স্কুল আছে। ছাত্রছাত্রীও আছে। কিন্তু শিক্ষক নেই।
বেতন নিয়ে গোলমালের জেরে পাঁচ মাস আগে উলুবেড়িয়ার খলিসানি নিউ সেট আপ আপার প্রাইমারি স্কুল (পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি) থেকে পদত্যাগ করেছেন পাঁচ শিক্ষক। গ্রামবাসীদের আবেদন সত্ত্বেও এখনও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। পঠনপাঠন যাতে বন্ধ না হয়, তার জন্য এগিয়ে এসেছেন গ্রামেরই তিন যুবক এবং স্থানীয় মসজিদের ইমাম। বিনা বেতনেই তাঁরা পড়াচ্ছেন।
শিক্ষক নিয়ে এই স্কুলে সমস্যা গোড়া থেকেই। এলাকাটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। স্কুলের ১২৭ জন ছাত্রছাত্রীর সকলেই সংখ্যালঘু, দরিদ্র পরিবারের। ২০১০ সালে খলিসানির স্কুলটি তৈরি হয়। তখনই অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষকদের ‘অতিথি শিক্ষক’ হিসেবে নিয়োগ করা হয়। প্রধান শিক্ষক-সহ পাঁচ জনই ছিলেন ‘অতিথি শিক্ষক।’ পরে স্কুল সার্ভিস কমিশন থেকে কিছু স্কুলে স্থায়ী পদে শিক্ষক নিয়োগ হলেও, খলিসানিতে হয়নি। |
উলুবেড়িয়া খলিসানি নিউ সেটআপ আপার প্রাইমারি স্কুল।—নিজস্ব চিত্র। |
কিন্তু মাস পাঁচেক আগে অতিথি শিক্ষকরাও স্কুল ছেড়ে দেন । গোড়ায় তাঁদের বেতন ছিল মাসে ১০-১২ হাজার টাকা। কিন্তু ২০১২ সালের জুলাই মাসে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর এক নির্দেশিকায় জানায়, ওই বেতন হার আর থাকছে না। অতিথি শিক্ষকরা তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুসারে পাবেন পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার টাকা। ‘অতিথি শিক্ষক’দের অধিকাংশই সংশোধিত হারে বেতন নিতে অস্বীকার করেন। ফলে, ওই মাস থেকেই তাঁদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়। ওই শিক্ষকদের দলে রয়েছেন খলিসানির স্কুলটির পাঁচ শিক্ষকও। বিনা বেতনে এক বছর পড়ানোর পরে চলতি বছরের মে মাসে তাঁরা স্থানীয় স্কুল পরিদর্শকের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা দিবাকর প্রামাণিক বলেন, “বেতন বন্ধ, শুধুমাত্র পেনশনের টাকা সম্বল করে সংসার চলছিল না। তাই আমরা পদত্যাগ করি। দফতর থেকে আমাদের স্কুল বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছিল। সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গি হলে আমাদের আর কী করার আছে!” গ্রামবাসীরা চাননি স্কুল বন্ধ হয়ে যাক। তাঁদের উদ্যোগেই গ্রামের তিন যুবক বিনা বেতনে স্কুলে পড়ানোর দায়িত্ব নেন। তাঁদের মধ্যে শেখ ইমতিয়াজ বলেন, “গ্রামের স্কুল। তাই না এসে থাকতে পারি না।” একই সঙ্গে তাঁর আশঙ্কা, “এ ভাবে আর কত দিন চলবে? সরকারের উচিত স্থায়ী কোনও ব্যবস্থা নেওয়া।” স্থানীয় মসজিদের ইমাম রফিকুল জামান স্কুলে আরবি ভাষা পড়ান। তাঁর কথায়, “মসজিদে ধর্মীয় কাজ থাকে। কিন্তু অসহায় ছেলেমেয়েগুলির কথা ভেবে থাকতে পারি না। ফাঁক পেলেই চলে আসি।” এ ছাড়াও, স্থানীয় দু’টি স্কুলের দুই পার্শ্বশিক্ষকও প্রায়ই পড়িয়ে যান।
গ্রামবাসীদের মধ্যে হেমায়েতুল্লা মালিক, শেখ আজিজুররা বলেন, “আমরা ধরেই নিয়েছি, ছেলেমেয়েদের একটি শিক্ষাবর্ষ নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমরা যদি তাদের স্কুলে না-পাঠাই, তা হলে সেটা সব থেকে বড় ক্ষতি। সরকারের কাছে স্থায়ী শিক্ষকের জন্য আমরা আবেদন করেছি।” জেলা স্কুল পরিদর্শক তাপস বিশ্বাস অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, “ওই স্কুলে এ বারে স্থায়ী শিক্ষক পাঠানো হবে। স্কুল বন্ধ হবে না।” |