সংগ্রহশালা গড়তে হন্যে প্রৌঢ়
অনাদরে পড়ে দুর্লভ শিল্প-সম্ভার
রে পড়ে নষ্ট হচ্ছে দুর্লভ লোকশিল্পের সম্ভার। সংগ্রহশালা গড়তে দীর্ঘদিন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মহিষাদলের রঙ্গিবসান গ্রামের প্রৌঢ় অশোক চক্রবর্তী। কিন্তু লোকশিল্পী ও তাঁদের শিল্পকর্ম রক্ষার কাজে প্রশাসনের কাছ থেকে কোনও সাহায্য পাননি তিনি। অশোকবাবু বলেন, “সংগ্রহশালা গড়ার জন্য ব্লক থেকে রাজ্য স্তর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে সহযোগিতার আবেদন জানিয়েও ফল পাইনি। এটাই গভীর দুঃখের।”
২৬ বছর ধরে অশোকবাবু রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন কয়েক হাজার উপাদান। কিন্তু প্রশাসনের সহযোগিতার অভাবে সংগ্রহশালা গড়ার পরিকল্পনা দূর অস্ত। সংগ্রহশালা গড়ার লক্ষে ব্যক্তিগত ভাবে ও কয়েক জন লোকশিল্পীকে নিয়ে তিনি গড়েও তুলেছেন ‘মহিষাদল পূর্বাপর লোকসস্কৃতি চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র।’ গৃহশিক্ষকতার পেশা ও পৈতৃক যৎসামান্য জমি চাষের অর্থই তার সম্বল। কিন্তু শুধুমাত্র লোকসংস্কৃতির প্রতি ভালবাসার তাড়নায় তিনি সংগ্রহ করেছেন লক্ষ লক্ষ টাকার সামগ্রী।তবে উৎসাহ ও আর্থিক সাহায্য দিয়ে সবসময় পাশে থেকেছেন তাঁর স্ত্রী ইন্দিরা চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “বিয়ের পর থেকেই দেখেছি উনি নিজে না খেয়ে, না পরে বিভিন্ন জেলায় গিয়ে লোকসংস্কৃতির শিল্পসম্ভার কিনছেন। ওই শিল্পসম্ভার নিয়ে পড়াশোনা ও লেখালিখি তো রয়েছেই।”
নিজের সংগ্রহের মাঝে অশোক চক্রবর্তী।— নিজস্ব চিত্র।
বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর অশোকবাবু গত প্রায় আড়াই দশক ধরে রাঢ় বঙ্গের তাম্রলিপ্ত অঞ্চলের বিচিত্র বিষয় ও লোকসংস্কৃতির বহুমুখী উপাদান নিয়ে কাজ করেছেন। এলাকায় লোকসংস্কৃতির চর্চা বাড়াতে প্রতি বছরই করেন কর্মশালা ও অনুষ্ঠান।
অশোকবাবু বলেন, “প্রায় হারিয়ে যাওয়া লোকশিল্পের উপাদান সংগ্রহে থাকলে ভবিষ্যতের গবেষকদের সুবিধে হবে। আপাতত নিজের বাড়িতেই রাখা শিল্পসামগ্রী পরিদর্শন করে গিয়েছেন বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতির গবেষক ও শিল্পীরা।” তাঁর কাঁচা পাকা ঘরের প্রায় সর্বত্র হয় ডাঁই করে রাখা রয়েছে নানা শিল্পবস্তু। কখনও উই লেগে, কখনও বা ঘুন লেগে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সামগ্রীগুলি। তাঁর সংগ্রহে রয়েছে পটচিত্র, নকশি কাঁথা, মাটি-গালা-জৌবেণী, কাঠপুতুল, ধাতব বাসনপত্র, নানান বাঁশি, মুখোশ, বাতিদান, পাখা, বাদ্যযন্ত্র, ঢেঁকি, হুঁকো, চরকা-সহ গৃহস্থালীর জিনিস। রয়েছে পালকি, তির-ধনুক, শিকার করার উপাদান, পুঁথি, আরও কত কী। এই সব বিষয়ে তাঁর দীর্ঘ অনুসন্ধান ও গবেষণামূলক লেখা প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়।
২০০৬ সালে মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতি রঙ্গিবসান মৌজায় মহিষাদল-গেঁওখালি রাস্তার ধারে অশোকবাবুকে ৪ ডেসিমেল জলাজমি পাট্টা দেয়। অশোকবাবু অর্থ সাহায্য চেয়ে আবেদন করেন মহিষাদলের তৎকালীন বিধায়ক তমালিকা পণ্ডা শেঠকে। ২০০৭-০৮ অর্থবর্ষে তমালিকা দেবী সংগ্রহশালার একতলা ঘর তৈরির জন্য ৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেন। কিন্তু নিয়মবহির্ভুত ভাবে বরাদ্দ হওয়ায় জেলা প্রশাসন ওই অর্থ দেয়নি। তমালিকা দেবী বলেন, “কোনও ভাবে ত্রুটি হয়ে গিয়েছিল। ওই এলাকায় লোকশিল্পের একটি সংগ্রহশালা গড়ার প্রয়োজন রয়েছে।” অশোকবাবুর আক্ষেপ, “সমস্যার কথা সকলকে জানিয়েছি। কিন্তু লোকশিল্পের জন্য কেউ সাহায্য করেননি।”
জেলা তথ্য ও সংস্কৃতিক আধিকারিক কথা দাস বলেন, “কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে যথাসম্ভব সাহায্যের চেষ্টা করব।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.