কামদুনি-মামলা স্থানান্তরের যৌক্তিকতা যাচাই করতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা শুরু হচ্ছে আগামী সপ্তাহের গোড়াতেই।
উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনিতে ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের বিচারপর্ব বারাসত কোর্ট থেকে সরিয়ে কলকাতার আদালতে আনার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট, যার বিরুদ্ধে নিহত ছাত্রীর পরিবার শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। মামলাটিকে বারাসত আদালতে ফিরিয়ে আনতে ছাত্রীটির দাদা ক’দিন আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন। মূল মামলায় সরকারি কৌঁসুলি বদলেরও আবেদন তাঁদের তরফে পেশ করা হয় শীর্ষ আদালতে। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবম জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর তাঁদের আবেদনের শুনানি শুরু হবে।
এ দিন সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির এজলাসে বিষয়টি উঠলে নিহত ছাত্রীর পরিবারের কৌঁসুলি বিজয় ঘোষ বলেন, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অসীম রায় নির্দেশ দিয়েছেন, কামদুনির ধর্ষণ-খুন মামলার শুনানি বারাসত ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের পরিবর্তে কলকাতার জেলা ও দায়রা আদালতে (বিচার ভবন) করতে হবে। সেই মতো আগামী ১০ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার বিচার ভবনে কামদুনি-মামলার চার্জ গঠনের দিন স্থির হয়েছে।
এবং এই পরিস্থিতিতে শীর্ষ আদালতের কাছে নিহত ছাত্রীর পরিবারের আর্জি, শুনানি বারাসত কোর্টেই চলুক। এর যুক্তি হিসেবে বিজয়বাবু বলেন, কামদুনির অনেক বাসিন্দা মামলাটিতে সাক্ষী। তাঁরা গরিব, প্রতি বার আদালতে হাজিরা দিতে কলকাতা যাতায়াতের আর্থিক সামর্থ তাঁদের নেই। বস্তুত কামদুনি-কলকাতা যাতায়াত ও দুপুরের খাবারের খরচ জোগাড় করাটা অধিকাংশ সাক্ষীর পক্ষে কঠিন হবে বলে সওয়ালেদাবি করেন বিজয়বাবু। “ফলে অনেকেই সাক্ষ্যদান থেকে পিছিয়ে আসতে পারেন।” আশঙ্কা তাঁর। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টকে এই আবেদনের শুনানি দ্রুত শুরু করার আর্জি জানিয়ে তাঁর বক্তব্য, “মঙ্গলবার বিচার ভবনে চার্জগঠন হওয়ার কথা। সুপ্রিম কোটের্র্ তার আগে বিষয়টির শুনানি না-হলে আমাদের আর্জি অর্থহীন হয়ে যাবে।”
নিহত ছাত্রীর পরিবারের তরফে এ দিন সুপ্রিম কোর্টে পেশ হয়েছে আরও দু’টো আবেদন। হত্যা-ধর্ষণের মূল মামলার শুনানি যাতে প্রতি দিন হয়, শীর্ষ আদালত তা নিশ্চিত করুক।
আর ওই মামলায় সরকারের পক্ষে যাঁকে বিশেষ আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে, তাঁকে সরিয়ে ফৌজদারি মামলায় দক্ষতাসম্পন্ন কাউকে আনা হোক। সওয়ালে বাদীপক্ষের অভিযোগ: রাজ্য সরকার নিযুক্ত ওই বিশেষ সরকারি কৌঁসুলির নাম সরকারি প্যানেলে তো নেই-ই, উপরন্তু ফৌজদারি মামলা লড়ার অভিজ্ঞতাও তাঁর কম। মুম্বই গণধর্ষণ মামলায় মহারাষ্ট্র সরকার যে উজ্জ্বল নিকমের মতো আইনজীবীকে সরকারি কৌঁসুলি হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে, এ প্রসঙ্গে তারও উল্লেখ করেন বাদীপক্ষের কৌঁসুলি।
এর পরেই প্রধান বিচারপতি সদাশিবম জানিয়ে দেন, আগামী সোমবার থেকে তিনি ওঁদের আবেদন শুনবেন। যার প্রেক্ষিতে নিহত ছাত্রীর দাদার মন্তব্য, “দেশের সর্বোচ্চ আদালতের উপরে আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে।” পড়শি সুকান্ত কয়াল বলেন, “কলকাতায় মামলা চললে গ্রামের লোকের দুর্ভোগ হবে। বেরোতে হবে সাতসকালে, দুপুরের খাবার কিনে খেতে হবে। যাতায়াতের খরচা তো আছেই।”
সুপ্রিম কোর্ট ব্যাপারটা মাথায় রাখবে বলে আশায় আছেন ওঁরা।
|