ভাস্করজ্যোতি মজুমদার • সাঁইথিয়া |
পঞ্চায়েত নির্বাচনে গোটা জেলায় তৃণমূলের আধিপত্য। এমনকী সাঁইথিয়া বিধানসভা এলাকার ৬টি পঞ্চায়েতেও মুছে গিয়েছে কংগ্রেস। ঐতিহ্যগত ভাবে পুরসভা, স্কুল-কলেজে কংগ্রেসের আধিপত্য রয়েছে। সূচনা থেকেই প্রায় সব স্কুলের পরিচালন সমিতিতে কংগ্রেস রয়েছে। তবে এই এলাকার চারটি স্কুলের মধ্যে রবিবার যোগেশ্বরী দত্ত বালিকা বিদ্যালয়ে স্কুল পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন হয়। সেখানে ০-৬ এ পরাজিত হয় কংগ্রেস। অথচ শুরুর দিন থেকেই এই স্কুলের পরিচালন সমিতি কংগ্রেসের দখলে। শুধু দখলেই নয়, বিরোধীরা একটি আসনও পায়নি। সেই ফলাফল এ বার একেবারে উল্টে গেল।
২০১৪ সালে সাঁইথিয়া পুরসভা নির্বাচনের আগে উল্লেখযোগ্য একটি স্কুলে কংগ্রেসের হার রাজনৈতিক দিক থেকে অন্য ইঙ্গিত যাচ্ছে বলে, মনে করছেন এলাকার বাসিন্দা থেকে নেতাকর্মী সকলেই। তবে এই হার পুরভোটে প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
নিয়ম মেনে রবিবার সাঁইথিয়া যোগেশ্বরী দত্ত বালিকা বিদ্যালয়ের স্কুল পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন হয়। কংগ্রেস ও তৃণমূল ৬ জন করে প্রার্থী দাঁড় করায়। বামফ্রন্টের তরফে ৪ জন প্রার্থী দাঁড় করানো হয়। মোট ভোটার ৪৬৭। ভোট পড়েছে ৪০৯। বাতিল হয়েছে ২৪টি ভোট। প্রসঙ্গত, ১৯৮৭ সালে স্কুলটি যখন গড়ে ওঠে, তখন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস হত। ১৯৯৮ সালে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়। প্রথম দিকে মনোনয়নের মাধ্যমে পরিচালন সমিতি গঠিত হত। ২০০৪ সালে প্রথম নির্বাচন হয়। তখনই ৬-০ তে জেতে কংগ্রেস। পরে নানা জটিলতার কারণে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। স্কুলে প্রশাসক বসে। ২০০৯ সালে ফের নির্বাচনে ৬টি আসনই পায় কংগ্রেস। যোগেশ্বরী দত্ত বালিকা বিদ্যালয়ের মতো শহরের বাকি তিনটি স্কুলেও গত নির্বাচনে সবকটি আসনে জয়ী হয় কংগ্রেস। বাম জমানায়ও তার কোনও হেরফের হয়নি। সাঁইথিয়া অভেদানন্দ কলেজের ছাত্রসংসদও ছাত্র পরিষদের দখলে। এমনকী ১৯৯৪-এর প্রথম পুরনির্বাচন থেকেই বোর্ড কংগ্রেসের দখলে (১৬টি আসনের মধ্যে ১২টি কংগ্রেসের)। তৃণমূল, সিপিএম, ফব, বিজেপি একটি করে আসন পায়।
সব ঠিকঠাক চললে আগামী জুন মাসে সাঁইথিয়ায় পুরনির্বাচন হবে। তার আগে শহরের একটি স্কুলে ৬-০ থেকে ০-৬ এ পরাজয়কে অন্য চোখে দেখছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। তবে বিদায়ী সম্পাদক মনিমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই স্কুলে পাশের গ্রাম-গঞ্জের পড়ুয়ার সংখ্যা বেশি। নির্বাচনে তারই প্রভাব পড়েছে।” তিনি স্পষ্ট করে কিছু না বললেও পুরপ্রধান বীরেন্দ্রকুমার পারখ অভিযোগ করেন, “রাজ্যে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে নানা প্রলোভন, হুমকি দিচ্ছে তৃণমূল। যার প্রভাব স্কুল ভোটে পড়েছে।” তবে পুরভোটে এর প্রভাব পড়বে না বলে দাবি বীরেন্দ্রবাবুর। অন্য দিকে, তৃণমূলের শহর সভাপতি মানস সিংহ, কার্যকরী সভাপতি সাধন মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “পরিচ্ছন্ন নির্বাচন হওয়ায় তৃণমূল ৬-০ ব্যবধানে জিতেছে। শহরের সমস্ত স্কুল-কলেজ ও পুরসভার ভোটে যদি কোনও কারচুপি না হয়, তা হলে কংগ্রেস ধুয়ে মুছে যাবে।” |