প্রতিবাদের কামদুনিতে এ বার শান্তিরক্ষার ডাক। সৌজন্যে শাসক দলের একাংশ।
কামদুনির কলেজছাত্রীর গণধর্ষণ ও খুনের পরেই গড়ে উঠেছিল স্থানীয় গ্রামবাসী, স্কুলের শিক্ষকদের একাংশের প্রতিবাদী মঞ্চ। মৃতার পরিবারের সঙ্গে একযোগে দুষ্কৃতীদের চরম সাজার দাবিতে তারা সরব হয়। আমির খানের টিভি শো ‘সত্যমেব জয়তে’-র টিমেরও নজরে আসে কামদুনির প্রতিবাদ। সেই মঞ্চই অযথা রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ তুলে এ বার পাল্টা কমিটি গড়ার ডাক উঠল।
গত ৭ জুন কামদুনির ঘটনা ঘটার পরেই শাসক দলের তরফে জনরোষ সামাল দিতে মাঠে নেমেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। শান্তিরক্ষা কমিটির নেপথ্যেও তিনিই রয়েছেন। নিজে সরাসরি কমিটির সদস্য না-হলেও জ্যোতিপ্রিয়বাবু এ দিন বলেন, “কামদুনির প্রতিবাদী মঞ্চ সিপিএম ও কংগ্রেসের মদতে তৈরি হয়েছিল। তা এখন ব্যবসায়িক সংগঠন হয়ে উঠেছে।” খাদ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী মৃতা ছাত্রীর খুনি ও ধর্ষকদের সাজা দিতে ইতিবাচক ভূমিকা নিলেও কামদুনির প্রতিবাদী মঞ্চ অযথা রাজনীতি করছে। তাঁর কথায়, “এ সব অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধেই পাল্টা কমিটি গড়া হল।”
তবে অনেকেই বলছেন, নতুন এই শান্তিরক্ষা কমিটির সঙ্গেই প্রত্যক্ষ রাজনীতির যোগাযোগ দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। ২১ জন সদস্যের কমিটিতে রয়েছেন বারাসত দু’নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় কীর্তিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। ৬ অক্টোবর, কমিটির প্রথম অনুষ্ঠান। সে-দিন কামদুনিতে রক্তদান-শিবির, স্বাস্থ্য-শিবির, বস্ত্রদানের মতো একগুচ্ছ কর্মসূচি পালন করা হবে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, জ্যোতিপ্রিয়বাবু এবং উত্তর ২৪ পরগনায় তৃণমূলের জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষও সে-দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। চেষ্টা করা হচ্ছে, কামদুনির মৃতা ছাত্রীর পরিবারের কাউকেও যাতে সভায় আনা যায়। মৃতার পরিবারের তরফে এ দিন পরিষ্কার বলা হয়, “আমরা দোষীদের ফাঁসির দাবিতে লড়ছি। কোনও কমিটির ঘোর-প্যাঁচ বোঝার মতো মনের অবস্থা নেই।”
কামদুনির মতোই এক দশক আগে গাইঘাটার সুটিয়াতেও পর পর গণধর্ষণের প্রতিবাদে একটি প্রতিবাদী মঞ্চ গড়ে উঠেছিল। তার পুরোভাগে ছিলেন পরে আততায়ীর গুলিতে নিহত বরুণ বিশ্বাস। সুটিয়ার প্রতিবাদী মঞ্চের সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দার মনে করিয়ে দিয়েছেন, “ওঁরা মঞ্চ গড়ার পরে সুটিয়াতেও পাল্টা শান্তিরক্ষা কমিটি গড়ার চেষ্টা হয়েছিল। তাদের সভায় স্থানীয় দুষ্কৃতীরাও সামিল হয়।” এই জ্যোতিপ্রিয়বাবুই তখন সেই কমিটির পিছনে ছিলেন বলে ননীগোপালবাবুদের অভিযোগ।
|