কাজ হয়নি, নিজেই
বলছেন ‘ফুলনদেবী’
সিপিএম তাঁকে ভয় পায় খরখরে জিভের কারণে।
তৃণমূলের একাংশ তাঁকে ভয় পায় অনুব্রত মণ্ডলের কারণে।
দলে ও দলের বাইরে প্রতিদ্বন্দ্বী মাত্রই তাঁকে ভয় পায় পোষা ‘ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী’র কারণে (নিন্দুকে বলে)।
নামটি অবশ্য তাঁর ভারী কোমল। সে নাম নিয়ে রবীন্দ্রনাথ কত না কাব্য করেছেন, গান বেঁধেছেন যখন প্রথম ফুটেছে কলি...
গুসকরার মল্লিকাবনে তিনি কিন্তু নিছকই নিরুপদ্রব মল্লিকা নন। তিনি মল্লিকা চোঙদার, তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত বিগত পুরবোর্ডের ডাকসাইটে উপ-পুরপ্রধান। তৃণমূলের গৌর-নিতাই থেকে সিপিএমের সাধুসন্ত, সকলের মাথাব্যথার কারণ।
কিন্তু গুসকরার বিখ্যাত চোঙদার বাড়ির বউ মল্লিকার নিজের মাথাব্যথা এখন ওয়ার্ড বদল। এর আগে পরপর তিন বার যে ১১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তিনি জিতে এসেছেন, পুনর্বিন্যাসের কারণে তা ভেঙে গিয়েছে। দাঁড়াতে হয়েছে নতুন ৮ নম্বর ওয়ার্ডে, যার সিংহ ভাগ এলাকা গত বার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে ছিল। কিন্তু উন্নয়ন তত হয়নি বলে অভিযোগ। আপাতত সেই ভূত মল্লিকাকে তাড়া করছে।
“আমি বলছি, সমস্যা যখন আছে তার সমাধানও আছে। আমি আগের ওয়ার্ডে সমস্যা মিটিয়েছি। তাই বলছি, পুরনো ১১ নম্বর ওয়ার্ডটা ঘুরে দেখুন। যদি মনে হয়, কাজ করেছি, ভোটটা দেবেন। যদি মনে হয় করিনি, তা হলে...” শেষটুকু অনুচ্চারিতই রেখে দেন মল্লিকা।
মল্লিকা চোঙদার। দেবেন্দ্রনাথ সাধু।
১১ নম্বর দেখাতে হচ্ছে কেন? আগের বার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে তা হলে কাজ হয়নি?
চেয়ারে পা তুলে বসে বরাবরের ঠোঁটকাটা মল্লিকা বলেন, “দেখুন, কাজ হয়েছে না হয়নি, সেটা আমি বলব না। এটুকু বলতে পারি, মানুষের প্রবল চাহিদা রয়েছে নিকাশি নালা আর রাস্তাঘাটের।”
যা শুনে আকাশ থেকে পড়েছেন পুরনো ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বম্ভর মণ্ডল। তাঁর দাবি, “আমার ওয়ার্ডে প্রচুর কাজ হয়েছে। ঢালাই রাস্তা থেকে রাস্তার আলো। কাজ না করার অভিযোগ ফালতু!”
সিপিএমের প্রার্থী দেবেন্দ্রনাথ সাধু অবশ্য মল্লিকার কথারই প্রতিধ্বনি করেছেন। উপ-পুরপ্রধান এই ওয়ার্ডে ‘বহিরাগত’ হলেও প্রাক্তন সমবায় কর্মী দেবেন্দ্রবাবু ‘পাড়ার দাদা’। তাঁর কথায়, “এই ওয়ার্ডে রাস্তা-নর্দমা সব গ্রাম্য অবস্থায় পড়ে। পাঁচ বছরে যে কাজ হয়নি সেটাই ভোটারদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছি।”
আর গোটা গুসকরায়?
চোখ বুজে আঙ্গুলের কর গুনতে-গুনতে বিদায়ী উপ-পুরপ্রধান হিসেব কষেন ৩, ১০, ১২ ও ১৩ নম্বরে পানীয় জলের সমস্যা তীব্র। প্রচুর কাঁচা রাস্তা রয়ে গিয়েছে ১, ২, ৪, ৮, ৯, ১২, ১৩, ১৫ আর ১৬ নম্বরে। ৫, ৬, ৭,৮, ৯ নম্বরে নিকাশির সমস্যা।
এ-ত? তার মানে তো আপনাদের আমলে গুসকরার মানুষ সত্যিকারের পুর পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন?
এক মূহুর্তের জন্য থমকে যান মল্লিকা। তাঁর মেজাজ সর্বজনবিদিত। কিন্তু একটুও না রেগে, না চেঁচিয়ে খুব শান্ত গলায় মল্লিকা বলেন, “এই পুরসভা তো সবে ১৯৯৮ সালে নোটিফায়েড এরিয়া থেকে পুরসভা হয়েছে। সত্যি বলতে এটা তো এখনও গ্রাম, শহর হতে সময় লাগবে। সমস্ত সমস্যা মিটতেও। আমাদের পুরসভা পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে খুব জোর ৬৫ শতাংশ সফল। কিন্তু পাঁচ বছরেই কি সব কাজ করে দেওয়া সম্ভব?”
গত পাঁচ বছরে আর কিছু কাজ হোক বা না হোক, মল্লিকা যে অনেক পরিণত হয়েছেন, বলাই বাহুল্য। দলে বরাবর আউশগ্রামের পর্যবেক্ষক তথা বীরভূম জেলা সভাপতি পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত মল্লিকা এখন ঘরে-বাইরে অনেকখানি ভারসাম্য রেখে চলছেন। এক সময়ে ‘অনুব্রত-বিরোধী’ পুরপ্রধান চঞ্চল গড়াইয়ের সঙ্গে তাঁর আলোকবর্ষের দূরত্ব ছিল। সম্পর্কটা এমন তলানিতে ঠেকেছিল যে দু’জনে আলাদা সময়ে পুরসভায় আসতেন। দুই কর্ণধারের এই ঠোকাঠুকিতে পুরসভার পরিষেবা লাটে ওঠার অভিযোগও পুরনো।
এ বার কিন্তু সেই চঞ্চল গড়াইয়ের সঙ্গেই এক সভায়, এক মঞ্চে, পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে মল্লিকাকে। চঞ্চলবাবু শিবির বদলে অনুব্রতর প্রতি আনুগত্য দেখানোতেই এই পরিবর্তন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। মল্লিকা অবশ্য বলছেন, “একটা কথা বলতে পারি। আমার আর পুরপ্রধানের ঘরটা আলাদা ছিল। মতপার্থক্য ছিল না। উনি বহিষ্কৃত হয়েও রোজ পুরসভায় আসতেন। কাজও করতেন। আমাদের মধ্যে কোনও সমস্যা নেই। সবাই মিলে উন্নয়নের কাজ চালিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য।”
সিপিএমের দেবেন্দ্র সাধু কিন্তু প্রশ্ন তুলেছেন, “মল্লিকা যদি কাজের নিরিখেই ভোট চাইছেন, আমাদের প্রচার করতে দিচ্ছেন না কেন?” তিক্ত কণ্ঠে তাঁর সংযোজন, “আসলে ওঁর একটা ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী আছে। সেটার জোরেই উনি গুসকরার ফুলনদেবী সেজেছেন। নইলে দেখিয়ে দিতাম।”
শুনে ঠোঁটের কোণে হাসেন মল্লিকা, “আমার কি ও সব লাগে? মানুষ আমায় এমনিই ভালবাসে।”

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.