দলকে চাঙ্গা করার আন্দোলনের প্রস্তাব নিয়েই বিতর্ক বাঁধল কংগ্রেসে।
বৈদ্যুতিক চুল্লি ও স্যুয়ারেজ প্ল্যাট তৈরিতে প্রায় সত্তর কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের(এসজেডিএ) বিরুদ্ধে। ওই দুর্নীতির বিরুদ্ধেই আন্দোলনের প্রস্তাব এসেছিল রবিবার কংগ্রেসের কর্মসমিতির বৈঠকে। সেখানেই বিতর্কের সূত্রপাত।
কারণ, ওই দুর্নীতিতে যেমন শাসক দলের বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যের নাম রয়েছে, তেমনই কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকারের নামও জড়িয়েছে। শঙ্করবাবুকে জেরাও করেছে পুলিশ। কিন্তু তৃণমূল সরকারের গত আড়াই বছরের শাসনে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কংগ্রেস এখনও তেমন সরব হয়নি। দলীয় বিধায়কের নাম জড়ানোর বিড়ম্বনায় কংগ্রেস এ ব্যাপারে আন্দোলনমুখী হতে পারেনি বলে বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেক সদস্য।
রাজ্য সরকারের এই দুর্নীতি নিয়ে অবিলম্বে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়িতে কংগ্রেসের আন্দোলনে নামা প্রয়োজন বলে প্রস্তাব দেন দলের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী। তাঁদের যুক্তি, একের পর এক দুর্নীতি করে কেন্দ্র সরকার মানুষের টাকা লুঠ করছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করছেন। সেই দুর্নীতি-অস্ত্রেই উত্তরবঙ্গে কংগ্রেস আন্দোলনে নামলে দলীয় কর্মীরা উদ্বুদ্ধ হবেন। এই আন্দোলন প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের প্রতিক্রিয়া, “আন্দোলন করার অধিকার সকলের রয়েছে। কংগ্রেস করতেই পারে। তবে বাম আমলে তো অনেক দুর্নীতি হয়েছে। তা নিয়ে কংগ্রেস আন্দোলন করেনি কেন?” এমনকী, শিলিগুড়ির কংগ্রেস নেতা উদয় চক্রবর্তীর খুনের পরেও কেন প্রদেশ কংগ্রেস আন্দোলন করেনি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
এসজেডিএ থেকে শঙ্করবাবু কেন এখনও পদত্যাগ করেননি, তা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন শিলিগুড়ির নেতা উদয় দুবে। তৃণমূলের সঙ্গে জোট ছেড়ে কংগ্রেস বেরিয়ে আসার পরেও তৃণমূল চালিত ওই পর্ষদে শঙ্করবাবুর থাকাটা দলের পক্ষে অসম্মানজনক বলে দাবি করেন উদয়বাবু। শঙ্করবাবু পদ না ছাড়লে কংগ্রেসের আন্দোলন হাস্যকর হবে বলেও বৈঠকে মন্তব্য করেন অনেকে। কেন তিনি পদ ছাড়ছেন না, জানতে চাইলে শঙ্করবাবু ফোনে বলেন, “সময় হলে যা বলার বলব।”
প্রসঙ্গত, এই দুর্নীতি-কাণ্ডে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ির হাসমি চকে স্থানীয় কংগ্রেস একটি হোর্ডিং লাগায়। হোর্ডিংটি লাগানো হয় শঙ্করবাবুর কার্যালয়ের কাছেই। সেই রাতে হোর্ডিংটি ভেঙে দেওয়া হয় বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সুজয় ঘটক। হোর্ডিং ভাঙচুরে শঙ্করবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও তিনি অবশ্য এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলেই দাবি করেন।
এ দিনের বৈঠকে প্রদেশ নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলেন দলের বর্ষীয়ান বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়। গত শুক্রবার তৃণমূলের তিন সাংসদের দলবিরোধী বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রদীপবাবু এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, যাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে গিয়েছেন, তাঁদের সকলের জন্যই কংগ্রেসে ফেরার সুযোগ রয়েছে। প্রদীপবাবুর এই বক্তব্যের সূত্র ধরে সমরবাবু এ দিন জানান, কংগ্রেসত্যাগীদের ফের দলে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তাঁর আপত্তি রয়েছে। এর পরে ১৯৮৪ সালে কংগ্রেসের শতবার্ষিকী অধিবেশনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর বক্তব্য উল্লেখ করে এক সাধারণ সম্পাদক তখন সমরবাবুকে বোঝান, রাজীবও ওই অধিবেশনে বলেছিলেন, কংগ্রেসত্যাগী কোনও সদস্য ফের দলে ফিরতে চাইলে তাঁর জন্য দলের দরজা খোলা।
|