বেলুন টপ চোখে না ধরলে রয়েছে চান্দেরি
ড়াই শুধু মণ্ডপে নয়, এখানেও।
আধুনিকতার সঙ্গে সাবেকিয়ানা, বিদেশি ব্র্যন্ডের সঙ্গে দেশি নক্সা, ঐতিহ্যের জমজমাট লড়াই।
আর তাতেই জমে উঠেছে শিল্পাঞ্চলের ‘পুজো শপিং’। কিন্তু পুজোর বাজার কী আর যে সে ব্যাপার, পনেরোটা শাড়ি দেখে, তার মধ্যে তিনটে কিনে বাড়ি এনে মনে হয়, আগেরটাই বোধহয় বেশি ভাল ছিল। তার উপর চান্দেরি থেকে মটকা, ঘিচা থেকে জারদৌসি, তসর, কোষা, ইক্কত, মঙ্গলগিরি, ঢাকাই বৈচিত্র্যের শেষ নেই। ফলে বারো হাতের গোলকধাঁধায় আটকে পড়েছে অষ্টাদশী থেকে আটষট্টি সব্বাই।
দুর্গাপুরের চণ্ডীদাস বাজারের ব্যবসায়ী বিনয় পালের মতে, পুরনো দিনের শাড়িই এ বার হিট। পুজোর সকালের জন্য হ্যান্ডলুমের শাড়ি বা ঘিচা বা গাদোয়াল পড়া যেতে পারে। রয়েছে ধনেখালি বা ব্লক প্রিন্টের মলমলও। আর বাঙালির তাঁত তো রয়েছেই। অষ্টমীর সকালের জন্য আবার চওড়া লাল পাড়ের প্রিন্টেড সিল্কের সঙ্গে সোনা বা রুপোর ভারি গয়নার জুটি অসাধারণ, বললেন দুর্গাপুরের ফ্যাশন ডিজাইনার অপালা বন্দ্যোপাধ্যায়। শহরের বি-জোনের একটি বুটিকের মালিক তপতী বসাক আবার দু’ধরণের কাপড়ের মিশেলে তৈরি শাড়ি, যেমন, জর্জেট ও ব্রকেডের মিশেল, বা ব্রকেড ও তাঁতের মিশেলের শাড়ির কথা বললেন। তাঁর মতে, এই ধরণের শাড়িতে মণ্ডপের ভিড়েও নজর টানবেন আপনি।

দুর্গাপুরের একটি শপিং মলে পুজোর কেনাকাটা। —নিজস্ব চিত্র।
আসানসোলের বাজারেও ভিড় থেকে বোঝার উপায় নেই রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প সংস্থাগুলোতে বোনাস এখনও হয়নি। আসানসোল, বার্নপুর, বরাকরের বিভিন্ন দোকানে মহকুমার লোক তো বটেই, ভিড় জমিয়েছেন ঝাড়খণ্ড থেকে আসা মানুষজনও। এখানে বিভিন্ন ধরণের সিল্কের চাহিদা বেশি। শিল্পাঞ্চলের দুই অভিজাত শাড়ি ব্যবসায়ী সোমনাথ ঘাঁটি ও ভক্ত দত্ত জানালেন, এ বছর সিল্কে পাটলি পল্লু, ডিজাইনার চান্দেরি নেট, ওপারা সিল্ক দারুণ চলছে। কারণ এ ধরণের শাড়ি দেখতে জমকালো তো বটেই, তার সঙ্গে ওজনেও হালকা। এছাড়া মটকা, কাঁথা স্টিচ, ঢাকাই জামদানি বা তাঁতের একটা বাজার তো থাকেই। এর সঙ্গেই রাজস্থানি বাঁধনি সিল্ক বা যোধপুরি সিল্কের চাহিদাও রয়েছে কমবয়েসীদের মধ্যে। এই ধরণের শাড়ির সঙ্গে অফ শোল্ডার বা পোলকা ডটের থ্রি কোয়ার্টার ব্লাউজ বেশ মানানসই বলেও জানালেন তাঁরা। সদ্য