সম্পাদকীয় ১...
বিলম্বিত তৎপরতা
নেক বিলম্বে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ তাহার প্রশাসনিক দায় পালনে তৎপর হইয়াছে। মুজফ্ফরনগরের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটিয়া যাওয়ার পক্ষ কাল পর সেই দাঙ্গায় প্ররোচনা দিবার দায়ে নির্বাচিত বিধায়ক সহ অভিযুক্ত রাজনীতিকদের গ্রেফতার করিতে শুরু করিয়াছে। অভিযোগ দায়ের হইয়াছে আরও কয়েক জন বিধায়ক ও সাংসদের বিরুদ্ধেও। দাঙ্গা মোকাবিলায় রাজ্য প্রশাসন, বিশেষত তাহার পুলিশ গড়িমসি করিয়াছে, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা প্রশমনে তত কঠোর হয় নাই, বরং উত্তেজনা সঞ্চারকারীদের প্রতি নমনীয় মনোভাব গ্রহণ করিয়াছে এমন গুরুতর অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে উঠিয়াছে। কার্যত অভিযোগটি অখিলেশ যাদবের সরকারের দিকেই ধাবিত হয়। ঘরে-বাহিরে প্রবল চাপের মুখে পড়িয়া শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার তাহার পুলিশ প্রশাসনকে সবুজ-সংকেত দিয়া থাকিবে। দুর্গাশক্তি নাগপালের সসম্মান পুনর্বহালের আদেশটিতেও একই কার্যকারণসূত্রের সংকেত। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় চাপের মুখে পড়িয়া প্রশাসন আত্মসংশোধনে বাধ্য হয়, ইহাই গণতন্ত্রের বড় ভরসা।
কেবল মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করার জন্য এই আত্মশুদ্ধি জরুরি ছিল না, ভবিষ্যতে এই ধরনের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানো ব্যক্তিদের কাছে পাঠানো হুঁশিয়ারি হিসাবেও ইহা জরুরি। রাজনীতিকদের, বিশেষত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জানিয়া রাখা দরকার, জনাদেশ পাইয়াছেন বলিয়াই তাঁহারা আইনের ঊর্ধ্বে নহেন। লক্ষণীয়, উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার অধিবেশন চালু ছিল বলিয়া পুলিশ বিধায়কদের বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করিতে পারে নাই, এই মর্মে পুলিশ-কর্তা কৈফিয়ত দিয়াছেন। অধিবেশন অনির্দিষ্টকাল স্থগিত হইয়া যাওয়ার পরেই তাই গ্রেফতারির তোড়জোড়। কিন্তু এ ধরনের কৈফিয়ত কি যুক্তিগ্রাহ্য? জনপ্রতিনিধিরা যদি দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করেন, তবে কেবল আইনসভা চালু আছে বলিয়া তাঁহাদের আইন মোতাবেক গ্রেফতার করা যাইবে না? যাঁহারা গ্রেফতার হইয়াছেন কিংবা যাঁহাদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হইয়াছে, ঘটনাচক্রে, তাঁহাদের মধ্যে শাসক সমাজবাদী পার্টির কোনও রাজনীতিক নাই। প্রধানত বিরোধী দল বিজেপি এবং বিএসপির বিধায়ক-সাংসদ ও এক-আধজন কংগ্রেসি রাজনীতিকের নামও তালিকায় রহিয়াছে। বিরোধীরা স্বভাবতই রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ করিয়াছেন। অভিযোগ সত্য হইতে পারে, না-ও পারে। কিন্তু অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার বিরুদ্ধে বিজেপির বিষোদ্গার বৈধ নহে। বিজেপি আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের দিকে নজর রাখিয়া সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটাইবার অভিযোগ তুলিয়াছে। একই অভিযোগ কিন্তু তাহার বিরুদ্ধেও উঠিয়াছে। বিলম্বে হইলেও উত্তরপ্রদেশের পুলিশ যে জন-অসন্তোষ উপেক্ষা করিয়া আপন কর্তব্য অর্থাৎ আইনের শাসন জারির লক্ষ্যে অবিচল থাকিতে সচেষ্ট, ইহা প্রশংসনীয়। সচরাচর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের এ ভাবে গ্রেফতার করার নজির নাই। শাসক দল কখনও সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে বিরুদ্ধবাদীদের জেলে পুরিয়া প্রতিবাদের পথ বন্ধ করিয়া দিতে চায় বটে। তবে এ ক্ষেত্রে তেমন অভিযোগ সম্ভবত ধোপে টিকিবে না, কারণ অভিযুক্তরা অকুস্থলে হাজির হইয়া সম্প্রদায়গত উস্কানি দিয়াছিলেন। সাজানো ভিডিয়ো ছবি দেখাইয়া জন-আক্রোশ খুঁচাইয়া তোলারও চেষ্টা হইয়াছিল। গণতন্ত্রে ইহা চলিতে দেওয়া যায় না। আদালতে যদি অভিযুক্তরা নিজেদের নির্দোষ প্রতিপন্ন করিতে পারেন, তবে তো তাঁহারা সসম্মানে রাজ্য-রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হইবেনই। তাহা না-হওয়া পর্যন্ত আদালতের নির্দেশ শিরোধার্য করিয়া পুলিশ প্রশাসনকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা লইতেই হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.