আকাশে মেঘ জমলেই শুরু হয়ে যায় বইপত্র গোছানোর পালা। বৃষ্টির ঝাপটা থেকে বাঁচতে পলেস্তারা খসা দেওয়ালের এক কোণে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকে পড়ুয়ারা। ভাঙা দরজা, জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে গরু, ছাগল। ১২ বাই ৩৫ ফুটের লম্বাটে ঘরটাতে এত কিছুর সঙ্গে যুদ্ধ করে শুরু হয় পড়াশোনা। সেখানেই গাদাগাদি করে বসে খেতে হয় মিড ডে মিল। ধুবুলিয়ার বলাইনগর জুনিয়র হাইস্কুলের এটাই রোজনামচা।
স্কুল বললে অবশ্য একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যায়। ২০১০ সালে ১০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে স্কুলটি শুরু হয়েছিল। তারপর কেটেছে তিন বছর। অথচ এই জুনিয়র হাই স্কুলের এখনও নিজস্ব স্কুল বাড়ি নেই। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা হয় বলাইনগর সাঁতরাপাড়া জি এস এফ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই পরিত্যক্ত ঘরে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুটি বড় ঘর। একটিতে বসে ক্লাস করে জুনিয়র হাইস্কুলের চারটি ক্লাসের মোট ৬৪ জন ছাত্রছাত্রী। অন্য ঘরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট ৭৭ জন পড়ুয়া ক্লাস করে। সবেধন এই দুই শ্রেণিকক্ষের মধ্যে রয়েছে একফালি স্টাফরুম। সেখানে দুই স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী-সহ মোট ৭ জন বসেন। স্কুলের সামনে একফালি জমিতে রয়েছে একটি স্লিপ, দোলনা। আর এক দিকে রয়েছে রান্নাঘর ও স্কুলের দেওয়াল ঘেঁষে শৌচাগার।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২ ফুট চওড়া ও ৩৫ ফুট লম্বা যে ঘরটিতে জুনিয়র হাইস্কুলের ক্লাস হয়, তার দরজা-জানালায় পাল্লা নেই। জানালার গ্রিলগুলো অবশ্য এখনও রয়েছে। জুনিয়র হাইস্কুলের সহ-শিক্ষক স্বপ্ননীল বসু বলেন, “তিন বছর আগে আমি যখন প্রথম স্কুলে ঢুকি, তখনও দরজায় পাল্লা দেখেছিলাম। এখন স্কুলে এসে দেখি মাঝেমধ্যেই খোলা ক্লাসঘরের মধ্যে গরু, ছাগল ঘুরে বেড়াচ্ছে। ক্লাসঘর নোংরায় ভর্তি। ঘর পরিষ্কার করে তারপর পড়াশোনা শুরু হয়।” |
একটি ঘরে এভাবেই চলে পড়াশোনা। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য। |
জুনিয়র হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অয়ন হালদার বলছেন, “স্কুল নিয়ে সত্যিই খুব সমস্যায় আছি আমরা। বর্ষায় সমস্যাটা আরও বাড়ে। জল জমে স্কুল চত্বরে। সে সময় স্বাস্থ্যবিধি মানা দূরের কথা, পড়ুয়াদের মিড ডে মিল রান্না কঠিন হয়ে পড়ে।”
জুনিয়র হাইস্কুলের অ্যাড হক কমিটির সভাপতি মুকুল ঘোষ জানান, “বলাইনগর, বাহিরদ্বীপ ও ঈশ্বরচন্দ্রপুরের পড়ুয়ারা কেউ এই স্কুলে ভর্তি না হয়ে দূরের বেলপুকুর গ্রামের স্কুলে পড়তে যাচ্ছে। স্থানীয় অনেক অভিভাবকও ছেলেমেয়েদের এই স্কুল থেকে নিয়ে গিয়ে অন্য স্কুলে ভর্তি করে দিচ্ছেন। স্কুলবাড়ি তৈরি হলে তবেই অবস্থার পরিবর্তন হবে।”
সপ্তম শ্রেণির পম্পা ঘোষ, পঞ্চম শ্রেণির বিশ্বজিৎ ঘোষরা সমস্বরে জানাচ্ছে, “স্কুলবাড়ি চাই।” পম্পা বলছে, “একটা ঘরে একই সঙ্গে চলে চারটে ক্লাস। স্যারেদের কথা ঠিকমতো শুনতেই পাই না।” বিশ্বজিৎ বলে, “ক্লাসঘরের দেওয়ালে সাপের খোলস ঝোলে। বৃষ্টি হলেই খোলা দরজা-জানালা দিয়ে ঢোকা বৃষ্টির ছাটে জামাকাপড়, বইপত্র ভিজে যায়।”
স্কুলের এমন বেহাল অবস্থায় আশার আলো দেখাচ্ছেন ধুবুলিয়া সদর ১ সার্কেলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শরিফুদ্দিন সেখ। তিনি আবার এই জুনিয়র হাই স্কুলের অ্যাড হক কমিটির সম্পাদকও। শরিফুদ্দিন বলেন, “জমি নিয়ে একটা সমস্যা ছিল। সেই কারণেই স্কুলবাড়ি তৈরির কাজ শুরু করা যাচ্ছিল না। তবে এখন সমস্যা মিটেছে। টাকাও চলে এসেছে। খুব দ্রুত পরিত্যক্ত ক্লাসরুমটি ভেঙে জুনিয়র হাই স্কুলের জন্য নতুন স্কুলবাড়ি তৈরির কাজ শুরু হবে।” |