পড়ুয়াদের কাছে সুভাষবাবু যেন এক ফিনিক্স পাখি
সাম্যবাদী সমাজের স্বপ্ন চোখে নিয়ে সত্তরের আন্দোলনে জড়িয়েছিলেন। তিন বছরের জেল যাপনের দিনগুলিতে হঠাৎই মনে হয়েছিল, বিজ্ঞানচর্চাটা সবার জন্য, তাঁর কাঙ্খিত সমাজের মতো। তাই জেল থেকে বেরিয়ে শুরু করে দিলেন বিজ্ঞানচর্চা। এখন সত্তর ছুঁই ছুঁই বয়সেও সেই স্বপ্নের জোরেই শিক্ষকতা চালিয়ে যাচ্ছেন বসিরহাট হাইস্কুলের পদার্থবিদ্যার প্রাক্তন শিক্ষক সুভাষ কুণ্ডু।
বসিরহাট ত্রিমোহনী কলেজ থেকে খানিক এগিয়ে কলেজের দিকে যেতে টাকি রাস্তার বাঁ দিকে বাড়ি সুভাষবাবুর। ১৯৭১ থেকে ’৭৪ সাল অবধি তাঁর জায়গা হয়েছিল দমদম সেন্ট্রাল জেলে। সেখান থেকে বেরনোর পর থেকে বিজ্ঞানই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। অল্প দিনেই ঘর হয়ে ওঠে বিজ্ঞান বইয়ের লাইব্রেরি। বাড়িতে ছাত্রছাত্রীদের আনাগোনা শুরু হয়। বাড়িতেই একটা গবেষণাগার তৈরির চেষ্টা শুরু করেন তিনি। তা দেখে এগিয়ে আসেন ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকেরাও। ১৯৮৮ সালে তাঁর উদ্যোগে তৈরি হয় ‘ইনস্টিটিউট অফ ফিজিক্স’। সুভাষবাবু আরও উৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়েন কাজে।
ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিজের গবেষণাগারে সুভাষবাবু।—নিজস্ব চিত্র।
বিদ্যাসাগর কলেজ, বসিরহাট হাইস্কুল, বসিরহাট কলেজ, বসিরহাট টাউন স্কুল, টাকি কলেজ, হরিমোহন দালাল গার্লস হাইস্কুল থেকে এর পর তাঁর ডাক আসতে থাকে পর্দাথবিজ্ঞান পড়ানোর জন্য। সাড়া দেন তিনি। শুধু তাই নয়, দূর থেকে কোনও ছাত্রী পড়তে আসতে না পারলে নিজেই ছুটে যান তাঁর বাড়িতে।
সুভাষবাবুর বাড়িতে সবসময়েই ছাত্রছাত্রীদের ভিড়। অসমর্থ শরীর এত ধকল নেয় না। কিন্তু থামতে জানেন না তিনি। বিনা পারিশ্রমিকে দিন রাত এক করে পড়িয়ে চলেছেন ছেলে মেয়েগুলোকে। পাছে ওদের অসুবিধা হয়, তাই বিয়ে করার কথাও ভাবেননি কখনও। হাড়োয়া থেকে তাঁর বাড়িতে পড়তে আসেন বিএসসি তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী রুমানাত খান। বেড়াচাঁপায় থাকেন আর এক ছাত্র রাজেশ মণ্ডল। বললেন, “পরিবারের আর্থিক অবস্থা যা তাতে হয়তো কখনও বিজ্ঞান পড়া সম্ভবই হত না। স্যার বিনা বেতনে আমাদের পড়ান। স্যারের গবেষণাগার ব্যবহার করেই এতদূর আসতে পেরেছি।” বসিরহাটের সঞ্চারী চৌধুরী, বেগম পুরের কালামউদ্দিনের কথায়, “ওনার কাছে আমাদের ঋণের শেষ নেই।”
হরিমোহন দালাল গার্লস স্কুলের পর্দাথবিজ্ঞানের শিক্ষিকা চন্দ্রা মিত্র বলেন, “উনি আমাদের কাছে ফিনিক্স পাখির মতো। ওনাকে যদি কেউ সামান্যও অনুসরণ করেন, তবে সমাজের একটা বড় অংশ উপকৃত হবে।”
এক সময়ে বসিরহাটে বিজ্ঞান চর্চা ভাবাই যেত না সুভাষবাবুকে ছাড়া। ‘দিশা’ নামে একটি বিজ্ঞানবিষয়ক পত্রিকা প্রকাশ করেন তিনি। আর তাঁকে নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা বের করে ‘ফিনিক্স’ নামে আর এক পত্রিকা। টাকির পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সুভাষবাবু-সহ কয়েকজন শিক্ষকের অবদানের কথা মাথায় রেখে আমরা পুরসভা থেকে অনগ্রসর পড়ুয়াদের সম্পূর্ণ নিখরচায় পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে স্কুল তৈরির জন্য ২০ লক্ষ টাকা দিয়েছি। ওই স্কুলের জন্য সুভাষবাবুও ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। জানুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু হবে।” ২০০৭ সালে অবসর নিয়েছেন সুভাষবাবু। তবে স্কুলের সঙ্গে যোগ এখনও। স্কুলের গবেষণাগার নতুন করে সাজানোর জন্য অবসরকালীন অর্থের বড় অংশই দিয়ে দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষকে। তাতেও শেষ হয়নি। নিজের বাঁচার সম্বলটুকু থেকেও নিরন্তর সাহায্য করে চলেছেন ছাত্রছাত্রীদের। সে স্কুল গড়ার কাজ হোক বা পড়ুয়াদের ব্যক্তিগত সমস্যা। এ যেন রূপকথার গল্প। বসিরহাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপনকুমার রায় বলেন, “দেশ বিদেশে স্যারের বহু কৃতী ছাত্রছাত্রী ছড়িয়ে আছে। আমরা চাই, সারা জীবনের এই অবদানের জন্য ওঁকে জাতীয় শিক্ষকের সম্মান দেওয়া হোক।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.