ত ছিল না)। তবে এই প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রী অযোধ্যা পাহাড়ে রাত্রিবাস করতে আসছেন।
তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় আসার আগের কয়েকটা বছর এখানকার পরিস্থিতি ছিল অন্য রকম। পাহাড়তলি থেকে পাহাড়চুড়ো-- সে সময়ে গোটা এলাকাই ছিল কার্যত মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল। মাওবাদীদের একটা গোটা প্ল্যাটুন সক্রিয় ছিল এখানে। একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছিল। ঘন জঙ্গলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলত মাওবাদী-যৌথবাহিনীর গুলির লড়াই। আতঙ্কে দিন কাটত স্থানীয় মানুষের। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেই মাওবাদীদের হাতে খুন হন দলের তিন নেতা-কর্মী। মাওবাদীদের বিচ্ছিন্ন করতে একজোট হতে শুরু করেন অযোধ্য পাহাড়-লাগোয়া বলরামপুরের বহু মানুষ। তাতে শাসক দলেরও ভূমিকা ছিল। সেই সঙ্গে জারি ছিল পুলিশি অভিযান। এই সাঁড়াশি চাপে ক্রমে অযোধ্যা পাহাড় থেকে পিছু হঠতে থাকে মাওবাদীরা। মাওবাদীদের অযোধ্যা স্কোয়াড গড়ার হোতা তথা সংগঠনের শীর্ষ নেতা বিক্রম ওরফে অর্ণব দাম ২০১২ সালের ১৭ জুলাই গ্রেফতার হন। এরপরেই বন্ধ হয়ে যায় এই এলাকার নাশকতামূলক কাজকর্ম। পরবর্তীতে মাওবাদীদের রাজ্য মিলিটারি কমিশনের সম্পাদক রঞ্জিত পাল-সহ আরও দু’এক জনকে পাহাড়ের কয়েকটি গ্রামে দেখা গিয়েছিল বলে খবর পান গোয়েন্দারা। তলানিতে ঠেকে যাওয়া সংগঠনকে চাঙ্গা করতে একদা লিঙ্কম্যানদের সাহায্যে মাওবাদীরা সেই চেষ্টা শুরু করে। এই তথ্যই ভাবাচ্ছে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের।
তবে মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে অনেক কথা বলার ইচ্ছা পাহাড়বাসীর। পাহাড়ের এক বাসিন্দা বেণু সেন বলেন, “আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে বাহা নাচের মাধ্যমে স্বাগত জানাব।” তিনি জানালেন, যদিও স্থানীয় মানুষ ২ টাকা কিলো দরে চাল পাচ্ছেন, তবুও পাহাড়ের গ্রামগুলি এখনও অনুন্নয়নের অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। সে সব কথাই মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি জানাতে চান পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র মানুষগুলো। |