বাড়ি থেকে টাকা-গয়না উধাও হওয়ার পরে চোর ধরার জন্য পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি। কিন্তু সেই অভিযোগে পুলিশ যাঁকে ধরল, তাঁকে দেখে আক্কেলগুড়ুম গৃহকর্তা-কর্ত্রীর। তিনি বাড়ির পঁচিশ বছরের পরিচারিকা। পরিচারিকা নন, ‘পরিবারেরই এক জন’।
বছর আটত্রিশের ওই পরিচারিকা অণিমা শিকদার গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে বাড়ির কর্ত্রী প্রায়ই কেঁদেকেটে জ্ঞান হারাচ্ছেন, আর তাঁর কর্তা পুলিশকে বলছেন, “বাবা, ভুল হয়নি তো! ওকে না হয়, ছেড়েই দাও।” পুলিশের অবশ্য দাবি, চোরাই মালের অনেকটাই উদ্ধার হয়েছে অণিমার কাছ থেকে। বেশ কয়েক বছর আগে বাড়ির ছোট ছেলে যখন বালক, তাঁকে কোলে নিয়ে ঘুরতে যান অণিমা। সে সময় ‘হারিয়েছিল’ বালকের পায়ের নূপুর। সেই নূপুর মিলেছে ওই পরিচারিকার বাড়ি থেকে। সেই ছেলের বিয়ের দিনে সিঁদুরদানের পরেই হারানো রুপোর সিঁদুরদানিও পাওয়া গিয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় পুজোর বাজার করতে বেরিয়েছিলেন গোবরডাঙার গৈপুরের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী দেবকুমার মুখোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী মঞ্জুদেবী। বাড়ি ফিরে দেখেন, আলমারির তালা খুলে নগদ ৪৫ হাজার টাকা, প্রায় তিন লক্ষ
টাকার গয়না-সহ ঘরের নানা জিনিস উধাও। হাবরা থানার গোবরডাঙা পুলিশ ফাঁড়িতে এই মর্মে অভিযোগ জানান তাঁরা।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, খুব দরকার না হলে সন্ধ্যার পরে বাড়ির বাইরে বেরোতেন না ওই দম্পতি। তা হলে তাঁরা কবে পুজোর বাজার করতে যাবেন তা চোর কী করে জানলএই প্রশ্ন থেকে পুলিশের সন্দেহের শুরু। কোথায় টাকা, গয়না রাখা রয়েছেতা-ও চোরের জানা ছিল বলে মনে হয় পুলিশের। অণিমা শুক্রবার ওই সময় নিজের বাড়িতে যাবেন বলে বেরিয়েছিলেন। গোবরডাঙা ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার তুষার বিশ্বাসের নেতৃত্বে পুলিশের তদন্তকারী দল রবিবার রাতে গৈপুরের মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা অণিমাকে ধরে। জেরায় তিনি চুরির কথা তাদের কাছে স্বীকারও করেন বলে পুলিশের দাবি।
কিন্তু চোর ধরার পরে অন্য সমস্যা। দেবকুমারবাবুরা জানান, কাজের সূত্রে ১২-১৩ বছর বয়স থেকেই ওই বাড়িতেই রয়েছেন অণিমা। মঞ্জুদেবীকে ‘পিসি’ আর তাঁর ছোট ছেলে শুভঙ্কর মুখোপাধ্যায়কে ‘ভাই’ বলে ডাকেন তিনি। এমন এক জন ‘কাছের মানুষের’ মঙ্গলকামনায় গৈপুরের রক্ষাকালীর মন্দিরে মানতও করেছেন মঞ্জুদেবী। বললেন, “চেয়েছি, মেয়েটা যেন নির্দোষ প্রমাণিত হয়।” কর্মসূত্রে বহরমপুরের বাসিন্দা শুভঙ্কর বলেন, “অণিমাদির কাছেই মানুষ হয়েছি। সে এমন করবে ভাবতেই পারছি না!”
“এ ভাবে ভাবতে না পারার জন্যই সাধারণ মানুষের বিপদ হয়। সন্দেহ অন্য কারও উপরে গিয়ে পড়ায় পুলিশের তদন্তও কঠিন হয়ে ওঠে”, বলছেন উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী। |