দিন কয়েক আগেই বলেছিলেন পুজোর পরেই তৃণমূলের দাওয়াইয়ের ব্যবস্থা করবেন। রবিবার হাসনাবাদে ফের তারই পুনরাবৃত্তি করলেন সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেব।
দিন কয়েক আগে হাসনাবাদের তকিপুরে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা সিপিএম নেতা জাহাঙ্গির আলম। অভিযোগের আঙুল ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ দিন দলীয় নেতার স্মরণে এবং তাঁকে খুনের প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে গৌতমবাবু বলেন, “পুজো ও ঈদের পর আন্দোরলনের মধ্যে দিয়ে জাহাঙ্গির খুনের ফোঁটা ফোঁটা রক্তের বদলা নেব।” মমতার ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ উক্তির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “উনি কতটা রাফ অ্যান্ড টাফ তা আমরা বুঝিয়ে দেব।’’ সভায় ছিলেন বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তী, শ্রীদীপ রায়চৌধুরী, মৃণাল চক্রবর্তী, অজয় চক্রবর্তী, আব্দুর সাত্তার প্রমুখ।
এ দিন মাঠে ছিল উপচে পড়া ভিড়। তা দেখে পঞ্চায়েত ভোটের প্রসঙ্গ তুলে গৌতমবাবু বলেন, “যেখানে ভোট হয়েছে, সেখানে বামেরা জয়ী হয়েছে। আর যেখানে তৃণমূল জিতেছে সেখানে ওরা মারামারি করেছে। এ কথা মমতা, মুকুলরাও জানেন। যে ভাবে লোক কমছে তাতে মাত্র আড়াই বছরেই মমতা বুঝেছেন ৩৫ বছর রাজ্য চালানো কতটা শক্ত।” তৃণমূলকে এক হাত নেওয়ার পাশাপাশি এ দিন তাঁর মুখে ছিল আত্মসমালোচনাও। |
জেলা সম্পাদকের কথায়, “আমাদের সরকারের শেষের দিকে কিছু লোক কিছু জায়গায় গণ্ডগোল করেছিল। তাদের বার বার বলা হয়েছিল এ সব করে মানুষের মন জয় করা যায় না। এমন করবেন না, হেরে যাবেন।” একই সঙ্গে জনতার উদ্দেশে বলেন, “মনে রাখবেন কোথাও হেরে গিয়ে কিন্তু আমরা মাথা গরম করিনি।” পুলিশের ভূমিকার সমালোচনাও করেন গৌতমবাবু। তাঁর কথায়, “পুলিশ আমাদের কথা শুনছে না। মিথ্যা অভিযোগে কমরেডদের জেলে ভরছে। কিছু পুলিশ অফিসার আবার সরাসরি তৃণমূল হয়ে গিয়েছেন। খুব শীঘ্রই ওঁরা বুঝবেন।”
তিনি আরও জানান, মমতা এক লাখ চাকরি দিয়েছেন বলে রোজ মিথ্যা কথা বলছেন। ওদের দলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা খুন-জখমে মেতেছে। জাহাঙ্গির কংগ্রেস, তৃণমূল দেখত না। সকলের জন্য কাজ করত। সে জন্যই তৃণমূলীরা তাকে নৃশংস ভাবে খুন করল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশ মন্ত্রী হয়েও মমতা এক বারের জন্যও বললেন না ‘আমি দুঃখিত’।
রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্যের প্রসঙ্গ তুলে এ দিন সভায় তৃণমূলের কঠোর সমালোচনা করেন বামফ্রন্টের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। পরীক্ষায় টোকাটুকি করে যে ভাবে অরাজকতা তৈরি করা হচ্ছে তাতে রাজ্যে শিক্ষার উপরে কালো মেঘ ঘনিয়েছে দাবি করে বিমানবাবু বলেন, “ওরা গরিব মানুষের জন্য কাজ করে না। কেবল সাম্প্রদায়িক লড়াই বাধানোর তালে আছে। আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের খুন করছে। মারাদাঙ্গা করে পুরভোট প্রহসনে পরিণত করেছে। এ ভাবে চলতে পারে না। আপনারা জাগুন। এ বার পরিবর্তনের লড়াই শুরু হবে।”
সুজনবাবু বলেন, “ওরা ভয় পেয়েছিল বলেই জাহাঙ্গিরের মরদেহ কলকাতায় রাজভবনে নিয়ে যেতে দেয়নি। তাই এলাকার হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে সরকারের গালে থাপ্পড় মেরে বুঝিয়ে দিয়েছে। ভয় দেখিয়ে, অপহরণ করে, মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করেও আটকাতে না পেরে জাহাঙ্গিরকে খুন করল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। এই হচ্ছে ওদের রাজনীতি।”
এ দিন সভামঞ্চে ছিলেন জাহাঙ্গিরের মা সাকিলা বিবি, স্ত্রী রিনা মণ্ডল ও দুই ছেলে সেলিম ও ওয়াসিম। দলের পক্ষ থেকে জাহাঙ্গিরের স্ত্রীর হাতে ২ লক্ষাধিক টাকার অর্থ সাহায্য তুলে দেওয়া হয়।
|