অনুখাদ্যর ঘাটতির কারণে শুকিয়ে যাচ্ছে ধানগাছ। দেখা যাচ্ছে হলুদ রঙের ছোপ।
বর্তমানে জেলার কৃষিজমিতে রোপণ করা হয়েছে আমন ধান। বেশ কিছুদিন ধরেই কালনা মহকুমার পাঁচটি ব্লকে ধানের জমিতে চলছে মাজরা পোকার আক্রমণ। সম্প্রতি কালনা ১ ব্লকের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা আশিস দত্ত ও পার্থ ঘোষ। সুলতানপুর পঞ্চায়েত এলাকায় নমুনা পরিদর্শন করতে গিয়েই কৃষি বিশেষজ্ঞদের নজরে পড়ে গাছের অনুখাদ্যের ঘাটতির লক্ষণ। নমুনা বিশ্লেষণ করে তাঁরা নিশ্চিত হন রোগটি হচ্ছে মলিব ডিনাম নামের একপ্রকার অণুখাদ্যর ঘাটতির জন্য। এই রোগে ধানগাছের উপরের পাতা সরু ও হলুদ হয়ে যায়। ধান গাছকে বাইরে থেকে দেখে কিছু বোঝা না গেলেও ধান গাছের ভিতর অপুষ্ট শিস তৈরি হয়। এর ফলে ধানের ভিতর চাল মেলে না। |
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার মাটির চরিত্র অনুযায়ী ধান গাছ মাটি থেকেই অনুখাদ্য সংগ্রহ করে। মলিব ডিনাম হল একধরণের অনুখাদ্য। কালনা মহকুমার সহকারি কৃষি আধিকারিক স্বপন কুমার মারিক বলেন, “মহকুমার যে কয়েকটি জায়গায় এই রোগ দেখা গিয়েছে, সেখানে চাষ হয়েছে মূলত নীচু জমিতে অথবা এমন জমিতে যেখানে জল জমে রয়েছে। সেই কারণেই হয়ত জৈব খাদ্যর অভাব ঘটছে। সুষম সারের ব্যবহার না হওয়া, জৈব সারের ঘাটতি, অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার, একই জমিতে দীর্ঘদিন একই ফসল চাষ করে যাওয়া এই রোগের পিছনে দায়ী। শুধু কালনা ১ ব্লক নয়, জেলার মধ্যে পূর্বস্থলী ১, ভাতার ব্লকেও মিলেছে এই রোগের নমুনা। জেলার অপর কৃষি অধিকর্তা শুভেন্দু হাজরা বলেন, “সাধারণত উত্তরবঙ্গে দেখা মেলে এই রোগের। জেলায় এর আগে এই রোগ দেখা যায়নি। কেন এই রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে সেটা জানার জন্য মাটি পরীক্ষা করা জরুরি।”
শুধু মলিব ডিনাম নয়, জেলার ধানের জমিতে দেখা যাচ্ছে খোলাধসা। ক্ষতিগ্রস্থ চাষিরা ভিড় করছেন কৃষি দফতরে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেন, মলিব ডিনামের ঘাটতির মেটাতে গেলে অণুখাদ্য ও জিঙ্কের মিশ্রণ ৪০ থেকে ৪৫ দিন বয়সী গাছের উপর স্প্রে করলে চাষিরা উপকৃত হবেন। খোলাধসা রোগে ধান গাছে নস্যি রঙের দাগ হয়। এই রোগ প্রতিরোধ করতে প্রতি লিটার জলে ০.৭৫ থেকে ১ এম এল ভ্যালিডামাইসিন ও প্রতি লিটারে ১ এম এল প্রতিকনাজোল মিশিয়ে স্প্রে করলে চাষিরা উপকার পাবেন। এছাড়াও জেলার কয়েক জায়গায় মিলিবাগ বলে একপ্রকার রোগ দেখা গেলেও সেটা নিয়ে আপাতত উদ্বেগের কারণ নেই বলে মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। |