অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় • রামপুরহাট |
স্কুলের ক্লাস বাদ দিয়ে শিক্ষকদের যেন ভোটার তালিকা সংশোধনের মতো কাজে নিয়োগ না করা হয়, এই আবেদন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন প্রাইমারি স্কুলের এক শিক্ষক। আজ মামলার প্রথম শুনানি ছিল। রাজ্য সরকারের আইনজীবী উপস্থিত থাকলেও, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে কেউ না থাকায় আগামী সোমবার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
বীরভূমের রামপুরহাট দক্ষিণ চক্রের বড়শাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শশীশেখর সাহাকে ২ সেপ্টেম্বর থেকে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ করতে বলা হয়। কিন্তু তিনি যোগ দেননি। উদয়পুর গ্রামের বাসিন্দা ২৯ বছরের এই যুবকের বক্তব্য, “স্কুল চলাকালীন ভোট সংক্রান্ত কাজে গেলে সিলেবাস শেষ হবে না। শিক্ষার অধিকার আইনে বলা আছে, ২০০ দিন ক্লাস চালু রাখতে হবে। ভোটের কাজে গেলে তা সম্ভব নয়।” তাঁর দাবি, পড়ুয়াদের স্বার্থেই তিনি ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে যোগ দেননি।
রামপুরহাটের মহকুমাশাসক রত্নেশ্বর রায় বলেন, “সব জায়গায় শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। ওঁকেও নিয়োগ করা হয়েছিল। রাজি হননি।” প্রথমে বিডিও, পরে মহকুমাশাসক শশীবাবুকে ‘শো-কজ’ করেন। অভিযোগ, পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও মৌখিক ভাবে বলেন এক প্রশাসনিক কর্তা। তিনি কোর্টে যান। তাঁর আইনজীবী প্রসেনজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, ২০০৭ সালে সেন্ট মেরিজ বনাম নির্বাচন কমিশন মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, শুধু স্কুলের সময়ের বাইরেই স্কুল শিক্ষকদের অন্য দায়িত্ব দেওয়া যাবে। “রায়ের কপি আবেদনের সঙ্গে দিয়েছি,” বলেন তিনি।
শশীবাবুর এই প্রতিবাদকে স্বাগত জানিয়ে নলহাটির করিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘জাতীয় আদর্শ শিক্ষক’ পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীনবন্ধু চৌধুরী বলেন, “এই ধরনের প্রতিবাদ করার ইচ্ছা সব শিক্ষকেরই আছে। প্রশাসনিক হুমকি ও চাপে করে উঠতে পারেন না।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু বিদ্যালয় পরিদর্শকও স্কুল দিবসে নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে শিক্ষকদের নিয়োগের বিরোধিতা করেন। বীরভূম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি রাজা ঘোষও বলেন, “নির্বাচনের কাজে শিক্ষকদের নিয়োগ করায় বাস্তবিকই স্কুলের ক্ষতি হচ্ছে। কমিশনকে শিশুদের শিক্ষার অধিকার আইন সংক্রান্ত বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখার কথা বলব।” |