কাছে এল পুজোর ছুটি। তবে পুজো ‘ইন্ডাস্ট্রি’র রমরমার এই বাজারে বছরভর অপেক্ষার সেই রোমাঞ্চ আর নেই। কারণ এখন পুজো শেষ হতে না হতেই শুরু হয় আসছে বছরের তোড়জোড়। তবে কল্লোলিনী তিলোত্তমার গণ্ডিটা পেরিয়ে যদি বেরিয়ে পড়া যায়? কোনও মফস্সল বা জেলাসদরেও নয়। যদি পৌঁছে যাওয়া যায় প্রত্যন্ত কোনও জনপদে? যেখানে এখনও আকাশটা এসে ধূ ধূ মাঠের কোণটায় মেশে...সেখানে মিলবে কি অন্য কোনও ছবি?
যদি যাওয়া যায় লালমাটির দেশে, যেখানে লাল ধুলোয় আজও ওড়ে একতারার সুর। পুজোর দিনগুলো কেমন কাটে সেখানকার আখড়ার বাউলদের? স্কাইপ আর স্কাই-স্ক্র্যাপারের দুনিয়ায় সরাসরি সেই স্বাদ নেওয়ার সুযোগ নেই। তবু যদি থিমপুজোর হাত ধরেই ঘুরে আসা যায় অদেখা সেই জগৎ থেকে! এ বছর তেমনটাই ভেবেছে বেহালার প্রগতি সঙ্ঘ সর্বজনীন। মণ্ডপে ঢোকার মুখটা হবে বীরভূমের বাড়ির প্রবেশপথের মতো। মণ্ডপটা একটা একতারা। তার খোলে বাউলের সংসার। আখড়ায় বাউলদের জীবনযাত্রা ফুটিয়ে তোলা হবে পটচিত্রে। সেই সংসার আগলাবেন দুর্গা।
থিমপুজোর মজাটা এখানেই। গ্রামান্তরে ছড়িয়ে থাকা মণিমুক্তোকে খুঁজে পেতে শহুরে পুজোর ঐশ্বর্যে ঠাঁই দেওয়া হয়। সেই সব দেখে যেন ঝিলমিল লেগে যায় শহুরে চোখগুলোতে। বড়িশা তপোবন-এর থিম যেমন রেশম শিল্প। |
মণ্ডপে যাওয়ার অপেক্ষায়। সোমবার, কুমোরটুলিতে। ছবি: রণজিৎ নন্দী। |
রেশমগুটি ও তাদের জীবনচক্র নিয়ে সাজছে মণ্ডপ। থাকছে রেশম কাপড়ের উপরে বিভিন্ন সুতোর কাজ। প্রতিমায় জরির কাজ। রেশম কাপড়ের ময়ূর পেখম মেলবে মণ্ডপে। নীল ও সবুজ রঙে সাজবে ময়ূর।
সূর্যনগর সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির ভাবনায় নবান্ন উৎসব। মণ্ডপে দেখানো হবে কৃষিকাজের বিভিন্ন পর্যায়। কোথাও জলসেচ, কোথাও ধানের গোলায় উপচে পড়ছে ধান। এখানে দুর্গা যেন লক্ষ্মীরই রূপ। মানিকতলার কৃষ্ণবাগান নবজীবন সঙ্ঘের থিম আদিবাসী সংস্কৃতি। আদিবাসীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান তুলে ধরা হবে এখানে। যেমন বন্দনা (দুর্গাপুজো ও কালীপুজো উপলক্ষে শস্যের দেবীর পুজো), গাজন, ধর্মঠাকুরের পুজো। থাকবে আদিবাসী নাচও। বরাহনগরের কর্মী সঙ্ঘের পুজোর থিম ‘প্রকৃতি ও প্রেম’। মূল ভাবনা লালমাটির এক উপজাতি গোষ্ঠী নিয়ে। পরমা প্রকৃতির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিবিড়, ঠিক যেমন মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক। মণ্ডপ নির্মাণে থাকবে বাঁশ, পোড়ামাটি। ফিরে আসবে লোকশিল্প পিপলি।
তবে শরতের এই মরসুমে সবচেয়ে বড় হল পুজোশিল্প। তার বৈচিত্রও কম নয়। লেকটাউন প্রগতিপল্লি অধিবাসীবৃন্দ তাই পুজোতে ফুটিয়ে তুলছে পুজোরই নানা পর্ব। অনেকটা গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজোর মতো। কুমোরটুলিতে প্রতিমা নির্মাণ থেকে শুরু করে মণ্ডপে ঠাকুর আনা, বিভিন্ন মডেলের মাধ্যমে দেখানো হবে সব। তিন পর্বে দেখা যাবে শিল্পীরা ঠাকুর গড়ছেন, বড় দুর্গাপ্রতিমায় চক্ষুদান হচ্ছে, লরিতে ঠাকুর আসছে। মূল প্রতিমা থাকবে লরিতে। মডেলে দেখানো হবে, বাড়ির জানলা থেকে উঁকি মেরে ঠাকুর দেখছে অনেকে, বিচারকেরা ঠাকুর দেখতে আসছেন। যতই থাকুক বছরভর প্রস্তুতি। উদ্যাপন তো এই চার দিন। তাই আয়োজনে কোনও খামতি রাখতে চান না কেউই। আর আমজনতা আশায় থাকে, সেজেগুজে দাঁড়িয়ে থাকা মণ্ডপগুলোতে কখন সত্যিকারের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে, হঠাৎ পাড়া কাঁপিয়ে রোল উঠবে, বলো দুগ্গা মাই কি জয়... |