কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর থেকেই শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচার শুরু হয়েছিল। বছর পাঁচেক আগে বিয়ে হলেও দেড় বছর আগে মেয়ে হওয়ার পরে বাপের বাড়ি থেকে আবার মোটা টাকা পণ এনে দিতে হবে বলেও দাবি করা হয়েছিল। সোমবার সকালে মুর্শিদাবাদের কান্দি থানার আন্দুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার গোপালপুর বায়েন পাড়ায় সেই মহিলা সান্ত্বনা দাসের (২২) অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তাঁর বাবার বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, সান্ত্বনাদেবীকে পিটিয়ে খুন করে তাঁর মুখে বিষ ঢেলে দেওয়া হয়েছে।
তাঁর মা কণিকা দাসের অভিযোগ, “আমার মেয়েকে খুন করেছে ওর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্যই ওকে মেরে ফেলা হল।” তিনি কান্দি থানায় মেয়ের স্বামী রুদ্রদেব দাস, শ্বশুর রায়চরণ দাস ও শাশুড়ি ময়না দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে ন। তবে অভিযুক্তেরা সকলেই পলাতক।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সান্ত্বনাদেবীর সঙ্গে দিনমজুর রুদ্রদেবের বিয়ের পর প্রথম দিকে সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু কন্যা সন্তানের মা হওয়ার পর থেকেই সান্ত্বনাদেবীর উপরে অত্যাচার শুরু হয়। কিছু দিন পরেই বাপের বাড়ি থেকে ৩০ হাজার টাকা পণ আনতে বলা হয়। কিন্তু সান্ত্বনাদেবীর বাবার সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তাঁরা মেয়ের শ্বশুরবাড়ির দাবি মেটাতে পারেননি। তারপরেই অত্যাচার বাড়তে থাকে। শেষ মাস তিনেক ধরে প্রায়ই মারধর করা হত ওই মহিলাকে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, সান্ত্বনাদেবী সে সময়ে প্রায়ই পাশের গ্রাম মাহাদিয়া বিষ্ণুপুরে বাপের বাড়ি চলে যেতেন। কিন্তু দুই পরিবার মিলে মিটমাটও করে নিত। বাপের বাড়ির অভাবের কারণে তাঁকে ফিরেও যেতে হত শ্বশুরবাড়িতে। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে ফিরলে ফের শুরু হত মারধর। রবিবার রাতে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে স্থানীয় সূত্র থেকে জেনেছে পুলিশ। সোমবার ভোরে সান্ত্বনাদেবী সেই মারধরের চোটে বাড়িতেই মারা যান বলে অভিযোগ। রুদ্রদেব এই দিন সকালে অবশ্য শ্বশুরবাড়িতে ফোন করে সান্ত্বনাদেবীকে নিয়ে যাওয়ার কথাই বলেছিলেন। সেই ফোন পেয়ে কণিকাদেবী মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখেন, একটি ভ্যানরিকশায় সান্ত্বনাদেবীর দেহ শোয়ানো রয়েছে। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির অন্য কেউ নেই। কণিকাদেবী তখন মেয়েকে নিয়ে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
কান্দি থানার আইসি কৌশিক ঘোষ বলেন, “মৃতার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। মৃতার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন ও খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে।” আন্দুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের মালেক শেখ বলেন, “ওই পরিবারে যে এমন সমস্যা ছিল, তা জানতাম না। তা হলে কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য কোনও মহিলাকে অত্যাচারের মুখে পড়তে দিতাম না। আমরা যেভাবেই হোক তাঁর পাশে দাঁড়াতাম।” মহকুমাশাসক প্রদীপ বিশ্বাসও বলেন, “আমরা সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু এখনও যে এই জাতীয় ঘটনা ঘটছে তা খুবই দুঃখজনক।”
আর সান্ত্বনাদেবীর দেড় বছরের মেয়ে এখন তার মামার বাড়িতে। |