তাদের পাড়ার কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ ও খুনের মামলা বারাসত থেকে কলকাতার আদালতে সরানোর সময়েই আপত্তি তুলেছিল কামদুনি। এ বার সেই মামলা কলকাতার কোর্ট থেকে বারাসত আদালতেই ফেরত পাঠানোর আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল ধর্ষিত ও নিহত ছাত্রীর পরিবার।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অসীম রায়ের নির্দেশে কলকাতার জেলা ও দায়রা আদালত (বিচার ভবন)-এ ওই মামলার বিচার শুরু হয়েছে। কামদুনির বাসিন্দাদের বক্তব্য, মামলাটি বারাসত আদালত থেকে কলকাতায় সরিয়ে নেওয়ায় সাক্ষীরা অনেকেই সমস্যায় পড়েছেন। তাঁদের পক্ষে মহানগরীর আদালতে নিয়মিত হাজিরা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাতে বিচার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমন আশঙ্কা করেই মামলাটি ফের বারাসতের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে পাঠানোর দাবি তুলেছে কামদুনি।
নিহত ছাত্রীর পরিবারের হয়ে সর্বোচ্চ আদালতে লড়াই করবেন আইনজীবী বিজন ঘোষ। বুধবার তিনি বলেন, “কলকাতা হাইকোর্ট কামদুনি মামলা বারাসত থেকে কলকাতার জেলা ও দায়রা আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। আমরা হাইকোর্টের ওই নির্দেশ খারিজ করার আবেদন জানিয়ে শীর্ষ আদালতে মামলা করেছি। আমরা চাই, মামলাটির বিচার হোক বারাসত আদালতেই।”
৭ জুন কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে কামদুনির ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে হত্যা করা এক দল দুষ্কৃতী। সেই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয় সারা রাজ্য। দোষীদের চরম শাস্তির দাবিতে পথে নামেন কামদুনির মানুষ। আন্দোলন চালাতে গিয়ে নানা ধরনের শাসানির মুখে পড়তে হয় তাঁদের। লড়াই চালিয়ে গেলেও আতঙ্ক এখনও তাঁদের সঙ্গী। কামদুনির বাসিন্দাদের বক্তব্য ছিল, বারাসত কাছে বলেই হুমকি ও আতঙ্ক সত্ত্বেও তাঁদের পক্ষে সেখানে হাজির হওয়া সহজ। কলকাতার আদালতে মামলা নিয়ে যাওয়া হলে দূরত্বের কারণেই শুনানির দিনগুলিতে তাঁদের পক্ষে সেখানে হাজিরা দেওয়া অসুবিধাজনক।
পাল্টা একটি যুক্তিও ছিল। কামদুনি কাণ্ডে বারাসত আদালতের কোনও আইনজীবী অভিযুক্তদের পক্ষে দাঁড়াতে চাননি। অভিযুক্তেরা আদালতে হাজির হলেই তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন বিক্ষুব্ধ মানুষজন। তার জেরে অভিযুক্তদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাই অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি ও সঞ্জীব দাঁ হাইকোর্টে আবেদন জানান, মামলাটি বিচার ভবনে সরিয়ে আনা হোক। তার পরেই বিচারপতি অসীম রায়ের নির্দেশে কামদুনি মামলা বিচার ভবনে সরিয়ে আনা হয়। ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত আট জনের বিরুদ্ধে ১০ সেপ্টেম্বর চার্জ গঠনের নির্দেশও দিয়েছেন বিচার ভবনের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (বেঞ্চ-২) সঞ্চিতা সরকার।
তা হলে এত দিন পরে বারাসত আদালতে ফের ওই মামলা পাঠানোর আবেদন জানানো হল কেন?
ছাত্রীর পরিবারের আইনজীবীর দাবি, এই মামলায় কামদুনির অনেক বাসিন্দাই সাক্ষী দেবেন। তাঁরা গরিব। কলকাতার বিচার ভবনে কত বার সাক্ষ্য দিতে আসতে হবে, তা তাঁরা জানেন না। আদালতে যাতায়াতের জন্য গাড়ি-ভাড়া জোগাড়ের ক্ষমতাও তাঁদের অনেকের নেই। তা ছাড়া অনেককেই হাতে সময় নিয়ে আসতে হচ্ছে। কলকাতায় খাবার কেনার টাকাও জোটাতে পারছেন না তাঁরা।
কী বলছে ছাত্রীর পরিবার?
ধর্ষিত ও নিহত ছাত্রীর দাদা বলেন, “ঘটনার পরে তিন মাস হতে চলল। এখনও মূল মামলার বিচারই শুরু হল না। আমরা আর ভরসা পাচ্ছি না। আমরা চাই, মামলার শুনানি হোক বারাসত আদালতেই।” |