চাকরি পাওয়া তুলিকা বিশ্বাস তো শাড়ি কিনতে এসে রীতিমতো দিশেহারা। তিনি জানান, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় পাশ্চাত্য পোশাক ছাড়া কিছুই প্রায় পড়তেন না। কিন্তু এ বার মায়ের চাপে শাড়ির বাজারে এসে অবাক হয়ে গিয়েছেন। প্রথমেই চোখ আটকেছে হলুদ-সাদা ঢাকাই জামদানিতে। তুলিকার মতো হাল অনেকেরই।
এ তো গেল শাড়ি-কাহন। তবে শাড়ি ছাড়াও সালোয়ার, কুর্তি, কলিদার, জিনস্, ক্যাপ্রি, স্কার্ট আর নানা ডিজাইনের টপের চাহিদা কম নয়। সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কলকাতায় পড়তে যাওয়া আসানসোলের দিশা সাহার যেমন শুধু সালোয়ার-কামিজের মন ভরছে না। সাবেক পোশাকের পাশাপাশি আধুনিক জিনস্ কুর্তিও তার চাই। আসানসোল, বার্নপুর, দুর্গাপুরের সবক’টি শপিং মলেই দেখা গেল পাশ্চাত্য পোশাকের বিপুল সম্ভার। আসানসোল বাজারের একটি অভিজাত বিপণী শৃঙ্খলের কর্ণধার সুনীল মেহারিয়া বলেন, “বাজার ভালই জমেছে। পাশ্চাত্য পোশাক আর এদেশীয় ঘরাণার পোশাক দুইয়ের বিক্রিই ভাল।” দুর্গাপুর বাজারেও দেখা গেল, জিনসে্র প্রচুর বৈচিত্র্য। টেক্সচার্ড, ফেডেড, স্ট্রেট ফিট, ন্যারো ফিট, ফিশারম্যান স্টাইল সবই রয়েছে। তার সঙ্গে কুর্তি, টপ, টি-শার্ট তো ভুরিভুরি। ব্যবসায়ীরা জানালেন, নুডল স্ট্র্যাপ বা স্লিভলেস জাম্প স্যুট এবং বেলুন টপের চাহিদা এ বার ভীষণ। আর রঙের মধ্যে সি গ্রিন, হলুদ, কমলা, গোলাপি বা ফ্লুরোসেন্ট রঙই এ বার ‘ফ্যাশানে ইন’ বলে জানালেন এক ঝাঁক তরুণী। আর সাধারণ সালোয়ার-কামিজের থেকে কলিদার বা আনারকলির চাহিদা এ বছর বেশি। অনেক ঘের আর লম্বা ঝুলের কলিদারে সুতোর কাজ, নেটের কাজ বা জরি-চুমকির কাজ সবই ভাল চলছে। অনেকে আবার ফুলহাতা বা ঘটিহাতা আনারকলিও চাইছেন। এছাড়া রঙবেরঙের লেগিংস আর তার সঙ্গে প্রিন্টেড বা স্টিচ করা কুর্তির চাহিদা তো সারা বছরের মতো পুজোর সময়েও রয়েছে।
শুধু তরুণীরা নন, পুজোয় নিজেকে নতুন ভাবে খুঁজে পেতে পাশ্চাত্য পোশাকে এক দিন সাজতে পারেন মাঝবয়সীরাও। দুর্গাপুরের এক প্রবীণ ব্যবসায়ীর পরামর্শ, অষ্টমীর সকালে এ বার লাল পাড় শাড়ি আর সিঁদুরের টিপ ছেড়ে গাঢ় সবুজ বা লাল রঙের লম্বা টপের সঙ্গে ঘিয়ে ট্রাউজার পরে ফেলুন। বরের সঙ্গে প্রথম পুজোর খুনসুটি আবারও তাজা হয়ে উঠবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.