শহরে শক্তিপরীক্ষা
ক পুরসভায় তিন দশক রাজত্ব করেছে বামেরা। কিন্তু গত বিধানসভা ভোটে সিপিএম কার্যত উড়ে যায়।
অন্যটি গত বারই বামেদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু পরিবর্তনের ভোটেও সেখানে পাঁচটি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বামেরা।
এই বৈপরীত্য নিয়েই আজ, শনিবার পুর নির্বাচনে যাচ্ছে দুই শহর বর্ধমান ও গুসকরা।
বর্ধমান শহরে ৩৩ বছর ক্ষমতায় থাকার পরে এ বার সিপিএমের কার্যত অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। কেননা যত সময় গিয়েছে, ততই ভোটব্যাঙ্কে ক্ষয় হয়েছে তাদের। ২০০৩ সালে যেখানে ৩৫টির মধ্যে ৩৪টি ওয়ার্ডই তাদের দখলে ছিল, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বের পরে ২০০৮ সালে তা ৩০-এ নেমে যায়। রাজ্য জুড়ে বইতে থাকা পরিবর্তনের চোরাস্রোতের প্রেক্ষিতে অবশ্য তা মন্দ ফল ছিল না।
কিন্তু মোক্ষম আঘাতটা আসে ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে। কার্যত পুর এলাকা নিয়ে গঠিত বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে অনামা তৃণমূল প্রার্থীর কাছে ভূপাতিত হন প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন। ৩৫ ওয়ার্ডের প্রতিটিতে তৃণমূলের চেয়ে কম ভোট পায় সিপিএম। প্রশ্ন হল, এ বার সেই ধারাই বজায় থাকবে না কি বামেরা কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াবে?
ভোটকেন্দ্রের বাইরে কড়া প্রহরা। বৃহস্পতিবার ছবি তুলেছেন উদিত সিংহ।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার বলছেন, “বিধানসভা বা লোকসভা ভোটের সঙ্গে পুরভোটকে গুলিয়ে ফেলবেন না। বামফ্রন্ট দীর্ঘদিন ধরে এই শহরে বিপুল সম্পদ সৃষ্টি করেছে। শান্তি, নিরাপত্তা, পরিষেবা দিয়েছে। শহরের মানুষ তা লুঠ হতে দিতে পারেন না।” তা হলে পুরভোটে বিপুল জয়ের ধারাই অব্যাহত থাকবে? এ বার কিন্তু তত প্রত্যয়ী শোনায় না অমলবাবুর গলা। বরং তিনি অভিযোগ করেন, “তৃণমূল বাড়ি-বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে, সুপ্ত সন্ত্রাস চালাচ্ছে, ওরা আমাদের ভোটারদের ভোট দিতেই দেবে না।”
সিপিএমের বর্ধমান শহর জোনাল সম্পাদক তাপস সরকার অবশ্য দাবি করেন, “মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে আমাদের যথেষ্ট আশা রয়েছে।” পুরসভার বিদায়ী বিরোধী দলনেতা, তৃণমূলের সমীর রায়ের দাবি, “শান্তিতেই ভোট হবে। বর্ধমান পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডেই আমাদের জয় হবে বলে আশা করছি।”
সন্ত্রাসের একই অভিযোগ ছাড়া গুসকরার অবস্থা কার্যত উল্টো। ২০০৩ সালে তৃণমূল ১৬টির মধ্যে মাত্র তিনটি ওয়ার্ড জিতেছিল। পরের বার, ২০০৮ সালে মোট ওয়ার্ড কমে ১৫টিতে দাঁড়ায়। সিপিএমের হাত থেকে পুরবোর্ড কেড়ে নেয় তৃণমূল। বামফ্রন্ট মাত্র পাঁচটি ওয়ার্ড ধরে রাখতে পেরেছিল। ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে ১৩টি ওয়ার্ডে কংগ্রেস প্রার্থীর (তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতা ছিল) চেয়ে পিছিয়ে ছিল সিপিএম। বিধানসভা ভোটে কিন্তু সংখ্যাটা ১১-য় নেমে আসে।
