আজ বিপর্যয়েই আশ্রয় খুঁজছে সিপিএম
সিপিএমকে নিশ্চিহ্ন করে আজ বর্ধমান শহরের দখল নিতে চাইছে তৃণমূল।
কিন্তু সব আসনে হারার দিকে সম্ভবত আরও বেশি করে চেয়ে রয়েছেন সিপিএমের জেলা নেতৃত্ব। সেই নেতৃত্ব, তেমন কোনও রক্তপাত, খুন-জখম, বোমা-বন্দুকের দাপাদাপি না থাকা সত্ত্বেও যাঁরা সাতসকালে প্রার্থী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যে সিদ্ধান্ত আলিমুদ্দিনের একাংশ থেকে শুরু করে নয়াদিল্লির এ কে গোপালন ভবনেরও প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে।
আজ, মঙ্গলবার বর্ধমান টাউন স্কুল এবং গুসকরার পি পি ইনস্টিটিউশনে পুরভোটের গণনা। বর্ধমান শহর যখন ফাঁকা মাঠ, গুসকরায় কার্যত মরণ-বাঁচনের লড়াই। পাঁচ বছর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে মেতে থেকে পুর পরিষেবা প্রায় শিকেয় তুলে দেওয়ার পরেও তৃণমূল ফের সেখানে ফিরতে পারে কি না, ফিরলেও কত আসন ধরে রাখতে পারে, সে দিকে তাকিয়ে আছে গোটা জেলা। কিন্তু সিপিএম সরে দাঁড়ানো সত্ত্বেও গোটা রাজ্যের নজর বর্ধমানের দিকে।
গত শনিবার, পুরভোটের দিন সকাল সাড়ে ১০টাতেই সন্ত্রাস-রিগিংয়ের অভিযোগ তুলে ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছিল বামফ্রন্ট। সমস্ত বুথ থেকে পোলিং এজেন্ট তুলে নেওয়া হয়। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার জানিয়ে দেন, মঙ্গলবার গণনাকেন্দ্রেও তাঁদের কোনও এজেন্ট থাকবেন না। এর পরেও যদি কোনও বাম প্রার্থী জিতে যান, তিনি পুরসভায় যাবেন না। ঠিক ১৯৭২ সালে যেমন বিধানসভা নির্বাচন থেকে প্রার্থী তুলে নেওয়া হয়েছিল এবং জয়ী প্রার্থীরা বিধানসভার অধিবেশনে যেতেন না।
বর্ধমান টাউন স্কুলে স্ট্রং রুমের সামনে পাহারা। —নিজস্ব চিত্র।
রাজনৈতিক মহলের মতে, প্রার্থীরা জিতলেও পুরসভায় যাবেন না মানে আগামী পাঁচ বছর ওয়ার্ডের মানুষ যথাযথ পরিষেবা পাবেন না। সকাল-সকাল প্রার্থী তুলে নেওয়া মানে তখনও যাঁরা ভোট দেননি সেই সিংহ ভাগ ভোটারকে বলে দেওয়া যে, আমাদের প্রার্থীকে ভোট দেবেন না। পরিষেবা চাইলে অন্য কাউকে ভোট দিন। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল যদি পুর এলাকার ৩৫টি আসনেই জেতে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। রিগিংয়ের জন্যই এমন ফল হয়েছে না কি প্রার্থী প্রত্যাহারের পরে ভোটারদের অনাস্থার কারণে, তা প্রমাণের রাস্তাই থাকে না।
কিন্তু সিপিএম যে সর্বনাশের পথ চেয়েই বসে আছে, তা তাদের জেলা সম্পাদকের কথাতেই পরিষ্কার। অমলবাবু বলেন, “যদি আমরা এই অবস্থাতেও ১০-১২টা আসন পেয়ে যাই, বুঝতে হবে ৩৫টাই পেতাম।” যদিও দলের নিচুতলার কর্মীদের একাংশ মনে করছেন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তৃণমূলের একাংশ কাস্তে-হাতুড়ি বা হাত চিহ্নে ভোট দিয়ে থাকতে পারেন। তাতে কিছু হিসেব পাল্টে যেতে পারে। গত বিধানসভা নির্বাচনে যে ৩৫টি ওয়ার্ডেই পিছিয়ে পড়েছিলেন নিরুপম সেন, তার পুনরাবৃত্তি না-ও ঘটতে পারে।
