জেলা সফরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য প্রশাসনের কর্ণধারকে কাছে পেয়ে আদ্রাকে পুরোদস্তুর থানা হিসাবে গড়ার কাজ দ্রুত রূপায়িত করতে সবুজ ইঙ্গিত পেতে চাইছে জেলা পুলিশ-প্রসাসন।
কয়েক মাস আগে পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী আদ্রার তদন্তকারী কেন্দ্রকে পুরোদস্তুর থানা হিসাবে গড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তারপরে প্রশাসনিক স্তরে উদ্যোগ সেই অর্থে গতি পায়নি। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের আগে বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের মতামত আগেই রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে একাধিকবার জমা পড়েছে। তার পাশাপাশি এ বার বিচার বিভাগের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, রাজ্য আইন মন্ত্রকের শীর্ষস্তর থেকে রঘুনাথপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের কাছে ওই বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে রঘুনাথপুরের এসিজেএম পুলিশ, ভূমি দফতর, রঘুনাথপুর ১ ও কাশীপুর ব্লকের বিডিওদের নিয়ে আলোচনা করেন। |
জেলার মধ্যে বিভিন্ন নিরিখে যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে রেলশহর আদ্রার। জঙ্গলমহলের কিছু থানায় এক সময়কার মাওবাদী সমস্যা বাদ দিলে জেলার মধ্যে ‘ক্রাইম রেট’-এ আদ্রা বরাবরই উপরের দিকে থাকে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে আদ্রাকে পূর্ণাঙ্গ থানা হিসাবে গড়ার কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বর্তমানে আদ্রায় শুধু একটি তদন্তকারী কেন্দ্র রয়েছে। তা রয়েছে কাশীপুর থানার আওতায়। এখানে পুলিশ কর্মীর সংখ্যা ৩৫। ওই তদন্ত কেন্দ্রের আওতায় রয়েছে রেলশহর-সহ কাশীপুর ব্লকের বেকো ও গগনাবইদ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। কমবেশি দুই লক্ষাধিক বাসিন্দার বাস এখানে। এই এলাকায় রয়েছে সাতটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল ও তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা।
বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে আদ্রাকে থানা হিসাবে গড়ার কাজ শুরু হলেও বাস্তবায়িত হয়নি। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক সফরে এসে পুরুলিয়া মফস্সল থানার হুটমুড়ায় প্রশাসনিক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদ্রাকে পুরোদস্তুর থানা হিসাবে গড়ার ঘোষণা করেন। আশা জেগেছিল পুলিশ প্রশাসন-সহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষদের মধ্যে। ফের জেলায় আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে এই বিষযটি তুলে ধরে তার দ্রুত রূপায়ণের ছাড়পত্র পেতে চাইছেন প্রশাসনের কর্তারা।
পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের মধ্যে আশা আরও জোরদার হয়েছে বিচারবিভাগের মতামত চাওয়ার ঘটনায়। প্রশাসন সূত্রের খবর, বর্তমানে যে এলাকা আদ্রা তদন্ত কেন্দ্রের আওতাধীন, তার সঙ্গে যোগ হবে রঘুনাথপুর থানার শাঁকা ও আড়রা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “আদ্রাকে থানা হিসাবে গড়ার কাজ গতি পেয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জেলায় প্রশাসনিক সফরে আসছেন। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে বিশদ রিপোর্ট তৈরি করার কাজ শেষ।”
রাজ্যে পরিবর্তনের পরে কাশীপুরের তৃণমূল বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া প্রথম থেকেই ওই বিষয়ে উদ্যোগি হয়েছেন। তাঁর দাবি, “আদ্রাকে থানা হিসাবে গড়ে তোলার প্রস্তুতি শুরু করতে মহাকরণ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। আদ্রায় শীঘ্রই থানা চালু করা হবে।” জেলার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “স্বরাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন আদ্রাকে থানা হিসাবে গড়ার কাজ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।” পুরুলিয়ার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি দ্রুত রুপায়নের আর্জি জানানো হবে বলে জানিয়েছেন শান্তিরামবাবু। |