শিক্ষক বদলি রুখতে ভাঙচুর নবগ্রামের স্কুলে
মুর্শিদাবাদের রামচন্দ্রপুর নতুনগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মহম্মদ কামালউদ্দিনকে গত ১৯ সেপ্টেম্বর বদলি করা হয়েছিল বুড়োরডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
কিন্তু ছাত্রেরা ছাড়লে তো! ‘স্যারের’ বদলির কথা শুনে খুদে পড়ুয়ারা শুরু করেছে ‘আন্দোলন’। সে আন্দোলনে হাত-পা মিলিয়েছে তাদের পরিবারও। না হলে শিক্ষকের বদলি রুখতে কেউ স্কুলের উপরে ‘অত্যাচার’ চালায়? বন্ধ দরজার হুড়কো ধরে টানাটানি। স্কুলের ক্লাস ঘরের দরজায় পদাঘাত, বাদ যায়নি কিছুই।
শেষ পর্যন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ বদলির নির্দেশ পুনর্বিবেচনার দাবিতে ক্ষান্ত দেয় খুদে পড়ুয়ারা। তাণ্ডবে সাময়িক দাঁড়ি টানেন তাঁদের পরিবার বর্গ।
মুর্শিদাবাদ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি সাগির হোসেন বলেন, “ব্যাপারটা জেনেছি। নবগ্রাম পশ্চিম চক্রের স্কুল পরর্দশককে স্কুলে যেতেও বলি। তদন্ত রিপোর্ট পেলে তারপরে ভেবে দেখা হবে।”
কামালউদ্দিন বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা আমাকে ভালবাসত। তাদের পড়াশোনার প্রতি আমার আন্তরিকতায় কোনও ঘাটতি ছিল না। তাদের ছেড়ে আসতে আমারও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মানতে আমি বাধ্য। এর বেশি কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

চলছে স্কুলে ভাঙচুর। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
মহম্মদ কামালউদ্দিন নামে ওই শিক্ষক ২০১০ সালে ওই স্কুলে যোগ দিয়েছিলেন। সে সময়ে স্কুলে ১০৫ জন ছাত্রছাত্রী ছিল। জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৩০ জন ছাত্রছাত্রী পিছু এক জন শিক্ষক থাকার কথা। সেই অনুযায়ী কামালউদ্দিন যোগ দেওয়ায় স্কুলে বাড়তি দু’জন শিক্ষক হয়ে যাচ্ছিল বলে স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। তাই, জেলার যে সব স্কুলে শিক্ষক-ঘাটতি রয়েছে সেখানে তাঁদের বদলির কথা ভাবা হয়েছিল। মহম্মদ কামালউদ্দিনের সঙ্গে অলচিকি ভাষার শিক্ষক তপন সোরেনকেও তাই অন্য স্কুলে বদলি করার নির্দেশ আসে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আতাউর জামান বলেন, “কামালউদ্দিন স্কুলে বেশ জনপ্রিয়। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বেশ ভাল, বন্ধুর মতো। বহু অনিচ্ছুক পড়ুয়াকে ক্লাসে ফিরিয়েও এনেছেন তিনি।”
হাতে চিঠি পেয়েই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ থেকে ‘রিলিজ অর্ডার’ নিয়ে স্কুল ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন কামালউদ্দিন। পড়ুয়ারা জানতে পেরেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাদের সঙ্গে যোগ দেন অভিভাবকেরাও। অভিভাবক মুজলেখা বিবি বলেন, “আমার দুই মেয়ে রিজিয়া ও সালমা ওই স্কুলে পড়ে। ওই স্যার কোনও দিন ছোট মেয়ে রিজিয়া স্কুলে না গেলে খোঁজ নিতেন। কখনও কখনও স্যার বাড়ি চলে আসতেন। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখার পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের কী ভাবে বুঝিয়ে স্কুলে পাঠাতে হয়, সে ব্যাপারে অভিভাবকদের বোঝাতেন।”
অন্য এক অভিভাবক বচ্চন শেখ। তিনি বলেন, “ওই শিক্ষক চলে যাওয়ায় এখন আদর-স্নেহ দিয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে ধরে রাখার কেউ থাকল না। আমাদের এলাকায় অধিকাংশ গরীব মানুষের বাস। গৃহশিক্ষক দিতে পারি না। ওই শিক্ষক স্কুল ছুটির পরেও ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য বাড়তি সময় দিতেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.