সিপিএমের গুসকরা জোনাল সম্পাদক অচিন্ত্য মজুমদারের দাবি, “এই পুরসভায় যেটুকু উন্নয়নের স্বাদ মিলেছে, তা আমাদেরই আমলে। নাগরিক পরিষেবার অভাবে মানুষ ক্ষুব্ধ। সুযোগ পেলে তাঁরা ক্ষোভ উগরে দেবেন।” বস্তুত, তৃণমূল বোর্ড দখল করার পরে পুরপ্রধান চঞ্চল গড়াই ও উপপ্রধান মল্লিকা চোঙদারের লাগাতার দ্বন্দ্বের জেরে উন্নয়ন গতি পায়নি। এক সময়ে চঞ্চলবাবু দুর্নীতির অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কৃতও হন। এখন ফিরে ভোটে লড়ছেন।
অমলবাবুর দাবি, “তৃণমূলের শাসনে সর্বত্রই মানুষ বীতশ্রদ্ধ। এ বার ভোটে তার প্রতিফলন হবে।” তবে সিপিএমের এই দাবি নস্যাৎ করে চঞ্চলবাবু বলেন, “গুসকরার মানুষ পাঁচ বছর আগেই সিপিএমকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিধানসভা ভোটেও তো আমরা ১১টিতে এগিয়ে ছিলাম। আমরাই বোর্ড গড়ব।”
গুসকরার প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ড ঘুরে কিন্তু সিপিএম প্রার্থীদের থেকে প্রচারে বাধা পাওয়ার অভিযোগ মিলেছে। অনেক জায়গায় ফ্লেক্স, ব্যানার, ফেস্টুন ছেঁড়ার অভিযোগও উঠেছে। এই পুরসভা মঙ্গলকোট ও বোলপুরের খুব কাছে। বহিরাগতদের অনুপ্রবেশের আশঙ্কাও রয়েছে তাই। তবে গুসকরা পুরসভার প্রবেশ পথে তিনটি জায়গায় যানবাহন তল্লাশি করা হবে বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।
এ দিনই জেলা কংগ্রেস (গ্রামীণ) সভাপতি আজিজুল হক মণ্ডল ও অন্য নেতারা পুলিশ সুপারের কাছে একটি স্মাকরলিপি দেন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য প্রতিটি বুথে যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার দাবি জানান তাঁরা। দলের পোলিং এজেন্টদেরও নিরাপত্তা দিতে হবে বলে তাঁরা দাবি করেছেন। শান্তিপূর্ণ ভোট হলে তাঁরাও ভাল ফল করার ব্যাপারে আশাবাদী।
পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, দুই পুরসভার ভোটেই প্রতিটি বুথে থাকছে দুই সশস্ত্র ও চার লাঠিধারী পুলিশ। যে সমস্ত চত্বরে দু’টি বুথ আছে, সেখানে পুলিশের সংখ্যা না বাড়লেও, যে সব চত্বরে ৩টি বুথ আছে সেখানে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়াবে সাতে। চার বুথের চত্বরে এক এসআই, দুই সশস্ত্র ও ছয় লাঠিধারী কনস্টেবল থাকবেন। এ ছাড়া সেক্টর ও রাস্তায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

আজ পুরভোট
বর্ধমান আমরা দখল করব। গুসকরা আমাদের ছিল, থাকবে। কোথাও সন্ত্রাস হচ্ছে বলে শুনিনি।
মুকুল রায়,
গত বারের বিধানসভা ভোটের ফল দিয়ে পুরভোটকে মাপা ঠিক হবে না। সন্ত্রাস না হলে জিতব।
অমল হালদার,
প্রতি বুথে নিরাপত্তা চাই। পোলিং এজেন্টরা যদি বুথে থাকতে পারেন, আমরা ভাল ফল করব।
আজিজুল হক মণ্ডল,
জেলা মোট ওয়ার্ড মোট বুথ প্রার্থী ভোটার
বর্ধমান ৩৫
২৯৪ ১১৬ ২২৪৮২১
গুসকরা ১৬ ২৯ ৪৬ ২৩৮০৫

পুরনো খবর



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.