রাত পৌনে একটা নাগাদ আচমকা ব্রেক কষে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে গেল ট্যাক্সি। চালকের পিছনে বসা দুই তরুণী চিৎকার করে কাঁদছেন। চালক ইঞ্জিন বন্ধ করে পাশের যুবককে চেঁচিয়ে বললেন, ‘গাড়ি নেহি চলেগি। জো করনা হ্যায়, কিজিয়ে।’ চালকের চিৎকারে জড়ো হয়ে গেলেন লোকজন। বিপদ বুঝে ট্যাক্সির জানলা দিয়ে গলে নেমে ছুট দিল ওই যুবক।
|
সেই ট্যাক্সিচালক। |
ঘটনাস্থল ক্যানাল ওয়েস্ট রোড ও নারকেলডাঙা মেন রোডের মোড়। পুলিশ জানায়, রবিবার রাতের এই ঘটনার পরেই নারকেলডাঙা থানার পুলিশকর্মীরা পৌঁছে যান ট্যাক্সিচালকের কাছে। দুই তরুণী ও চালককে গাড়ি সমেত পুলিশ নিয়ে যায় থানায়। এক তরুণী পুলিশকে জানান, জোর করে তাঁদের গাড়িতে উঠে পড়েছিল ওই যুবক। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাইছিল। ট্যাক্সিচালকও অভিযোগ জানালেন, ওই যুবক জোর করে গাড়িতে উঠে পড়েছিল। তাঁকে বলেছিল, সে যেখানে বলবে, সেখানে যেতে হবে। তার সঙ্গে ছিল আরও দুই যুবক। তারা মোটরসাইকেল নিয়ে ট্যাক্সির সামনে সামনে যাচ্ছিল। অভিযোগ শুনে থানার টহলদারি কর্মীরা ওই যুবককে খুঁজতে শুরু করে। রাত আড়াইটে নাগাদ নারকেলডাঙার কসাই বস্তির তিন যুবক গ্রেফতার হয়। ধৃতদের নাম মহম্মদ আখতার ওরফে টিপু ওরফে দুলারা, মহম্মদ হাসনৈন এবং মহম্মদ আসলাম ওরফে সানি। তাদের বয়স ২০-২২।
তাদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও শ্লীলতাহানির মামলা হয়েছে। পুলিশ জানায়, কিছু দিন আগেই চুরির অভিযোগে ধরা পড়েছিল টিপু। সোমবার ধৃতদের শিয়ালদহের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অরুণ রাইয়ের আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
দমদম ক্যান্টনমেন্টের বাসিন্দা বছর কুড়ির ওই তরুণী পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করে জানান, তিনি ও তাঁর বোন চায়না টাউনের একটি পানশালায় গান করেন। রবিবার রাত সওয়া ১২টা নাগাদ ট্যাক্সি ভাড়া করে তাঁরা দুই বোন ও পানশালার এক পুরুষ কর্মী বাড়ি ফিরছিলেন। তরুণী পুলিশকে জানান, ওই পুরুষ কর্মী রাজাবাজারের একটি মেসে থাকেন। তিনি সেখানে নেমে যান।
তপসিয়ার বাসিন্দা ট্যাক্সিচালক মহম্মদ হাসিব বলেন, “ক্যানাল ইস্ট রোড ধরে কিছুটা যেতেই তিন যুবক পথ আটকায়। তারা মোটরসাইকেলে ছিল। এক যুবক জোর করে গাড়ির সামনের দরজা খুলে আমার পাশে বসে। মোটরসাইকেলের অন্য এক আরোহী আমার পাশে বসা যুবককে বলে, “টিপু তু উন লোগোকো লে কে আ।” তরুণীর অভিযোগ, ওই যুবক চালককে বলে, ‘ম্যায় যাঁহা লে যানা চাহতা হুঁ, ওহি চলিয়ে। নেহি তো গোলি কর দুঙ্গা!’ তরুণী পুলিশকে জানান, তিনি ও তাঁর বোন ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করেন। মোবাইলে বন্ধুদের ফোন করতে থাকেন। তরুণীর অভিযোগ, চালক গাড়ি চালাতে শুরু করার পরে টিপু নামে ওই যুবক তাঁকে জানায়, ফোন করে লাভ নেই। তাঁদের সঙ্গে পনেরো মিনিট কথা বলতে চায় সে।
তরুণী পুলিশকে জানান, এরই মধ্যে ট্যাক্সিচালক গাড়ি থামিয়ে দেন। সঙ্গে সঙ্গে ট্যাক্সি থেকে নেমে পালায় ওই যুবক। মোটরবাইক নিয়ে উধাও হয়ে যায় বাকি দু’জনও।
এ দিন অভিযুক্তদের আইনজীবী প্রবীরকুমার মুখোপাধ্যায় ও বরুণ দত্ত আদালতে জানান, পুলিশ অপহরণ এবং শ্লীলতাহানির মামলা করলেও লিখিত অভিযোগে তরুণী অপহরণ এবং শ্লীলতাহানির কথা জানাননি।
কী ভাবে ধরা পড়ল অভিযুক্তেরা? পুলিশ দাবি, দুই তরুণী ও চালকের কাছ থেকে অভিযুক্তদের চেহারার বর্ণনা শুনে পরিচিত দুষ্কৃতীদের ছবি দেখানো হয় তাঁদের। তার মধ্যে টিপুর ছবি দেখে চালক পুলিশকে জানান, ওই যুবকই গাড়িতে তাঁর পাশে ছিল। শনাক্তকরণ হতেই প্রথমে টিপু এবং পরে বাকি দু’জন গ্রেফতার হয়। |