জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পুজোর বাজেট। পুজো কর্তাদের খরচের খাতায় ‘ঢাকি বাবদ’ অঙ্কটাও বেড়েছে। কিন্তু পুরোহিতের পারিশ্রমিক পড়ে আছে সেই মান্ধাতার আমলেই। বহরমপুর গোরাবাজার প্রাঙ্গনে রবিবার থেকে শুরু হওয়া নব বঙ্গীয় পুরোহিত সভার প্রশিক্ষণ শিবিরে উপস্থিত পুরোহিতদের অভিযোগ এমনটাই। শিবিরে উপস্থিত অমিত আচার্য, মৃণাল মৈত্র, লক্ষ্মীনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়, প্রবীর চক্রবর্তীদের মতো পুরোহিতদের অভিযোগ, উপোস করে, হাজার নিয়ম মেনে, হাড়ভাঙা পরিশ্রমের শেষেও দেখা যায় ঢাকিরাও আমাদের থেকে বেশি রোজগার করছেন। অথচ আমাদের পারিশ্রমিক বাড়ছে না।
বেশ কয়েকজন পুজো কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল পুরোহিতদের অভিযোগ বা আক্ষেপ কোনওটাই কিন্তু উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। বহরমপুরের এক পুজো কর্তা বলছেন, “আমাদের পুজোর বাজেট এবারে সাড়ে সাত লক্ষ টাকা। ঢাকিদের জন্য আমরা ছ’ হাজার ও পুরোহিত বাবদ চার হাজার টাকা আমরা ধরে রেখেছি।” বেলডাঙার আর এক পুজো কর্তার কথায়, “আমাদের বাজেট দু’ লক্ষ টাকার বেশি। এবারের আমাদের ‘স্পেশাল আইটেম’ হচ্ছে ঢোল। সেটার জন্যই দশ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে।” আর পুরোহিত বাবদ? ওই পুজো কর্তার জবাব, “নগদ তিন হাজার টাকা। সঙ্গে শাড়ি, গামছা। থাকা খাওয়া ‘ফ্রি’।”
চারদিনের ওই প্রশিক্ষণ শিবিরে পুজোয় নিষ্ঠা ও দক্ষতার উপরেও অবশ্য জোর দিচ্ছেন পুরোহিতরা। সোমবারে শিবিরে উপস্থিত প্রবীণ পুরোহিতরা বলছিলেন, “নতুন পুরোহিতদের আমরা বলছি যে সংস্কৃত জানাটা জরুরি। পুজোতে যেন কোনও খুঁত না থাকে।”
শিবিরের বাইরে বেরিয়ে ওই প্রবীণদেরই আবার আক্ষেপ, “আমরাও তো এত বছর ধরে দিনের পর দিন অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করে আসছি। কিন্তু সরকার থেকে সাধারণ মানুষ আমাদের কথা ভাবছেন কই? পুজো নিয়ে মানুষের এত মাতামাতি, অথচ পুরোহিতের কথা কেউই ভাবেন না।” নব বঙ্গীয় পুরোহিত সভা নামে এই সংগঠনের উদ্যোগেই বহরমপুরে এই প্রশিক্ষণ শিবির চলছে। শিবিরের ব্যয় ভার বহন করছেন সংগঠনের সদস্য পুরোহিতরাই।
ওই সংগঠনের রাজ্য সহ সভাপতি কমলেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, “বুধবার পর্যন্ত বহরমপুরে এই শিবির চলবে। পরে আরও কিছু জেলায় আমরা এরকম প্রশিক্ষণ শিবির করব। প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে প্রবীণ কয়েক জন পুরোহিতকে। পাঠক্রমে সংস্কৃত পড়ানো থেকে শুরু করে বন্ধ হয়ে যাওয়া টোলগুলো ফের চালু করার দাবিও সরকারকে জানানো হচ্ছে।” শিবির শুরু হওয়ার প্রথম দিনেই ৮০ জন পুরোহিত যোগ দিয়েছিলেন বলে এ দিন সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে। |