সম্পাদকীয় ২...
পৌরুষ নির্মাণ
পিতৃতন্ত্র পুরুষকে শিখাইয়াছে, সব বিষয়ে আপন চাহিদা পূরণে তাহার পৌরুষগত অধিকার। যৌনতাই বা ব্যতিক্রম হইবে কেন? সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি সমীক্ষা হইয়াছে পূর্ব এশিয়ার ছয়টি দেশে: বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, পাপুয়া নিউগিনি, কাম্বোডিয়া, চিন ও ইন্দোনেশিয়া। দশ হাজার পুরুষের অভিমত লইয়া সম্পন্ন এই সমীক্ষার ফল বলিতেছে, তাহাদের সিকিভাগ পুরুষ এক বা একাধিক নারীকে ধর্ষণ করিয়াছে। এবং, যাহারা ধর্ষণ করিয়াছে তাহাদের অর্ধেক পুরুষ মনে করে, আপন যৌনকামনা পূরণের জন্য একটি মেয়েকে ব্যবহার করিবার অধিকার তাহার স্বত্বাধিকার সেকশুয়াল এনটাইট্লমেন্ট। পরিসংখ্যানগুলির বিশ্বাসযোগ্যতা লইয়া সংশয় স্বাভাবিক। কিন্তু স্বত্বাধিকারের ধারণাটি তাৎপর্যপূর্ণ। এই ধারণার মর্ম বুঝিতে পারিলে ধর্ষণের প্রাদুর্ভাব এক ভিন্ন মাত্রা পায়। যে পুরুষ মনে করে, নারীর উপর তাহার যৌন-স্বত্ব আছে, নারীকে সে প্রকৃতপক্ষে আপন সম্পত্তি হিসাবে দেখিয়া থাকে। নিজের সম্পত্তি ভোগ করিবার সময় কেহ সম্পত্তির অনুমতি লয় কি? অনুমতি লওয়ার প্রয়োজনই যদি না থাকে, তবে আর ধর্ষণের কথা ওঠে কী ভাবে?
এই সমীক্ষা হইতে আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ হিসাব মিলিয়াছে। অন্তত অর্ধেক ধর্ষণ হইয়া থাকে, যখন ছেলেটি প্রাপ্তবয়স্ক নহে। ইহার একটি কারণ অনুমেয়। মেয়েদের উপর স্বত্বাধিকারের ধারণাটি পুরুষ তাহার বড় হইবার সঙ্গে সঙ্গেই, বড় হইবার প্রক্রিয়াতেই আত্মস্থ করিয়া লয়। পরবর্তী জীবনেও এই ধারণাই তাহাকে চালনা করে। বস্তুত, শিশুবয়স হইতে পুরুষ এই ধারণা লইয়া বড় হয় যে, বাড়ির ছোট ছোট দাবিদাওয়া হইতে শুরু করিয়া বৃহৎ বিশ্বের যে কোনও কিছুতেই তাহার অধিকার প্রশ্নাতীত। সে শিখিয়া লয় যে, কোনও কিছুর সাপেক্ষে পুরুষ নয়, পুরুষের সাপেক্ষে সমস্ত নিয়ম ও আচরণবিধি। এবং পিতৃতন্ত্র মেয়েদেরও শিখাইয়াছে যে, পুরুষ মুখ্য, নারী গৌণ। নারী জানিয়াছে, তাহার জীবনযাপন পুরুষের সাপেক্ষে। পুরুষ যেমনটি চাহে, তাহাকে সেই অনুসারেই জীবন ধারণ করিতে হইবে। সে বিশ্বাস করিয়াছে, তাহার উপর পুরুষের স্বত্বাধিকার আছে। আধিপত্যের ধারণা এই ভাবেই প্রোথিত হয়।
ইহা— পুরুষের নহে—পৌরুষের নির্মাণকাহিনি, যে পৌরুষে হিংস্রতা অন্তর্লীন। যখন মেয়েদের উপর ধর্ষণ বা অন্য আক্রমণ হয় তখন এই হিংস্রতার রূপ প্রকট হয়। অন্যান্য সময় তাহা হয়তো প্রকাশ পায় না, কিন্তু আধিপত্যের বিভিন্ন রূপের মধ্যে নিহিত থাকে, যে আধিপত্যকে সতত স্বাভাবিক ও স্বতঃসিদ্ধ বলিয়া ধরিয়া লওয়া হয়। বহু পুরুষের ‘যৌন স্বত্বাধিকার’-এর ধারণাটি ইহারই এক অঙ্গ। হিংস্রতাকে যখন সাদা চোখে চিনিয়া লওয়া যায় না, তখন তাহা দ্বিগুণ বিপজ্জনক, কারণ না চিনিলে তাহাকে মানিয়া লওয়াই স্বাভাবিক, তাহার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সম্ভাবনা ক্ষীণ। পৌরুষের এই ধারণাকেই প্রশ্ন করা জরুরি। জরুরি তাহার পশ্চাদ্বর্তী সামাজিক মানসিকতার পরিবর্তন। পুরুষকে তাহার আধিপত্যের ও স্বত্বাধিকারের ধারণা হইতে সরাইয়া আনিয়া সমাজ যদি মেয়েদের সমানাধিকারকে যথার্থ মর্যাদা দিতে না পারে, তবে নারীর বিরুদ্ধে হিংসার উৎসমুখ বন্ধ হইবে না। সমীক্ষার সংখ্যাগত নির্ভরযোগ্যতা লইয়া সর্বদাই প্রশ্ন থাকে, কিন্তু সংকেতটি সুস্পষ্ট।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.