গত দু’দিন ধরে গোটা বর্ধমান তথা রাজ্য জুড়ে এই ধরনের আলোচনাই লোকের মুখে-মুখে ফিরেছে। বস্তুত, কলকাতার তৃণমূল ভবনও ততটা আশা করছিল না। শেষ মুহূর্তেও শাসকদলের রাজ্য নেতারা বলেননি, বিধানসভার সাফল্য অপরিবর্তিত থাকবে। বরং সব দিক বাঁচিয়ে বলা হয়েছে, অন্য সব জায়গার মতো বর্ধমান শহরেও দল ভাল ফল করবে। এই যখন অবস্থা, প্রার্থী প্রত্যাহার করা কি যুক্তিযুক্ত ছিল? অমলবাবুর দাবি, “প্রার্থী প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়ে অসংখ্য ফোন-এসএমএস পেয়েছি। সকলেই আমাদের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। আমি মনে করি, এই সিদ্ধান্তের পিছনে বর্ধমান শহরের ৮০ ভাগ মানুষ আছেন।”
সিপিএমেরই কিন্তু অনেকে মনে করছেন, বহু জায়গাতেই এর থেকে অনেক শক্ত লড়াই লড়তে হয় দলকে। বর্ধমানের ‘অতীত গরিমা’কে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে গণতান্ত্রিক নির্বাচন এড়িয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না। সংসদীয় রাজনীতিতে এই ঘটনা খারাপ নজির হিসেবেই থাকবে। অমলবাবু অবশ্য দাবি করছেন, “এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের কারও কোনও প্রশ্ন নেই। নিরুপমদা, মদনদা, বিমানদা, বুদ্ধদার সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে আগামী দিনে আমরা রাজনৈতিক ভাবে লাভবান হব।” আর ফাঁকা মাঠে গোল করার সুযোগ পেয়ে তৃণমূলের বর্ধমান জেলা পরিদর্শক অলোক দাস বলছেন, “মানুষ যে ভাবে সিপিএমের বিরুদ্ধে নদীর স্রোতের মতো ভোট দিয়েছেন, তাতে ৩৫-০ ফলে জেতা উচিত।”
মদন ঘোষ-নিরুপম সেনদের শহরে যখন এই অবস্থা, গুসকরায় ভাল ফলের আশা করছে সিপিএম। দলের গুসকরার জোনাল সম্পাদক অচিন্ত্য মজুমদার যদিও বলেন, “অন্তত চারটি ওয়ার্ডে রিগিং করেছে তৃণমূল। ৪, ৮, ৯ ও ১৫ নম্বরে মানুষ ভোট দিতে পারেরননি। এর মধ্যে দু’টি ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলের প্রাক্তন পুরপ্রধান চঞ্চল গড়াই ও উপ-পুরপ্রধান মল্লিকা চোঙদার।” প্রসঙ্গত, এই দুই নেতা-নেত্রীর কাজিয়াতেই গত পাঁছ বছর মুখর থেকেছে গুসকরা। চঞ্চলবাবুকে দল থেকে বহিষ্কৃতও হতে হয়েছিল। কিছু দিন আগেই ফের দলে ফিরে মল্লিকাদেবীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভোটে নামেন।
চঞ্চলবাবুর দাবি, “আমার প্রতিদ্বন্দ্বী নিজেই ভোটের দিন টিভি ক্যামেরার সামনে বলেছেন, ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তার পরে আর কী বলার আছে? কে কাকে ভোট দিয়েছেন, তা জানা সম্ভব নয়। তা হলেও বলতে পারি, আমরা ১৬টির মধ্যে ১২-১৩টি ওয়ার্ড পাব।” মল্লিকাদেবীও বলেন, “আমরা ভোটে কোনও অশান্তি কিরিনি। ১১-১২টা ওয়ার্ডে পাব বলে আশা করছি।” অচিন্ত্যবাবুর কথায়, “আমরা পুরপ্রধানকে শহরের ‘শান্তির প্রতীক’ বলেই জানতাম। কিন্তু ভোটের দিন উনি মুখোশটা খুলে ফেলেছেন। তবু গত বারের চেয়ে আমাদের ফল ভাল হবে বলে আশা করছি।”
পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “গুসকরা ও বর্ধমানে ভোটের দিনের মতোই যথেষ্ট নিরাপত্তা থাকছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) দেবাশিস সরকার বর্ধমানের এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) তরুণ হালদার গুসকরার দায়িত্বে থাকছেন। দুই শহরে থাকছেন দু’জন করে এসডিপিও এবং ডিএসপি পর্যায়ের অফিসার। বর্ধমানে মোট ২০০ ও গুসকরায় ১০০ পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হচ্ছে। গণনাকেন্দ্রে ঢোকার আগে তল্লাশি এবং অন্য বিধি-নিষেধও বলবৎ থাকছে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.