ভোর রাতে ঘরে ঢুকে মা-ছেলেকে গুলি করে খুন করল দুষ্কৃতীরা। সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে জগদ্দল থানার কাঁকিনাড়ায়। গুলিবিদ্ধ হন মহিলার আরও এক ছেলে।
পুলিশ জানায়, তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে কাঁকিনাড়া বাজারের ১১ নম্বর গলিতে একটি ছোট্ট ঘরে থাকতেন সবিতা সিংহ (৪৩)। ভোর ৪টে নাগাদ দরজায় আওয়াজ পেয়ে তিনি ঘুম থেকে ওঠেন। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, চার জন সশস্ত্র দুষ্কৃতী ঘরে ঢুকে জানতে চায়, তাঁর স্বামী কোথায়। উত্তর দেওয়ার আগেই গুলি চালিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। বুকে গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই মহিলা। তিন ছেলেমেয়ে লুকিয়ে পড়ার চেষ্টা করেছিলেন ঘরের আনাচে-কানাচে। দুষ্কৃতীরা এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে। বিশাল সিংহের (১৯) মাথায় গুলি লাগে। পরে আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান তিনি। ঘাড়ে গুলি লেগেছে সবিতাদেবীর বছর তেইশের আর এক ছেলে সানির। ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। দু’টি দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে।
কিন্তু কেন এই হামলা? |
পুলিশ এখনও তার উত্তর খুঁজছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে উঠে এসেছে বিশেষ কিছু তথ্য।
বাড়িওয়ালা রবিশঙ্কর চৌবে জানান, প্রায় কুড়ি বছর ধরে সবিতাদেবীর পরিবার এখানে থাকে। তাঁর স্বামী দয়াশঙ্কর সিংহ বছর দু’য়েক আগে মারা যান। অন্য এক ব্যক্তিকে কিছু দিন আগে বিয়ে করেন সবিতা। ওই ব্যক্তি প্রায়ই বাড়িতে যাতায়াত করতেন। পুলিশ জানায়, মহিলার ভাই চুম্বল সিংহও প্রায়ই আসত বাড়িতে। ওই যুবক খুন, ডাকাতি-সহ নানা অপরাধে জড়িত। পুলিশ খতিয়ে দেখছে, চুম্বলের বিরোধী গোষ্ঠী তাকে না পেয়ে বাকিদের উপরে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে কিনা। আততায়ীরা সবিতার দ্বিতীয় স্বামীকে খুঁজতে এসেছিল কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভাড়াটে খুনিদেরই এই কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে মনে করছে পুলিশ।
ব্যারাকপুরের গোয়েন্দা প্রধান দেবাশিস বেজ বলেন, “পুরো ঘটনাটিই ধোঁয়াশাপূর্ণ। ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে খুন হয়ে থাকলে কারা তা করল, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” ঘটনাস্থলে পুলিশ পিকেট বসেছে।
ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিংহ বলেন, “ঘটনাটি আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত পুলিশের। বারবার এই ধরনের ঘটনা কাঁকিনাড়ায় ঘটছে।”
মাস কয়েক আগে ১১ নম্বর গলিতেই এক বৃদ্ধকে গুলি করে, বোমা মেরে খুন করেছিল দুষ্কৃতীরা। প্রায়ই এলাকায় বোমা-গুলি চলে। ফলে এ দিন ভোরে গুলির শব্দ পেয়েও প্রতিবেশীরা কেউ বেরোননি। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, বাড়িতে ঢোকার রাস্তা সহজে নজর পড়ে না কারও। বস্তির পিছন দিক দিয়ে ঢুকতে হয়। চেনা কেউ না হলে বেরোনো মুশকিল। ছোট্ট ঘরে একটাই চৌকি পাতা। কোনও আসবাবপত্র নেই। দেওয়ালে রক্তের দাগ।
সবিতাদেবী ফল বিক্রি করতেন। বিশাল মিষ্টির কারখানায় কাজ করতেন। সবিতার মেয়ে নন্দিনী জানান, চার জন দুষ্কৃতী ঘরে ঢুকেছিল। বাইরে ছিল আরও চার জন। ঘরে ঢুকেই এক জন মায়ের কাছে জানতে চায়, “তুমহারা আদমি (স্বামী) কাঁহা হ্যায়?” সবিতাদেবী উত্তর দেওয়ার আগেই অবশ্য গুলি চালিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। রাজু বাঁশফোড় নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “পরিবারটি নিরীহ প্রকৃতির। কেন হামলা হল বুঝতে পারছি না।” |