মহিলা পুলিশ নেই, মহিলা পকেটমার ধরেও ঝকমারি
পুলিশের প্রতীক্ষায় প্রায় দু’ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরে টিটাগড় স্টেশনের বেঞ্চে বসে পড়েছিলেন ব্যারাকপুরের সুদেষ্ণা সাহা। বাঁ হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন গোলগাল চেহারার এক মহিলার শাড়ির আঁচল। প্রথমটায় অবশ্য আঁচল নয়, ওই মহিলার হাত ধরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু পকেটমারের হাত ধরে ঠা-ঠা রোদ্দুরে কত ক্ষণ আর দাঁড়িয়ে থাকা যায়!

ধৃত পকেটমার।
ট্রেনে মানিব্যাগ চুরি যাওয়ার পরে সোমবার দুপুরে টিটাগড় স্টেশনে নেমে ওই পকেটমারকে ধরেছিলেন সুদেষ্ণা। তার পরেই ১০০ ডায়াল করে অভিযোগ জানান পুলিশের কাছে। সুদেষ্ণা বলেন, “প্রথমে ফোন বেজে গেল। পরে ফোন ধরে এক জন বললেন, ওই এলাকাটি রেল পুলিশের আওতায়। আমরা ওদের খবর দিচ্ছি। পারলে আপনিও রেল পুলিশে খবর দিন।’’ এর পরে নিজেই রেল পুলিশে যোগাযোগ করেন সুদেষ্ণা। কিন্তু থানা থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, মহিলা পুলিশ নেই। তাই মহিলা পকেটমারকে ধরে থানায় পৌঁছে দিতে হবে অভিযোগকারীকেই!
একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী সুদেষ্ণা অফিস যাওয়ার জন্য ব্যারাকপুর থেকে ১১টা ৫০-এর ডাউন কৃষ্ণনগর লোকালে উঠেছিলেন। তিনি জানান, মহিলা কামরার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা তিন মহিলা ওঠার সময় থেকেই তাঁর উপরে নজর রাখছিল। ট্রেন ছাড়ার পরে সুদেষ্ণা ব্যাগ থেকে মোবাইল ফোন বার করছিলেন। তখনই ওই তিন জনের এক জন তাঁর সামনে এসে দাঁড়ায়। ধীরে ধীরে পাশে চলে আসে অন্য দু’জনও। অল্প ভিড়ের ট্রেনে তিন জনের অস্বাভাবিক আচরণে অবাক হয়ে যান সুদেষ্ণা।
টিটাগড় স্টেশনে ঢুকতেই ট্রেন থেকে নেমে যায় ওই মহিলারা। তার পরেই সুদেষ্ণা খেয়াল করেন, ব্যাগ থেকে তাঁর টাকা রাখার ছোট ব্যাগটি গায়েব হয়ে গিয়েছে। তত ক্ষণে ছেড়ে দিয়েছে ট্রেন। পরের স্টেশন খড়দহে নেমে ফিরতি ট্রেনেই আবার টিটাগড়ে ফেরেন তিনি। ট্রেন থেকে নেমে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের একটি চায়ের দোকানের সামনে দেখতে পান সেই মহিলাদের। লাইন পেরিয়ে ছুটে গিয়ে এক জনের হাত ধরে ফেলেন সুদেষ্ণা। তিনি বলেন, “আমি ওই তিন জনের এক জনকে জাপটে ধরে চিৎকার করতে শুরু করি। লোকজন জড়ো হয়ে যায়। তাদের চাপে ওই মহিলা আঁচলের নীচে লুকিয়ে রাখা আমার মানিব্যাগটা ফেরত দিয়ে দিল। তবে ব্যাগে রাখা প্রায় দেড় হাজার টাকা ওরা সরিয়ে ফেলেছিল।”
কিন্তু হাতেনাতে ধরে ফেলে ওই মহিলাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যান সুদেষ্ণা। তিনি বলেন, “পুলিশে ধরিয়ে দেব তো বললাম। কিন্তু কোথায় পুলিশ!” পুলিশ না-পৌঁছনোয় ভিড় একটু পাতলা হতেই ধরা পড়া চোরের দুই সঙ্গী পালিয়ে যায়। অনেকে বিপদের আশঙ্কা করে ওই পকেটমারকে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিতে থাকেন। সুদেষ্ণা বলেন, “কিন্তু আমারও জেদ চেপে যায়। প্রায় দু’ঘণ্টা ও-ভাবে থাকার পরে বেলা পৌনে ২টো নাগাদ তিন পুলিশকর্মী ঘটনাস্থলে আসেন।” তবে তাঁদের সঙ্গে কোনও মহিলা পুলিশকর্মী ছিলেন না। সুদেষ্ণা বলেন, “আমিই মহিলা পুলিশের মতো দমদম জিআরপি থানা পর্যন্ত ওই মহিলাকে ধরে নিয়ে যাই।” পরে ধৃত মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্য দুই পকেটমার মহিলার মোবাইল নম্বর পায় পুলিশ।
কিন্তু পকেটমার ধরে পুলিশে খবর দেওয়ার পরেও পুলিশের আসতে এত দেরি হল কেন?
রেল পুলিশ জানায়, শিয়ালদহ ডিভিশনে দমদম জিআরপি-তে মাত্র দু’জন মহিলা কনস্টেবল। বিরাট এলাকা এই থানার। পালা করে ওই দু’জনই ডিউটি করেন। এক কর্তার কথায়, “কোনও মহিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে চট করে আমরা ধরতে চাই না শুধু মহিলা পুলিশ নেই বলেই। আবার মহিলা অভিযুক্তকে লক-আপে রাখতে গেলে এক জন মহিলা পুলিশকেই পাহারায় থাকতে হয়। তাই এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটলে কার্যত হাত গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া কিছু করার থাকে না।”
মহিলা পুলিশের ঘাটতির কথা স্বীকার করেন শিয়ালদহের রেল পুলিশ সুপার উৎপল নস্করও। বলেন, “খুব তাড়াতাড়ি কয়েক জন মহিলা পুলিশ নিয়োগের ব্যবস্থা হচ্ছে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.