রাতভর ঘেরাও করে যাদবপুরের পথে রাজাবাজার
চাকরির বাজারে মন্দার ঢেউ এ বার এসে পড়ল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও। আর তার জেরে সোমবার বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজের একদল ছাত্রছাত্রী ঘেরাও করে রাখলেন উপাচার্য, সহ-উপাচার্য (শিক্ষা), রেজিস্ট্রার এবং বিজ্ঞান বিভাগের সচিবকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লেসমেন্ট সেলের কোঅর্ডিনেটরকে অপসারণ, প্লেসমেন্ট সেল ঢেলে সাজা-সহ একগুচ্ছ দাবি নিয়ে এ দিন ঘেরাও করেন ছাত্রছাত্রীরা। বিক্ষোভকারীরা কলেজের সদর দরজা আটকে তালা দিয়ে দেওয়ায় রাত পর্যন্ত ক্যাম্পাস থেকে বেরোতে পারল না কোনও গাড়ি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে আটকে রইলেন বেশ কিছু শিক্ষক এবং বাইরের অতিথিও।
বিজ্ঞান কলেজের প্রধান ফটকে তালা। ছবি: রণজিৎ নন্দী
গত সপ্তাহেই র্যাগিংয়ের অভিযোগে দুই ছাত্রের শাস্তি পুনর্বিবেচনার দাবি তুলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল ছাত্রছাত্রী উপাচার্য, সহ-উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারকে টানা ৫০ ঘণ্টা ঘেরাও করে রেখেছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার না করায় শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে ঘেরাও তুলে নেয় ছাত্রছাত্রীরা। শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছিল কর্তৃপক্ষের অনড় মনোভাবেরই। ছাত্রছাত্রীদের ওই আচরণের প্রতিবাদও হয়েছিল বিভিন্ন মহল থেকে।
সোমবার রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজে ছাত্রছাত্রীরা যে ঘেরাও করেন, তাতে শুধু উপাচার্য সুরঞ্জন দাস, সহ-উপাচার্য ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়, রেজিস্ট্রার বাসব চৌধুরী বা বিজ্ঞান সচিব অমিত রায় নন, আটকে রইলেন অন্য শিক্ষকেরাও। ছাত্রদের এই ধরনের আন্দোলনকে অমানবিক, অগণতান্ত্রিক এবং অপরাধ বলে আখ্যা দিয়েছেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। যে ছাত্রছাত্রীরা এ দিন ঘেরাও কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরা সবাই বি-টেক-এর ছাত্র বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, প্লেসমেন্ট সেল যে কোনও কাজ করছে না, তা বিজ্ঞান শাখার সচিবকে আগেই চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। সে ব্যাপারে খোঁজখবর নিতেই এ দিন বিকেলে বিজ্ঞান কলেজে যান সহ-উপাচার্য (শিক্ষা)। বিজ্ঞান শাখার সচিবের ঘরে বসেছিলেন তিনি। সহ-উপাচার্যের আসার খবর পেয়েই একদল ছাত্রছাত্রী বিজ্ঞান সচিবের ঘরের সামনে বসে পড়েন। প্লেসমেন্ট সেলকে কেন অকেজো করে রাখা হয়েছে, তা জানতে চেয়ে তাঁরা ওই দুই কর্তাকে ঘেরাও করেন। বিক্ষোভকারীরা উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে চান। সন্ধ্যার কিছু আগে সেখানে পৌঁছন উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার। বিজ্ঞান সচিবের ঘরে তাঁদের ঢুকতে দেন বিক্ষোভকারীরা। তার পরে তাঁদেরও ঘেরাও করে রাখা হয়। তত ক্ষণে আরও বেশ কিছু, এমনকী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে যাওয়া কিছু ছাত্রও বিক্ষোভে যোগ দেন।
ক্ষুব্ধ উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। ছবি: রণজিৎ নন্দী
ঘেরাওকারীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, “আমরা আছি। তোমরা শিক্ষকদের গাড়িগুলি ছেড়ে দাও। শিক্ষকেরা আটকে রয়েছেন। বাইরে থেকে আসা বেশ কিছু অতিথিও আটকে রয়েছেন। তাঁদের ছেড়ে দিলে তোমাদের সঙ্গে আমি কথা বলব।” এই পরামর্শ অবশ্য কানেই তোলেননি ছাত্রেরা। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে শিক্ষকদের অনেকেই বিজ্ঞান কলেজের ভিতরে গাড়ি রেখে অন্য পথে বেরিয়ে যান। এর পরে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ গিয়ে বসে পড়েন সদর দরজার সামনে। তালা দিয়ে দেওয়া হয় কলেজের বাইরের গেটে।
সুরঞ্জনবাবুরা ফের জানান, বাকিদের ছেড়ে দিলে তাঁরা আলোচনায় রাজি। এই প্রস্তাব নিয়ে ছাত্ররা নিজেদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ আলোচনার পরে জানিয়ে দেন, উপাচার্য প্লেসমেন্ট নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করতে চাইলে সংবাদমাধ্যমের সামনেই তা করতে হবে। কিন্তু উপাচার্য সেই দাবি মানতে চাননি।
শেষে রাত সোয়া ১১টা নাগাদ কয়েক জন ছাত্র প্রতিনিধি উপাচার্য-সহ বাকি আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। পরে বাইরে এসে তাঁরা জানান, ৭ অক্টোবর নতুন প্লেসমেন্ট অফিসার নিয়োগ হবে। সেই মতো বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন স্থায়ী প্লেসমেন্ট অফিসার নিয়োগ করা হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ক্ষুব্ধ ছাত্ররা। তাঁদের বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রাজ্যপালকে অনুরোধ করে নিজেদের তহবিল থেকে টাকা দিয়ে স্থায়ী অফিসার নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু ক্ষোভ কমেনি। শেষে ফের এক দল ছাত্র আলোচনার জন্য ভিতরে ঢোকেন। পরে কেমিস্ট্রির ডিন-সহ কয়েক জন আধিকারিক ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। প্লেসমেন্ট অফিসার সম্পর্কে বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভকে সঙ্গত বলে তাঁরা আশ্বাস দেন যে, এর পর থেকে নিয়োগের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আরও একগুচ্ছ আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরেও ছাত্ররা স্থায়ী প্লেসমেন্ট অফিসার নিয়োগের প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ চালিয়ে যান।
চলছে ঘেরাও। —নিজস্ব চিত্র
চাকরির ক্ষেত্রে মন্দার প্রভাব যে সর্বত্র পড়ছে, তা মনে করিয়ে দিয়ে উপাচার্য বলেন, “এর মধ্যেও আমরা চেষ্টা করছি। ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে। ইন্টারভিউয়ে ছাত্রছাত্রীদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু এই ধরনের আন্দোলন করলে যাঁরা চাকরি দেবেন, তাঁদের প্রতিক্রিয়া কী হবে তা কি ছাত্রছাত্রীরা বুঝতে পারছেন না?”
উপাচার্যের বক্তব্যের সঙ্গে একমত বণিকসভার প্রতিনিধিদের অনেকেই। বেঙ্গল চেম্বারের সভাপতি কল্লোল দত্ত বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব রাজ্যেই মন্দার কারণে কর্মসংস্থানে ব্যাপক ভাটা চলছে। চাকরি যদিও বা সামান্য কিছু হচ্ছে, তা তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে।” তাঁর মতে, এখন একজন মেকানিক্যাল বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকেও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে চাকরি করতে যেতে হচ্ছে। কারণ উৎপাদন শিল্পে প্রবল মন্দা।
যাদবপুরের পরে যে ভাবে এ দিন রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ঘেরাও করা হল, তাতে উদ্বিগ্ন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন, “শিক্ষাক্ষেত্রে এই ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটছে বলে পুলিশ হস্তক্ষেপ করতে পারছে না। তবে আমি আবার বলছি, ঘেরাও কোনও পন্থা নয়। আমি চাইব ছাত্রছাত্রীরা যেন ঘেরাও তুলে আলোচনায় বসেন।”

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.