অপরাধের তদন্তের নিরিখে মহারাষ্ট্রের তুলনায় অনেক পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ। কামদুনি ধর্ষণ কাণ্ডের তিন মাস পূর্তিতে ওই ঘটনার সঙ্গে মুম্বইয়ে চিত্রসাংবাদিককে ধর্ষণের তদন্তের তুলনা করে শনিবার এমনই মত দিলেন এ রাজ্যের বিশিষ্টজনেদের একাংশ। পাশাপাশি, কলকাতা হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে বিশেষ কোনও তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে কামদুনির ঘটনার তদন্ত করানোর আর্জি জানাল নির্যাতিতার পরিবার। এ দিন সুপ্রিম কোর্টে ওই আবেদন জমা দিয়েছেন নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী বিজন ঘোষ।
কলকাতা প্রেস ক্লাবে এ দিন অপর্ণা সেন, কৌশিক সেন, সুমন মুখোপাধ্যায়, সমীর আইচ, তরুণ সান্যাল, সুনন্দ সান্যাল, নবারুণ ভট্টাচার্য, মীরাতুন নাহার, শাশ্বতী ঘোষ, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, অসীম গিরি প্রমুখের স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। যার নির্যাস, ‘নিগৃহীতার সুবিচারের জন্য মুম্বই প্রশাসনের পদক্ষেপগুলি আমাদের আশান্বিত করেছে, এ রাজ্যের উদ্যোগে প্রয়োজনীয় তৎপরতার অভাবে আমরা আশঙ্কিত’।
ওই বিশিষ্টজনেদের বক্তব্য, মহারাষ্ট্র সরকার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দক্ষ সরকারি আইনজীবীকে মুম্বইয়ের ধর্ষণ মামলার দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত-সহ কয়েকটি জরুরি পদক্ষেপ করেছে। পক্ষান্তরে, কামদুনির ক্ষেত্রে এফআইআর-এ অসম্পূর্ণতা, ফরেন্সিক রিপোর্টের প্রতিলিপি ধর্ষিতার পরিবার বা আইনজীবীকে না দেওয়া, মামলা বারাসত আদালত থেকে কলকাতা জেলা ও দায়রা আদালতে (বিচার ভবন) সরিয়ে আনায় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। আইপিএস অফিসার দময়ন্তী সেনকে কামদুনির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিও তুলেছেন অপর্ণারা। |
তদন্তে খুশি নয় কামদুনির নির্যাতিতার পরিবারও। তাদের দাবি, ওই ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় আরও তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। গত বুধবার কামদুনি মামলার বিচার কলকাতা জেলা ও দায়রা আদালত থেকে সরিয়ে ফের বারাসত আদালতে পাঠানোর আবেদন জানানো হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবমের এজলাসে বিজনবাবু আর্জি জানান, ওই আবেদনের দ্রুত শুনানি হোক। কারণ, বিচার ভবনের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক স্থির করে দিয়েছেন, আগামী মঙ্গলবার মামলার চার্জ গঠনের দিন। প্রধান বিচারপতি শুক্রবারই জানান, মামলাটি ফের বারাসত আদালতে পাঠানোর আর্জির শুনানি শুরু হবে আগামী কাল, সোমবার।
এ দিন কামদুনির স্কুল মাঠে প্রথম প্রকাশ্য সভা করে ‘কামদুনি প্রতিবাদী মঞ্চ’। উদ্দেশ্য, রাজ্যের যে কোনও জায়গায় নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই করা। এ দিন সুটিয়া প্রতিবাদী মঞ্চ, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি, এপিডিআর, সিপিডিআর-সহ বহু সংগঠন ওই কর্মসূচিতে যোগ দেয়। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট-এ খবর পেয়ে জড়ো হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক এবং পড়ুয়া। ছিলেন প্রতিবাদী যুবক বরুণ বিশ্বাসের দিদি প্রমীলা রায়, সেখানকার মঞ্চের সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দারও। পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অমিতাভ সেনগুপ্ত বলেন, “অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এসেছি।” জমায়েতের সিংহভাগই ছিলেন মহিলা। বারাসত, গাইঘাটা, সুটিয়া, মধ্যমগ্রাম, রাজারহাট প্রভৃতি অঞ্চল থেকে তাঁরা আসেন ম্যাটাডোরে করে।
কামদুনি-আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী মৌসুমি কয়াল বলেন, “আমাদের প্রতিবাদ আন্দোলনে রাজনীতি ঢুকতে দেব না।” বক্তৃতা করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি। মৌসুমির সহযোদ্ধা টুম্পা কয়ালের মা জানান, অসুস্থতার জন্য টুম্পা আসতে পারেননি। সভা শেষে ধর্ষণের ঘটনাস্থলের পাশ দিয়ে মিছিল হয়। কামদুনি মোড়ে ধর্ষিতার স্মৃতিসৌধে মালা দিয়ে মোমবাতি জ্বালানো হয়। এ দিনের কর্মসূচি ঘিরে পুলিশের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। শাসন থানার পুলিশ, র্যাফ ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা ছিলেন। কামদুনিতে ঢোকার মুখে পুলিশ গাড়ি থামিয়ে গাড়ির নম্বর লিখে নেয়। আরোহীদের জিজ্ঞাসাবাদও করে।
|